নিজস্ব প্রতিবেদক:: টানা ২৫ দিন বন্ধ থাকার পর সিলেট তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে চালু হয়েছে আমদানি। মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরের পর থেকে আসতে শুরু করেছে ওপারে আটকে থাকা পণ্যবাহী ট্রাকগুলো। তামাবিল স্থলবন্দর বন্ধ থাকায় এই ২৫ দিনে কমপক্ষে ১০ কোটি টাকার উপরে রাজস্ব হারিয়েছে সরকার।
সিলেটের একমাত্র স্থলবন্দর তামাবিল। পাথর, চুনাপাথর, কয়লা আমদানিতে সারা বছরই সরব থাকে বন্দরটি। বছরে প্রায় শত কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয় পণ্য আমদানি থেকে। কিন্তু পণ্য পরিমাপে ‘অটোমেশন’ পদ্ধতি চালুর পর গত ৭ জানুয়ারি থেকে এ স্থলবন্দর দিয়ে ব্যবসায়ীরা বন্ধ করে বন্ধ করে দেন আমদানি। তাদের দাবি ছিলো, দুই দেশের স্থলবন্দরে অটোমেশন পদ্ধতি চালু না হলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ওপারে ভারতের ডাউকিতে ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে পণ্য পরিমাপ করে, কিন্তু এ দেশে এনে অটোমেশনে পরিমাপের পর নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে তাদের।
ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্থলবন্দরটি পরিদর্শনে আসেন যুগ্মসচিব ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. জাহাঙ্গীর কবির। তাঁর উপস্থিতিতে মঙ্গলবার রের পর থেকে চালু হয় আমদানি।
জানা গেছে, মো. জাহাঙ্গীর কবির দু-একদিন ‘অটোমেশন’ পদ্ধতিতে পণ্য পরিমাপের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করার পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, গত ৭ জানুয়ারি থেকে হঠাৎ আমদানি বন্ধ হওয়ায় সীমান্তের ওপারে পণ্যবোঝাই হাজার হাজার ট্রাক আটকা পড়ে। এতে সরকার প্রতিদিন প্রায় ৫০ লাখ টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়।
আমদানিকারকরা জানান, তামাবিল স্থলবন্দরে এত দিন ‘ওয়েটব্রিজ’ দিয়ে পণ্য পরিমাপ করা হতো। হঠাৎ অটোমেশন সিস্টেম চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু সীমান্তের ওপারে ভারতের ডাউকি স্থলবন্দরে এখনো অটোমেশন চালু হয়নি। ডাউকি স্থলবন্দরে ফিতা দিয়ে ট্রাক পরিমাপ করে পণ্যের ওজন নির্ধারণ করে চালান দেওয়া হয়। কিন্তু এপারে অটোমেশন সিস্টেমে পরিমাপের পর পণ্যের ওজন বেশি দেখায়। এতে ব্যবসায়ীদের একদিকে বাড়তি রাজস্ব দিতে হচ্ছে, অন্যদিকে ব্যাংকিং জটিলতায়ও পড়তে হচ্ছে। কিন্তু উভয় দেশের স্থলবন্দরে অটোমেশন চালু থাকলে তাদের এ সমস্যায় পড়তে হতো না।
আমদানিকারকদের অভিযোগ, সিলেটের শুল্ক স্টেশনগুলো দিয়ে পাথর, চুনাপাথর বা কয়লা আমদানি করতে হলে এ সমস্যায় পড়তে হয় না। শুল্ক স্টেশনগুলোয় ওজনের এত কড়াকড়ি নেই। স্থলবন্দর করও দিতে হয় না। ফলে ভারতের একই জায়গা থেকে পণ্য কিনে যারা তামাবিল দিয়ে আমদানি করছেন তাদের খরচ শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানিকৃত পণ্যের চেয়ে বেশি পড়ছে। ফলে আমদানিকৃত পণ্য বিক্রিতেও মার খাচ্ছেন তামাবিলের আমদানিকারকরা। তামাবিল স্থলবন্দর হওয়ায় আমদানিকারকদের ট্রাকপ্রতি ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা ‘পোর্ট ট্যাক্স’ দিতে হয়। শুল্ক স্টেশনগুলো এ ট্যাক্সমুক্ত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিদিন তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে ১ হাজারের বেশি ট্রাক পণ্য নিয়ে আসে। এতে সরকারের রাজস্ব আদায় হয় ৫০ লাখ টাকার মতো। কিন্তু এতদিন আমদানি বন্ধ থাকায় ১০ কোটি টাকার উপরে রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয় সরকার।
তামাবিল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক মো. মাহফুজুল ইসলাম ভূঁইয়া মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ‘আজ (মঙ্গলবার) দুপুরের পর থেকে এ স্থলবন্দর আমাদিন ফের চালু হয়। যুগ্মসচিব ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. জাহাঙ্গীর কবির মহোদয় পণ্য পরিমাপের বিষয়টি দু-একদিন পর্যবেক্ষণ করবেন। এরপরে অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এবিএ/ ০১ ফেব্রুয়ারী