স্টাফ রিপোর্ট:: সিলেটে ট্রাফিক পুলিশের বানিজ্যে অতিষ্ট নগরবাসী। ব্যাটারিচালিত গাড়ি থেকে শুরু করে ভারী যান চালকরাও রেহাই পাচ্ছে না অসাধু ট্রাফিক পুলিশদের হাত থেকে। নগরীর বিভিন্ন ট্রাফিক পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশের প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান ভোক্তভোগীরা। এছাড়া সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লেগে থাকে জানযট। ডিসি (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদ দীর্ঘদিন থেকে ট্রাফিক বিভাগে দায়িত্ব পালন করে আসছেন কিন্তু ট্রাফিক পুলিশের বানিজ্য বন্ধে তিনি ব্যর্থ এ দাবি সিলেট জেলা বাস, মিনিবাস,লেগুনা মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাদের।
তারা বলেন,আমরা সিলেট মহানগর ট্রাফিক পুলিশের ডিসি ফয়সল মাহমুদ কে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলাম গত বছরের ১০ অক্টোবর।
সিলেট নগরজুড়ে রাস্তা দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্ট্যান্ড। নগরীর কোর্ট পয়েন্ট, সুরমা মার্কেট পয়েন্ট, চৌহাট্টা-আম্বরখানা সড়ক, চৌহাট্টা-রিকাবীবাজার সড়ক, আম্বরখানা-বিমানবন্দর সড়ক দখল করে এসব স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে চৌহাট্টা থেকে রিকাবীবাজার সড়কের দুই পাশে ও চৌহাট্টা থেকে আম্বরখানা সড়কের একপাশের প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকা দখল করে অস্থায়ী মাইক্রোস্ট্যান্ড বসিয়েছেন চালকরা। ফলে প্রতিদিন এ দুটি সড়কে যাতায়াতকারীরা যানজটের শিকার হচ্ছেন।
রোববার সরেজমিন দেখা গেছে, চৌহাট্টা থেকে রিকাবীবাজার ও আম্বরখানামুখী দুটি সড়কে প্রায় সাড়ে তিনশ’ মাইক্রো ও অন্যান্য গাড়ি সারিবদ্ধভাবে রয়েছে। আম্বরখানামুখী সড়ক থেকে বেশিরভাগ গাড়ি ভাড়ায় জেলা শহর সুনামগঞ্জ ছাড়াও ছাতক ও দিরাই উপজেলায় যায়। চৌহাট্টা-রিকাবীবাজার সড়ক থেকে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাড়ায় যায় এসব গাড়ি। একাধিক মাইক্রোবাসের চালক জানান, নগরে মাইক্রো রাখার জন্য নির্ধারিত কোনো স্ট্যান্ড নেই। তাই তারা এই দুটি সড়ককে অস্থায়ী স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহার করছেন। এখানে প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচশ’ গাড়ি থাকে। এসব গাড়ি দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাড়ায় চলাচল করে।
পূণ্যভূমি সিলেট নগরীতে বঙ্গবন্ধু কন্যা সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাজার হাজার কোটি টাকা উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ দিচ্ছেন। সিলেট ১ আসনের সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে মোমেন এইসব বরাদ্দ এনে দিচ্ছেন নগর পিতা আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে। মেয়র আরিফ সিলেটবাসীর সহযোগিতায় নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রশস্থ করছেন। কিন্তু নগরজুড়ে ঘুরে দেখা যায় একদিকে রাস্তা বড় হচ্ছে অন্য দিকে অবৈধ সিনিএজি স্ট্যান্ড , মাইকোবাস স্ট্যান্ড , লেগুনা স্ট্যান্ড , পিকআপ স্ট্যান্ড সহ বিভিন্ন গাড়ির অবৈধ গাড়ির স্ট্যান্ড সব রাস্তা দখল করে আছে। মাঝে মধ্যে মেয়র আরিফ অভিযান পরিচালনা করছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক সদস্যরা মোড়ে মোড়ে মোটর, প্রাইভেট গাড়ি আটকিয়ে মামলা দিচ্ছেন। কিন্তু অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদে ট্রাফিক পুলিশ নির্বিকার এমনটি জানালেন বিভিন্ন পরিবহণ শ্রমিক নেতা।
গত ১০ অক্টোবন ২০২১ সালে ছয় দফা দাবিতে গতকাল শনিবার সিলেটে মানববন্ধন করেন পরিবহন শ্রমিকরা। গতকাল সকাল ১১টায় দক্ষিণ সুরমার কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে এ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে সিলেট জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ট্রাফিক পুলিশের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। সিলেটে যেহেতু পার্কিংয়ের স্থান নেই, তাই ভুল পার্কিংয়ের মামলা বন্ধ করতে হবে।
তাছাড়া দুর্ঘটনা গাড়ি ছাড়া অন্য গাড়ির ক্ষেত্রে রেকারিং বিল আদায় বন্ধ করতে হবে। সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সাল মাহমুদ, অতিরিক্ত উপকমিশনার জ্যোতির্ময় সরকার ও ট্রাকিফ সার্জন নুরুল আফছারকে প্রত্যাহার করতে হবে। পাশাপাশি মেয়াদোত্তীর্ণ সেতুর টোল আদায় করা যাবে না। শ্রমিকদের দাবি, ‘লামাকাজি সেতু, শেওলা সেতু, শেরপুর সেতু, ফেঞ্চুগঞ্জ সেতু থেকে টোল আদায় বন্ধ এবং শাহপরান সেতু থেকে অতিরিক্ত টোল আদায় বন্ধ করতে হবে। ’ একই সঙ্গে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সিলেট অফিসে শ্রমিক হয়রানি বন্ধ এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন তিন মাসের মধ্যে ও নতুন লাইসেন্স ছয় মাসের মধ্যে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
এসব দাবিতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন উল্লেখ করে পরিবহন নেতারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন, ‘এই ছয় দাবি পূরণ না হলে আগামী ১১ অক্টোবর থেকে আমরা ধর্মঘট শুরু করতে বাধ্য হব। ’
এব্যাপারে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন,নগরীর রাস্তা প্রশস্ত করার জন্য নগরের মানুষ কোটি কোটি টাকার জায়গা ছেড়ে দিয়েছে। বারবার ট্রাফিক বিভাগকে অনুরোধ করার পর তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
ভারী যান (ট্রাক) চালক আব্দুর রহিম জানান, ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি ইদানীং বৃদ্ধি পেয়েছে। সারাদিন শহরের বাইরে ট্রাক রেখে সন্ধ্যার পরে নগরীতে ঢুকার সাথে সাথে ট্রাফিক পুলিশকে পয়েন্টে পয়েন্টে উৎকোচ দিতে হয়। নতুবা খালি গাড়ি হলে রিকুইজিশন আর মালবাহী হলে অভার লোড বলে মামলার ভয় দেখায়। তখন আমাদের বাধ্য হয়ে প্রতিটি পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশকে উৎকোচ দিয়ে চলতে হয়।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদ এর মুঠোফেনে এই বিষয়ে জানতে বারবার ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
এবিএ/ ০১ ফেব্রুয়ারী