স্টাফ রিপোর্ট: সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে জনবল নিয়োগে অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। চলতি মাসের ২য় সপ্তাহে তদন্ত কমিটি ইউজিসির চেয়ারম্যানের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এর আগে অনিয়ম তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন চেয়ারম্যানের (ইউজিসি) অনুমোদনের পর চলতি মাসের ২১ জানুয়ারি সুপারিশের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছে ইউজিসি।
প্রতিবেদনে অস্থায়ীভাবে (অ্যাডহক) যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মেয়াদ আর না বাড়ানো, অস্থায়ীভাবে নিয়োগ পাওয়ার পরও নীতিমালা লঙ্ঘন করে যাঁদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তা বাতিল এবং পদোন্নতি প্রাপ্তদের অতিরিক্ত বেতন-ভাতার অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয় প্রতিষ্ঠানে অস্থায়ীভাবে আর কোনো নিয়োগ না দেওয়া। আর যেসব পদে ইতিমধ্যে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের চাকরির মেয়াদ আর না বাড়িয়ে ইউজিসির অনুমোদিত পদের বিপরীতে উন্মুক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, কলেজ পরিদর্শক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, পরিচালক (অর্থ ও হিসাব বিভাগ), পরিচালকসহ (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) গুরুত্বপূর্ণ পদে উন্মুক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দিতে বলে ইউজিসি। এসব গুরুত্বপূর্ণ পদে অস্থায়ী, খÐকালীন, অতিরিক্ত দায়িত্ব বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ গ্রহণযোগ্য নয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদিত পদের বাইরে অতিরিক্ত ১০৯ জনকে নিয়োগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অস্থায়ীভাবে দেওয়া এসব নিয়োগে উপাচার্যের আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু ক্ষমতাসীন দলের একাধিক সাংসদের স্বজনেরা রয়েছেন। এমনকি উচ্চশিক্ষার অনিয়ম বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্বে থাকা ইউজিসির কর্মকর্তাদের সুপারিশেও বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনুষদে বেআইনিভাবে আটজনকে ডিন হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে ইউজিসির তদন্তেই। প্রতিবেদনে অনিয়ম বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী বা অস্থায়ী পদে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে ইউজিসির প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা সদস্যকে এবং কর্মকর্তা– কর্মচারী নিয়োগ বোর্ডে ইউজিসির সচিবকে পর্যবেক্ষক হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠার পর গত বছরের নভেম্বরে ইউজিসি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দের নেতৃত্বে কমিটিতে ছিলেন ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামান ও উপপরিচালক মৌলি আজাদ (সদস্যসচিব)। কমিটি নিয়োগ–বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্ত করতে গত ১৬ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়। উপাচার্যসহ ২১ জনের সাক্ষাৎকার নেন তাঁরা এবং তদন্তসংশ্লিষ্ট নথি সংগ্রহ করেন।
ইউজিসি বলছে, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন কর্মরত জনবল আছে ১৭৪ জন। ইউজিসি থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ১১২টি পদের অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে অনুমোদিত সব পদে এখনো নিয়োগ হয়নি। তদন্ত কমিটি প্রমাণ পেয়েছে, ১০৯টি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে। তাঁদের বেতন–ভাতার অর্থ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুদান হিসেবে দেওয়া হয় বলে তদন্ত কমিটিকে বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার।
কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই ১০৯ জনের বেতন–ভাতা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুদান থেকে আসছে, এমন কোনো তথ্য–প্রমাণ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেখাতে পারেনি।
চিঠি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তদন্ত কমিটির সদস্য ও ইউজিসির সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ফেরদৌস জামান। তিনি বলেন, যথারীতি তদন্ত শেষে মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান মহোদয় বরাবরে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। ঠিক কতো তারিখে প্রতিবেদন দাখিল করা হল-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইউজিসি শুধু একটা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কাজ করে না। এতো কাজের ভিড়ে প্রতিবেদন দাখিলে তারিখ মনে না থাকলেও আনুমানিক জানুয়ারি মাসের ২য় সপ্তাহে হবে বলে জানান তিনি। উপাচার্যকে চিঠি পাঠানো হয়েছে কবে-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন তাও জানুয়ারি মাসের ২১ তারিখ হবে।
২০১৮ সালের অক্টোবরে প্রতিষ্ঠিত হয় স্নাতকোত্তর চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। এটি দেশের চতুর্থ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৮ সালের নভেম্বরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোর্শেদ আহমেদ চৌধুরী। এখনো বিশ্ববিদ্যালয়টির নিজস্ব ক্যাম্পাস হয়নি। সিলেট শহরের চৌহাট্টা এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে। স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য শহরের পাশে দক্ষিণ সুরমা এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
এবিএ/৩১ জানুয়ারি