সিলেট৭১নিউজ ডেস্কঃঃ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি য়াওয়ার পথে ঝোড়ো বাতাস ও বৃষ্টির কবলে পড়ে ঠান্ডায় প্রাণ হারানো ৭ বাংলাদেশির মধ্যে পাঁচজনই মাদারীপুরের। গত ২৫ জানুয়ারি ইতালিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে তাদের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে।
মৃত পাঁচজন হলেন সদর উপজেলার পশ্চিম পেয়ারপুর এলাকার মো. ইমরান হাওলাদার কালু (২৩), একই ইউনিয়নের বরাইল বাড়ি এলাকার প্রেমানন্দ তালুকদারের ছেলে জয় তালুকদার (১৮), মস্তফাপুর ইউনিয়নের চতুরপাড়া এলাকার শাহজালাল মাতুব্বরের ছেলে জহিরুল ইসলাম শুভ (২০), বাপ্পি, রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর ইউনিয়নের উমারখালী এলাকার সাফায়েত মোল্লা (২০)।এ ছাড়া বাকি দুজন হলেন সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার সাজ্জাদ ও কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার সাইফুল।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ জানুয়ারি ২৮৭ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালির উদ্দেশে রওনা হন। তাদের মধ্যে ২৭৩ জনই বাংলাদেশি নাগরিক। অভিবাসনপ্রত্যাশী অন্যরা মিসরীয় নাগরিক। তিউনিসিয়ার ভূমধ্যসাগরের মাঝখানে যাওয়ার পর প্রবল ঝোড়ো বাতাস ও টানা ছয় ঘণ্টা বৃষ্টিপাতের কবলে পড়ে তাদের নৌযান।এ সময় প্রচণ্ড ঠান্ডায় হিম হয়ে মারা যান সাত বাংলাদেশি। গত ২৫ জানুয়ারি বিষয়টি জানতে পারে বাংলাদেশ ইতালির দূতাবাস। বাংলাদেশ ইতালি দূতাবাস থেকে জরুরি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যামে নিশ্চিত করেন যে মারা যাওয়া সাত বাংলাদেশির মধ্যে পাঁচজনই মাদারীপুর জেলার।সুনির্দিষ্টভাবে তাদের পরিচয় শনাক্ত করে মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করাতে আহ্বান করেছেন দূতাবাস।মারা যাওয়া পাঁচজন তরুণের মধ্যে ছিল সদর উপজেলার পশ্চিম পেয়ারপুর এলাকার ভ্যানচালক শাজাহান হাওলাদারের ছেলে মো. ইমরান হাওলাদার (কালু)। তার মারা যাওয়ার খবর জানে না পরিবারের সদস্যরা। দালালরা এখনো আশ্বাস দেখিয়ে যাচ্ছে তার সন্তান এখনো বেঁচে আছে।
নিহত ইমরান হাওলাদারের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২১ সালের অক্টোবর মাসের ২৫ তারিখ স্থানীয় দালাল সামাদ বেপারীর প্রলোভনে পড়ে ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশ ছাড়ে ইমরান। দুবাই হয়ে লিবিয়ার একটি বন্দিশালায় কাটানোর পরে লিবিয়ায় থাকা সিলেটের আহম্মেদ নামে এক দালালের মাধ্যমে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায় চুক্তিতে ২৪ জানুয়ারি লিবিয়ার স্থানীয় সময় রাত ৩টার দিকে অভিবাসনপ্রত্যাশী ইঞ্জিনচালিত কাঠের নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে স্বপ্নের দেশ ইতালির লাম্পেদুসা দ্বীপের উদ্দেশে রওনা করেন ইমরান। কিন্তু তারপর থেকে আর কোনো কথা হয়নি ইমরানের। তবে দালাল বলেছিল ইমরান ইতালিতে পৌঁছাতে পেরেছেন। প্রচণ্ড ঠান্ডা থাকার কারণে তিনি ওখানকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানান দালালরা।রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর ইউনিয়নের উমারখালী এলাকার সাফায়েত মোল্লার বাড়িতে গিয়ে তার দুলাভাই রাসেলে মিঞার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাড়িতে কেউ জানে না তার মৃত্যুর খবর। কারণ দালালরা আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে যে সাফায়েত অসুস্থ, তাই হাসপাতালে আছে।ইমরানের কাকা সোবহান হাওলাদার বলেন, আমাদের সঙ্গে দালালের কথা হইছে। হে কইছে আমাগো ইমরান অসুস্থ হাসপাতালে ভর্তি আছে। আপনাদের থেকে জানতে পারলাম এই নামে একজন মারা গেছে। আপনাদের কাছে আমাদের অনুরোধ, আমার ভাতিজা যদি বাইচ্চা থাকে, তাইলে সেখানে সরকার যেন ভালো একটা কাজের ব্যবস্থা কইরা দেয়। আর যদি মাইরা যায়, তাহলে লাশটা যেন দেশে ফিরাইয়া আনে।
এ ব্যাপারে মাদারীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুদ্দিন গিয়াস বলেন, ইতালিতে প্রবেশের সময় মাদারীপুর জেলার যে পাঁচজন মারা গেছে, ইতালির দূতাবাস আমার সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করেছে। নিহতদের সঠিক তথ্য নিশ্চিত করে দূতাবাসে পাঠালে তারা দ্রুত পাঁচটি লাশ দেশে পাঠিয়ে দেবে। এমনটাই জানিয়েছেন ইতালির কাউন্সেলর জয়েন্ট সেক্রেটারি।মাদারীপুর পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করলে পুলিশ আইনি ব্যবস্থা নেবে। তবে অধিকাংশ সময় নিহতের পরিবার কোনো অভিযোগ করে না। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের সব ধরনের আইনি সহায়তা দিতে চাই।
বিএ/৩১ জানুয়ারি