সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক;: সিলেটের উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক যুবককে ইনজেকশন পুশ করার সাথে সাথে নাকে-মুখে রক্তক্ষরণ হয়ে তিনি মারা গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনরা। বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। সিলেট নগরীর মিরবক্সটুলায় অবস্থিত উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর পর স্বজনরা হাসপাতালে মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। মারা যাওয়া আব্দুল আহাদ (৪০) সিলেট শহরতলির আখালিয়া নতুন বাজারের মোহাম্মদিয়া আবাসিক এলাকায়র পংকি মিয়ার ছেলে। তিনি একসময় সৌদিআরব প্রবাসী ছিলেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক।
আব্দুল আহাদের শ্যালক হেলাল উদ্দিন জানান, ‘আজ ভোর রাত ৪টার দিকে আব্দুল আহাদের বুকে ব্যথায় ধরে। পরে তাকে নিয়ে উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসা হয়। তখন তিনি বেডে ভালোই ছিল। ডাক্তার প্রেসক্রিপশন লিখে দেন, আমরা ওষুধ নিয়ে আসি। পরবর্তীতে একটা ইনজেকশন মারা হয়। ইনজেকশন মারার সাথে সাথে নাকে-মুখে রক্তক্ষরণ হয়ে তিনি মারা যান।’
হাসপাতালে উপস্থিত থাকা আব্দুল আহাদের ভাগ্নে বলেন, “আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে যাই। কিন্তু কয়েক ঘন্টায়ও তারা কোনো আশ্বাস আমাদেরকে দেয়নি। কোন ডাক্তার চিকিৎসা করেছেন, তার নামও আমাদেরকে জানায়নি। আমরা বলেছি, ডাক্তারের নামটা বলেন, আমরা বুঝি যে কেন এমনটা ঘটলো। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বারবার বলছে, ‘সরি, সরি, ভুল হয়ে গেছে’। পরবর্তীতে আমরা প্রশাসন নিয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে বসেছি। তখন তারা আর দুঃখিত বলেনি, টালবাহনা দিয়ে ধামাচাপা দিতে চাইছে।’
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘দুঃখিত বললে কী সব শেষ হয়ে যায়? ছোট ছোট দুটি বাচ্চা এতিম হলো, একজন মহিলা বিধবা হলেন। এর দায় কে নেবে?’ আব্দুল আহাদের মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর স্বজনেরা হাসপাতালে ভিড় করেন। তারা মরদেহ নিয়ে হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।
শোরগোলের খবর পেয়ে উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান নগরীর ১৬নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ম সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া শাওন। তখন উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এ হাসপাতালে সচরাচর এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এই জায়গায় সচরাচর মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। চিকিৎসকের কাছে আমরা ভালো হওয়ার জন্য এসে যদি লাশ নিয়ে ফিরতে হয়, সেটা দুর্ভাগ্যজনক।’ হাসপাতালে উপস্থিত থাকা এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে এসেছি। ইনজেকশন দেওয়ার পর রোগী মারা গেছে বলে স্বজনেরা অভিযোগ করছেন। তারা লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এ ব্যাপারে উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিকিউরিটি ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আজ ভোর ৬টার দিকে রোগী নিয়ে আসা হয়, কার্ডিয়াটিক রোগী। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডাক্তাররা চেষ্টা করেন। ডাক্তাররা বারবার বলেছে, রোগীর অবস্থা খুব খারাপ। এরপর প্রেসক্রিপশন দেখে রোগীর স্বজনরা ওষুধ, ইনজেকশন নিয়ে আসেন। উনারা তো দেখেছেনই যে ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে। ডাক্তাররাও বলেছেন।’ তিনি বলেন, ‘রোগী মারা গেলে তারা ডাক্তারদের গায়ে হাত তুলেছে, সিকিউরিটির গায়ে হাত তুলেছে। যদি ডাক্তারদের দোষে হয়, তাহলে কর্তৃপক্ষ আছে, সেটা তদন্ত সাপেক্ষে বের হয়ে আসবে।’
এদিকে, পুলিশের সামনেই রোগীর স্বজনদের ‘একটা একটা ডাক্তার ধর, ধইরা ধইরা জবাই করা স্লোগান’ দিতে দেখা যায়। আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্বজনেরা মরদেহ নিয়ে বাড়িতে গেছেন। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে বলে জানিয়েছেন আব্দুল আহাদের শ্যালক হেলাল উদ্দিন।
আইআর/২৭ জানুয়ারি