সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃঃ এক বুক স্বপ্ন নিয়ে ২৫ বছর বয়সী ছেলে সাজ্জাদ আহমেদকে তাঁর মা-বাবা ইতালি পাঠিয়েছিলেন। তবে লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে সেই স্বপ্নের মৃত্যু হলো ভূমধ্যসাগরের চরম ঠান্ডায়। এদিকে ছেলে মারা যাওয়ার খবরে মা জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছেন । আর বাবা চাইছেন, শেষবারের মতো হলেও যেন তিনি ছেলের মরদেহ দেখতে পান।
সাজ্জাদ আহমেদ সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালী ইউনিয়নের আটগাঁও ফেকুল মাহমুদপুর গ্রামের বাসিন্দা। শুধু সাজ্জাদই নন তাঁর সঙ্গে গত মঙ্গলবার ভূমধ্যসাগরের ঠান্ডায় জমে মারা গেছেন আরও ছয় বাংলাদেশি। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সাজ্জাদ হোসেন নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার আশায় গত ডিসেম্বর মাসে জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাক ইউনিয়নের মো. রফিক দালালের মাধ্যমে লিবিয়া পৌঁছানো পর্যন্ত ৩ লাখ টাকার চুক্তি করা হয়। প্রথমে সাজ্জাদকে দুবাই পাঠানো হয়। পরে সেখানে কিছুদিন অবস্থান করার পর দুবাই থেকে চলতি মাসে তাঁকে লিবিয়া পৌঁছানো হয়। লিবিয়া থেকে ইতালি পাঠানোর জন্য নতুন করে চুক্তি করা হয় আরও ৪ লাখ টাকা। সময়মতো টাকাও পরিশোধ করা হয়। সেই চুক্তি মোতাবেক ২৩ জানুয়ারি একটি বোটে সাজ্জাদ আহমেদসহ মোট ২৮০ জনকে নিয়ে লিবিয়া থেকে ইতালির ল্যাম্পাডুসা দ্বীপের উদ্দেশে রওনা হয় দালাল চক্র। পরে গতকাল সাজ্জাদের পরিবারের লোকজন বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারেন, সাজ্জাদসহ সাত বাংলাদেশি মারা গেছেন।
এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে সাজ্জাদের চাচাতো ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সর্বশেষ তাঁর সঙ্গে গত সোমবার ফোনে কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন ইতালিতে যাওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এবং কোনো সমস্যা নেই তাঁর। সাজ্জাদের চাচাতো ভাই জানান, গতকাল তাঁরা সাজ্জাদের মৃত্যুর সংবাদ পান। জাহাঙ্গীর আরও বলেন, ওই নৌকায় ২৮০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী ছিলেন, যাঁদের অধিকাংশই বাংলাদেশ, মিসর, মালি ও সুদানের নাগরিক। ইতালির কোস্টগার্ডের সদস্যরা সেখানে তাঁদের উদ্ধার করেছেন বলে খবর পেয়েছেন তাঁরা। এদিকে ছেলে মারা যাওয়ার খবরে মা জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছেন। জ্ঞান ফিরলে আবার কান্নাকাটি করছেন আর বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। স্বজন এবং প্রতিবেশীদের কান্নায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।সাজ্জাদের বাবা নূরুল আমিন মেম্বার বলেন, ‘আমার ছেলে ইতালি যাওয়ার পথে মারা গেছে। এখন আমাদের একটাই দাবি ওর মরদেহটা যেন শেষবারের মতো দেখতে পারি।’
বিএ/২৭ জানুয়ারি