হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃঃ হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে বিরল প্রজাতির একটি চিতা বিড়ালকে পিটিয়ে হত্যা করেছে কচুয়া গ্রামবাসী। পরে মৃত বিড়ালটিকে নিয়ে উল্লাসও করে তারা।এ নিয়ে গত দুই সপ্তাহে দুটি বন্যপ্রাণীকে হত্যা করেছে কচুয়া গ্রামের মানুষ।শনিবার দুপুরে চিতা বিড়ালটিকে হত্যার খবর পেয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তারা গিয়ে এর মরদেহটি উদ্ধার করেন।
স্থানীয়রা জানান, সকালে হঠাৎ কয়েকজন বিড়ালটিকে গ্রামের পাশে একটি ঝোপে দেখতে পায়। তারা এটিকে বাঘের বাচ্চা বলে গ্রামবাসীর মধ্যে প্রচার করলে শত শত মানুষ বিড়ালটিকে ধাওয়া করে। পরে তারা এটির নাগাল পেয়ে পিটিয়ে হত্যা করে।এ ব্যাপারে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘স্থানীয়রা এটিকে বাঘ আখ্যা দিয়ে মেরে ফেলেছে। অনেকে আবার এটিকে মেছো বিড়ালও মনে করে। কিন্তু এর প্রকৃত নাম হচ্ছে চিতা বিড়াল। যার ইংরেজি নাম Leopard cat।’তিনি জানান, চিতা বিড়াল মেছো বিড়ালের চেয়ে একটু ছোট এবং সাধারণ বিড়ালের চেয়ে একটু বড়। ওজন প্রায় চার কেজি হয়ে থাকে। বিরল প্রজাতির এই প্রাণীটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেট অঞ্চলে এরা কিছু সংখ্যায় রয়ে গেছে। এটি কখনও কোনো মানুষকে আক্রমণ করে না।
বন বিভাগের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কিছুদিন আগে শিয়ালের কামড়ে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা আহত হয়েছিল। এরপর আমি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য স্থানীয়দের বলেছি। এর পরও তারা গত ৯ জানুয়ারি একটি শিয়ালকে পিটিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় বন আদালতে চারজনের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে।’রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, গত ১৩ জানুয়ারি ওই গ্রামের মানুষ একটি বিরল প্রজাতির গন্ধগোকুলকেও আটক করে। পরে বন বিভাগের কর্মীরা গিয়ে এটিকে উদ্ধার করেন।মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী আরও বলেন, ‘চিতা বিড়াল হত্যার ঘটনায় আমরা ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা করছি। এ ঘটনায় মামলা হবে। তবে মামলাটি বন আদালত নাকি থানায় হবে, এ ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।’স্থানীয়রা জানান, গত ৫ জানুয়ারি উপজেলার রাজারবাজার ও রানীরকোট এলাকার ছয়জনকে কামড়ায় একটি শিয়াল। পরে ওই দুটি গ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে অচেনা প্রাণীর আতঙ্ক দেখা দেয়। এই প্রাণীর আক্রমণ থেকে বাঁচতে নিজ নিজ ঘরে অবস্থানের জন্য মসজিদের মাইকে ঘোষণাও দেয়া হয়। এমনকি গ্রামবাসী লাঠিসোঁটা নিয়ে রাতভর গ্রাম পাহারাও দেয়।
গত ৮ জানুয়ারি বিকালে চুনারুঘাট উপজেলার সারেরকোনা গ্রামে কবরস্থানের গর্ত থেকে এলাকাবাসী মেছো বিড়ালের দুটি শাবক ধরে আনে। এ সময় মা বিড়ালটি পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ ও বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাচ্চাগুলোকে আগের স্থানে রেখে দেন। সেদিন রাতেই মেছো বিড়ালটি নিজের শাবক দুটিকে নিয়ে অন্যত্র চলে যায়।৯ জানুয়ারি কচুয়া গ্রামবাসী একটি শিয়ালকে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে ১৩ জানুয়ারি বিরল প্রজাতির গন্ধগোকুলটিকে ধরে আনে স্থানীয়রা। যদিও বন বিভাগের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে এটিকে উদ্ধার করেন।এ ব্যাপারে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ ভৌমিক বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে বন বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করব। যেহেতু স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়েই বন্যপ্রাণী ধরছে এবং মারছে, সে ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে মাইকিং করা হবে। এ ছাড়া যে দুটি প্রাণীকে হত্যা করা হয়েছে সে ব্যাপারে মামলা হবে।’
বিএ/২৩ জানুয়ারি