মৌলভীবাজার প্রতিনিধি :: ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য সকলেই ডাস্টবিন ব্যবহার করে। শহরাঞ্চলে সচরাচর দেখা যায় সড়কে রাখা ডাস্টবিনে ঢাকনা সরিয়ে মানুষ ডাস্ট ফেলছে। কিন্তু নতুন একটি ডাস্টবিন তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মৌলভীবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী শিল্টু দাস। তিনি সেটির নাম দিয়েছেন “আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ডাস্টবিন”।
ডাস্টবিনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলবে। ময়লা আবর্জনা নিয়ে বিনের কাছে গেলে অটোমেটিক ঢাকনা খুলে যাবে এবং ময়লা ফেলার পর আবার ঢাকনা লেগে যাবে। এটির বিশেষ আরও একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নির্দিষ্ট পরিমাণ ময়লা ভর্তি হওয়ার পর আর ঢাকনা খুলবে না। যে এই বিনের মালিক বা পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রিত মুঠোফোনে মেসেজ ও কল যাবে।
কয়েকদিন আগে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আয়োজনে ৪৩ তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ এবং বিজ্ঞান মেলায় মৌলভীবাজার পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এর শিক্ষার্থী শিল্টু দাস’র এই প্রজেক্টটি ১ম স্থান অর্জন করে।
শিল্টু দাস পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর ৬ষ্ট পর্বের ইলেকট্রনিক্স ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী। হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার কালাপাশা ইউনিয়নের হারুনী গ্রামে তার বাড়ি। শিল্টুর বাবার নাম সুপ্রভাত চন্দ্র দাস।
শিল্টু দাস বলেন, আমি কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকে মৌলভীবাজার পৌর শহরের প্রতিনিয়ত আসতাম। পৌরসভার যে ডাস্টবিনগুলো সেগুলো আমার চোখে বাঁধতো। দেখলাম বেশিরভাগ ডাস্টবিন ময়লা ভর্তি হয়ে উপচে নিচে পড়ে আছে। লোকজনও বাসার, দোকানের ময়লা নিচে ফেলে দিচ্ছে। যেটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
আবার পথচারিরাও এইটার পাশ গেলে নাক চেপে যেতে হয়। প্রচুর গন্ধ বের হয়। অনেকেই দেখা যায় ময়লা ফেলতে চায় না হাতে ময়লা লাগতে পারে এই ভেবে। যেটার জন্য তারা ডাস্টবিনের ঢাকনা না তুলে ময়লা না ফেলে এইটার পাশেই ময়লা রেখে দেয়। আবার আমরা প্রায়ই দেখি ডাস্টবিনের পাশের ময়লা গুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঠিক সময়ে নিতে আসে না বা তারা বুঝেন না কখন ডাস্টবিন পূর্ণ হয়।
উদ্ভাবক শিল্টু দাস বলেন, এই সমস্যা গুলোর সমাধান এর জন্যই আমার এই প্রজেক্টটি তৈরি করা। আমার এই প্রজেক্টটি যেভাবে কাজ করবে। ডাস্টবিনের সামনে ময়লা নিয়ে দাড়ালেই সে নিজে নিজেই ঢাকনা খুলে দিবে যার ফলে হাতে ময়লা লাগবে না। সবাই বিনের মধ্যেই ময়লা ফেলতে দ্বিধাবোধ করবে না।
আবার যখন ময়লা পূর্ণ হবে তখন স্বয়ংক্রিয় ভাবে ডাস্টবিনের মালিক বা সিটি করপোরেশন, পৌরসভার অফিসে কল যাবে এবং লোকেশন বলে দিবে। তারপর তারা ময়লার গাড়ি দিয়ে কালেক্ট করে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দিবে। প্রজেক্টটি যাতে বাস্তবায়ন হয় এ জন্য সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
মৌলভীবাজার পৌরসভার উপ সহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে পৌরসভার মেয়র মহোদয়ের সাথে আলাপ-আলোচনা করবো বিষয়টি নিয়ে। ময়লা কালেকশনের, পরিবেশ সুরক্ষা ও পরিস্কারের ক্ষেত্রে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ডাস্টবিনটি অনেক কাজে দিবে।
মৌলভীবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর কম্পিউটার ডিপার্টমেন্টের ইনস্ট্রাক্টর দেবাশীষ রায় বলেন, তাদেরকে যতটুকু সহযোগিতা করার আমরা করেছি। আমরা চাই ভবিষ্যতে তারা আরো উন্নতি করুক। আমার বিশ্বাস তারা যদি ঠিকমত এটি নিয়ে কাজ করতে পারে এবং উপস্থাপনা করতে পারে সেক্ষেত্রে দেশ-বিদেশে এটি ছড়িয়ে যাবে। কারন এই প্রজেক্টটি দেশ ও জনগণের কাজে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে।
উদ্ভাবনকারী শিক্ষার্থী শিল্টু দাস বলছেন, যেদিন এই প্রজেক্টটি বাস্তবে রূপ নিবে সেদিনই আমার সার্থক। কারণ কলেজে পড়ালেখার পাশাপাশি এই প্রজেক্টটি তৈরির জন্য আমি ২০২১ সাল থেকে কাজ করে আসছি। আমি চাই এই প্রজেক্টটি আমাদের দেশের বর্জ্য সমস্যার সমাধানে ব্যবহৃত হলে আমার শ্রম সার্থক হবে।
এবিএ/ ২২ জানুয়ারি