সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক :: স্ত্রী রাশিদা বেগমকে হত্যা করে দ্বিতীয় সংসারের সব ঝামেলা চুকিয়ে ফেলতে চেয়েছিলেন তামিম শেখ। এ জন্য দীর্ঘদিন ধরে রাশিদাকে হত্যার পরিকল্পনা করছিলেন তিনি। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তার বন্ধু এবং এক মাহিন্দ্রাচালককে ঠিক করেন।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বরিশালের আগৈলঝাড়া থেকে গোপালগঞ্জ সদরে ডেকে নেন স্ত্রী রাশিদাকে। পরে শহরের রোহান আবাসিক হোটেলের ২০৭ নম্বর কক্ষে রেখে রাতের খাবার খাওয়ান। হোটেল থেকে রাত সাড়ে ৮টার দিকে তামিমের বন্ধু রুবেলকে সঙ্গে নিয়ে জুলহাসের মাহিন্দ্রায় গোপালগঞ্জ থানার ঠুঠাবান্দ্রা গ্রামে যান। ওই গ্রামের একটি বিলের মধ্যে নির্জন স্থানে নিয়ে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে ও ছুরি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে রাশিদার মৃত্যু নিশ্চিত করে তামিম শেখ, রুবেল ও জুলহাস। গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে হত্যার লোমহর্ষক এমন বর্ণনা দিয়েছে রাশিদার হত্যাকারীরা। শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) সকালে বরিশাল পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোছাইন সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, হত্যার পর মাহিন্দ্রাযোগে মরদেহ নিয়ে আসে আগৈলঝাড়া থানা এলাকায়। সেখানে বাকাল গ্রামের গৌরনদী-গোপালগঞ্জ মহাসড়কের উত্তর পাশে হান্নান মোল্লার মাছের ঘেরে রাশিদার মরদেহ ফেলে দেয় তারা। পরে রাশিদার দশ মাসের সন্তান তনিমকে সেখান থেকে প্রায় পাঁচশ গজ দূরে একটি বাড়ির সামনে রেখে গোপালগঞ্জ চলে যায়। সুরতহাল রিপোর্টে লাশের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে- তিন বছর পূর্বে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বেদগ্রামের বাসিন্দা মৃত আনোয়ার শেখের ছেলে, তামিম শেখের সঙ্গে বিয়ে হয় আগৈলঝাড়ার নগড়বাড়ি গ্রামের মৃত করিম শাহের মেয়ে রাশিদা বেগমের। বিয়ের পর থেকে রাশিদা আগৈলঝাড়ার বাইপাস সড়কের পাশে একটি বাসা ভাড়া করে তার প্রথম সংসারের দুই ছেলে এবং তামিম শেখের দশ মাস বয়সী এক শিশুকে নিয়ে বসবাস করতেন। তাদের মধ্যে পারিবারিক বিরোধ লেগেই থাকত। এই বিরোধের সূত্র ধরেই বুধবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মোবাইলে গোপালগঞ্জ যেতে বলেন স্বামী তামিম শেখ। রাশিদা তার ছোট ছেলেকে নিয়ে গোপালগঞ্জ গেলে তাকে হোটেলে একটি রুম ভাড়া করে রাখেন তামিম। পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যা করে।
তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানান, তামিম তার স্ত্রী রাশিদাকে হত্যার জন্য রুবেল ও জুলহাসের সঙ্গে চুক্তি করে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে। সেই টাকা পরিশোধ করার আগেই তারা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। এদিকে গ্রেফতার তিনজনকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদানের জন্য শুক্রবার সকালে বরিশাল আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে নিহতরা রাশিদার মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার বাদ এশা নিজ গ্রাম নগরবাড়ি জামে মসজিদে জানাজা শেষে পিতার বাড়িতে দাফন করা হয়। রাশিদার দশ মাসের শিশু তনিমসহ রাশিদার তিন ছেলে বর্তমানে মামা বাড়িতে রয়েছে। রাশিদা হত্যার ঘটনায় নিহতের ভাই আল আমিন বাদী হয়ে আগৈলঝাড়া থানায় মামলা দায়ের করেন।তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাজহারুল ইসলাম জানান, রাশিদা বেগমকে হত্যার সময় দশ মাসের শিশু তনিম তাদের কোলেই ছিল। এ ছাড়া হত্যার পর তার মায়ের মরদেহের সঙ্গে একই মাহিন্দ্রায় আগৈলঝাড়ায় আসে তনিম। এ ছাড়া রাশিদা হত্যায় ঘাতকরা জড়িত বলে স্বীকার করেছে। আশা করছি এই ঘটনায় তাদের সর্বোচ্চ সাজা হবে।প্রসঙ্গত, বুধবার (১৯ জানুয়ারি) রাত ১১টার দিকে আগৈলঝাড়া থানা এলাকার মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে একটি শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে। পরে পুলিশে খবর দিলে শিশুটিকে তাদের জিম্মায় নেয় পুলিশ। এর কিছুক্ষণ পর গৌরনদী-গোপালগঞ্জ মহাসড়কের পাশে একটি মাছের ঘের থেকে রাশিদার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে কান্নারত অবস্থায় পাওয়া ওই শিশুটিকে রাশিদার ছোট ছেলে বলে শনাক্ত করে তার স্বজনরা।
বিএ/২২ জানুয়ারি