শাল্লা প্রতিনিধি:: উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আজিজুর রহমান। কোথায় আছেন কেউ বলতে পারেন না। ২০১৮ সালে সুনামগঞ্জের শাল্লায় যোগদানের পর থেকেই তিনি নিরুদ্দেশ। তবুও তাঁর চাকরি এখনো বহাল আছে। শুধুমাত্র আজিজুর রহমান নয়, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের এমন আরও ৪ কর্মকর্তা নিয়মিত অফিস করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, কর্মস্থলে কাজ না করলেও নিয়মিত বেতন-ভাতা তোলেন তাঁরা। বছরের পর বছর এমন অনিয়মে বেহাল হয়ে পড়েছে শাল্লা উপজেলার দাপ্তরিক কাজকর্ম।অনুপস্থিত অন্য কর্মকর্তারা হলেন-উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা কাজী আনোয়ার উল্লা। তিনি ২০২১ সালের ১৩ জুন শাল্লায় যোগদান করেন। অভিযোগ রয়েছে, এর আগে তিনি চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলা থেকে দুর্নীতি ও ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে শাল্লায় বদলি হন। উপজেলা রিসোর্চ কর্মকর্তা আব্দুর রহমান। তিনি ২০২০ সালের জানুয়ারিতে শাল্লায় যোগদান করার পর থেকেই কর্মস্থলে অনিয়মিত। যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা পেয়ার আহমেদ। তিনি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে শাল্লায় যোগদান করেন। প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা তপন কান্তি পাল। তিনি ২০১৯ সালের অক্টোবরে যোগদান করার পর থেকেই অনিয়মিত রয়েছেন। সিলেটে বসে বসে বেতন ভাতা পাচ্ছেন তাঁরা।কর্মকর্তাদের এমন অনুপস্থিতি থাকলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে এখনো প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলার কিছু অসৎ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এমন কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। সরকারি নিয়োগ অনুযায়ী তাদের কর্মস্থল শাল্লা উপজেলা দেখানো হলেও বাস্তবে তাঁরা রয়েছেন অন্য জেলা শহরে। সোমবার সরেজমিনে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার অফিসে গেলে ওই কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। অফিসের কর্মচারীরা বলেন, ‘স্যার বাহিরে আছেন।’ মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে কর্মকর্তা পেয়ার আহমদ বলেন, ‘মাঝে মধ্যে আমি কর্মস্থলে থাকি। শাল্লা আসলে আপনার সঙ্গে দেখা করব।’ এই কথা বলে ফোন কেটে দেন। এরপর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয় প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা তপন কান্তি দাসের সঙ্গে। একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
মোবাইল ফোনে হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা কাজী আনোয়ার উল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি বাসায় বসেই সকল কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আমার কোনো কাজ আটকে থাকেনি।’ বাসায় বসে অফিস করার নিয়ম আছে কী না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাজ চললে তো কোনো সমস্যা নাই। আর মাঝে মধ্যে তো যাওয়া হয়।’ উপজেলা রিসোর্চ কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বলেন, ‘কর্মস্থলে থাকা হয়। তবে কোনো প্রশিক্ষণ না থাকায় এবং জাতীয় বিভিন্ন প্রোগ্রামের জন্য কর্মস্থলে থাকতে পারি না।’ এ ব্যাপারে জানতে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেনের মোবাইলে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আজিজুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।’ প্রাথমিক শিক্ষা সিলেট বিভাগীয় উপপরিচালক মো. মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘শাল্লার ইউআরসিকে মাসে ১০টি উন্নয়নমূলক কাজ পরিদর্শন করে রিপোর্ট পাঠানোর কাজ দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি কর্মস্থলে যদি না থাকেন তাহলে, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিএ/১৯ জানুয়ারি