নিজস্ব প্রতিবেদকঃঃ সিলেটে ফের সক্রিয় হয়ে ওঠেছে মানবপাচারকারী চক্র। ইউরোপে পাঠানোর নামে বিভিন্ন দেশে আটকে রেখে নির্যাতন করে দেশে পরিবারের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে এই চক্রের বিরুদ্ধে। এছাড়া জনশক্তি রফতানির লাইসেন্স না থাকলেও অনেক ট্রাভেলস এজেন্সি রোমানিয়া, মাল্টা, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানোর বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। এসব ট্রাভেলস এজেন্সির কয়েকটির বিরুদ্ধে অতীতেও মানবপাচারের অভিযোগ ওঠেছিল।
মানবপাচারকারী চক্রের দুই সদস্যকে গত মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) রাতে সিলেটের মোগলাবাজার থানাধীন শ্রীরামপুর বাজার থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। তাদের কাছ থেকে সিলেটের মানবপাচার চক্রের ব্যাপারে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন র্যাব কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা ইউরোপে পাঠানোর কথা বলে তরুণ-তরুণীদের আকৃষ্ট করে। এরপর তাদের সাথে চুক্তি করে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা তারা আগেই হাতিয়ে নেয়। বাকি টাকা গন্তব্যে পৌঁছার পর দেওয়ার কথা থাকে। পরে ইউরোপ গমনেচ্ছুদের ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ, দুবাই, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে মানবপাচারকারী অন্য চক্রের কাছে বিক্রি করে দেয়। এরপর শুরু হয় নির্যাতন। নির্যাতন করে দেশে থাকা পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে দফায় দফায় মোটা অংকের টাকা। সম্প্রতি পাচারের শিকার সিলেটের এক যুবক কৌশলে ফিরে এসেছেন ভারত থেকে। ভারত থেকে ফিরে তিনি র্যাবের কাছে অভিযোগ করলে তদন্তে নামে র্যাব। একপর্যায়ে মানবপাচারকারী ওই চক্রের সন্ধান পায় তারা। গত মঙ্গলবার রাতে ওই চক্রের দুই সদস্যকে আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলো- সিলেটের জালালাবাদ থানার নাজিরেরগাঁওয়ের মৃত আবদুল আলিমের ছেলে শহিদুল ইসলাম শাহিন (৪০) ও মোগলাবাজার থানার দক্ষিণ সুলতানপুর গ্রামের মো. মানিক মিয়ার ছেলে আশিকুর রহমান (৩৫)। ওই চক্রের আরও কয়েকজন সদস্য বর্তমানে পলাতক রয়েছে। তাদেরকেও আটকের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন র্যাব-৯ এর মিডিয়া অফিসার মেজর মাহফুজুর রহমান।
মেজর মাহফুজুর রহমান জানান, ‘এটি একটি ভয়ঙ্কর চক্র। তারা নানা প্রলোভন দেখিয়ে ভারত ও নেপালসহ বিভিন্ন দেশে যুবক-যুবতী ও তরুণ-তরুণীদের পাঠিয়ে সেখানে থাকা চক্রের সদস্যদের হাতে জিম্মি করায়। পরে চাপ দিয়ে বন্দীর পরিবারের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। ভারতে এই চক্রের হাতে এমনভাবে বন্দী হওয়া এক যুবক সম্প্রতি কোনোমতে পালিয়ে এসে আমাদের শরণাপন্ন হন। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে মানবপাচারকারী চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
এদিকে, ইউরাপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কথা বলে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকেও তরুণদের প্রলুব্ধ করছে মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা। ইউরোপে সিলেটের প্রবাসীরা বেশি থাকায় পাচারকারী চক্রের মূল টার্গেট থাকে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত সিলেটীরা। এরপর মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন দেশ ঘুরিয়ে তারা ইউরোপে পাঠানোর চেষ্টা করে। ফলে অনেক সময় ভূমধ্যসাগরে ট্রলার ডুবে মারা যান কেউ কেউ। এছাড়া বিভিন্ন দেশের সীমান্তে সেদেশের সীমান্তরক্ষী ও আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের গুলিতেও মারা যান অনেকে। সম্প্রতি এভাবে প্রাণ হারিয়েছেন বিয়ানীবাজারের এক তরুণ। দালালদের মাধ্যমে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবেশকালে সাগরে ডুবে, পুলিশের গুলিতে ও অসুস্থ হয়ে গেল ২-৩ বছরে সিলেটের অন্তত অর্ধশত যুবক প্রাণহারিয়েছেন। কয়েকটি ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের পর কিছু দালাল আটক হলেও থেমে নেই মানবপাচারকারী চক্রের তৎপরতা।
বিএ/১৬ জানুয়ারি