এসবিএন: সিলেটে বাসের ধাক্কায় স্কুলছাত্রী ও সংস্কৃতি কর্মী আছমা আক্তারের মৃত্যুর ঘটনায় ঘাতক বাসচালককে গ্রেপ্তার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১টার দিকে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে সাংস্কৃতিক সংগঠন চর্যাপাঠ এর সদস্যরা ‘চর্যাপাঠ পরিবার’ ব্যানারে এ মানববন্ধন করেছেন।
আছমা আক্তারের ঘাতক বাসচালককে গ্রেপ্তার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১টার দিকে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন শুরু হয়।
এতে চর্যাপাঠ’র উপদেষ্টা, কবি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শুভেন্দু ইমাম, কবি তুষার কর, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক সামসুল আলম, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাজিয়া চৌধুরী, অঙ্গীকার বাংলাদেশের পরিচালক মন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট মইনুদ্দিন আহমদ জালাল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন সুমন, বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রেনমি ও অ্যাস্ট্রোফিজিক্স অলিম্পিয়াডের সিলেট বিভাগীয় সাবেক আহ্বায়ক মুন্সী মো. মিসবাহ্ উদ্দিন, চর্যাপাঠ এর আহ্বায়ক দেবপ্রিয়া পাল, স্থায়ী কমিটির সদস্য তন্ময় মোদক, নাবিদ হাসান, দীপঙ্কর রায়, চর্যাপাঠ’র যুগ্ম-আহ্বায়ক রাজু তালুকদার, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তন্বী সাহা, মৌসুমী বিশ্বাস টুম্পা, নিলয় দাস তনু, অরুপ রতন দাস, সৌমেন চক্রবর্তী দীপ, রিপন তালুকদার, মিসবাহ্ উদ্দিন তুহিন, জুনায়েদ হোসেন হিমেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আধা ঘন্টার মানববন্ধন শেষে চর্যাপাঠ’র স্থায়ী কমিটির সদস্য তন্ময় মোদকের সঞ্চালনায় এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্যে কবি শুভেন্দু ইমাম বলেন, আছমা আক্তারের মৃত্যু কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়, এটি একটি হত্যাকান্ড।
আছমা বয়সে অনেক ছোট ছিল, তাঁর অনেক সম্ভাবনা ছিল। অঙ্কুরেই সেই সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেল। ড্রাইভিং লাইসেন্সের নামে হত্যার লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে।
সরকারের অনেকেই এদের পক্ষে ওকালতি করেন। এদেশে আমাদের জীবনের কোনো মূল্য, দাম নেই। খুনি বাসচালকের নাম পুলিশের অজানা থাকার কথা নয়।
আমরা প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া এসব দুর্ঘটনার মোড়কে হত্যার প্রতিবাদ জানাচ্ছি, প্রতিকার চাচ্ছি ও সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
কবি তুষার কর বলেন, আছমার অনেক সম্ভাবনা ছিল, বহুদূর যাওয়ার কথা ছিল, ভালো মানুষ হওয়ার কথা ছিল। রাষ্ট্র তথা সমাজ ব্যবস্থা তা দিতে পারেনি। আমরা তাঁর কথা মনে করে নীরবে অশ্রু ফেলেছি।
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার নামে হত্যা চলছে, দেশ মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে ওঠেছে। সরকার এ ব্যাপারে নিষ্ক্রিয়। সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় আরও বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক সামসুল আলম বলেন, এ ঘটনায় আমরা দু:খিত, মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। আইনের শৈথিল্য, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, প্রশাসনের নীরবতায় এসব ঘটনা দিন দিন বাড়ছে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নাজিয়া চৌধুরী বলেন, সিলেট শহরের চৌহাট্টা, জিন্দাবাজারসহ কোন জায়গায়ই জেব্রা ক্রসিং নাই। আছমা মেয়েটি চর্যাপাঠের প্রথম পরিবেশনায় অংশ নিয়েছে, তাঁর একটা শিল্পী মন ছিল। তাঁর অকালমৃত্যু কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
প্রশাসনকে বলতে চাই, সড়কে পথচারীদের যাত্রা নিরাপদ করা হোক, আইন আরও শক্ত করা হোক, চালককে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। যে ড্রাইভিং সিটে ছিল, সে আদৌ বাস ড্রাইভার কি-না, ড্রাইভার হলে লাইসেন্স আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হোক।
অঙ্গীকার বাংলাদেশের পরিচালক মন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট মইনুদ্দিন আহমদ জালাল বলেন, অপরাধী চালক, মালিকসহ ঘটনার জন্য দায়ী সংশ্লিষ্ট সবাইকে আইনের আওতায় আনা হোক।
আমি এ ঘটনাটিকে হত্যাকান্ড বলে মনে করি। এর বিচার ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
চর্যাপাঠ এর আহ্বায়ক দেবপ্রিয়া পাল বলেন, এ অপ্রীতিকর ঘটনার কারণে আমরা আমাদের একজন নিবেদিতপ্রাণ সংস্কৃতি কর্মীকে হারিয়েছি।
আমরা চাই, ঘাতক বাসচালকের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যাতে করে ভবিষ্যতে আমাদের আর কাউকে জীবন দিয়ে এর মূল্য পরিশোধ করতে না হয়।
পরে চর্যাপাঠ পরিবারের সদস্যরা আছমার পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানান ও তাঁদের সঙ্গে কিছু সময় কাটান।