সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ বছরের বেশির ভাগ সময় পানির নিচে ডুবে থাকায় এমনিতেই বোরো ধান ছাড়া তেমন কোনো ফসল হয় না হাওর অঞ্চলে। সংরক্ষণ আর বাজারজাতকরণের সমস্যার কারণে সবজি চাষেও তেমন আগ্রহী নন হাওরের চাষিরা। তবে সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার কৃষকদের আশা দেখাচ্ছে ফজলুল বারীর তৈরি করা বিশেষ ধরনের ‘কুলিং চেম্বার’। বিদ্যুৎ ছাড়াই সবজি সংরক্ষণ করা যায় এতে। ৮ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত এ চেম্বারে সবজি থাকে সজীব।
সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফজলুল বারী নিজেও কৃষক। হাওরে সবজি চাষ করেন। বিদ্যুতের অপ্রতুলতা আর অবকাঠামো না থাকায় নিজের চাষ করা সবজি সংরক্ষণ করতে পারতেন না। আবার দুর্গম যোগাযোগব্যবস্থার কারণে বাজারজাতকরণেও সমস্যা হতো। এতে লোকসান গুনতে হতো তাকে। এ অবস্থায় ইউটিউবে একটি ভিডিও দেখে ‘জিরো এনার্জি কুলিং চেম্বারের’ ধারণা পান ফজলুল। স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় নিজেই তা তৈরি করতে নেমে পড়েন। মাত্র ছয় থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা ব্যয়ে তৈরিও করে ফেলেন কুল চেম্বারটি।এরপর থেকে সুফল পাচ্ছেন ব্যাপক। তেমন কোনো খরচ ছাড়াই এই কুল চেম্বারে একসঙ্গে তিন থেকে চার মণ সবজি সংরক্ষণ করতে পারেন ফজলুল। ফজুলের বাড়ি উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের চিনাকান্দি গ্রামে। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বসতবাড়ির আঙিনায় ইট, বালু, প্লাস্টিকের পাইপ, কটনবাট ও একটি ১৮০ লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন পানির ট্যাংক দিয়ে এই কুল চেম্বার তৈরি করা হয়েছে। যার দৈর্ঘ্য ১৬৫ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ১১৫ সেন্টিমিটার এবং উচ্চতা ২ দশমিক ৬৮ সেন্টিমিটার।
এই কুলিং চেম্বার কীভাবে কাজ করে জানতে চাইলে ফজলুল বারী বলেন, ‘প্রথমে ট্যাংকির মধ্যে পানি ভর্তি করে দিতে হবে। এই পানি প্লাস্টিকের পাইপের ছোট ছোট ছিদ্র দিয়ে কটনবার চুইয়ে বালির স্তরে পৌঁছবে। এতে কুলিং চেম্বারের তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস নেমে আসে। এভাবে তাপমাত্রা কমিয়ে সংরক্ষণ করা হয় বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি।৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা খরচে এটি নির্মাণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই কুলিং চেম্বারে কোনো ধরনের বিদ্যুতের প্রয়োজন না হওয়ায় নির্মাণ খরচ ছাড়া সবজি সংরক্ষণে আর কোনো খরচ করতে হয় না।’এই যন্ত্র তৈরি প্রসঙ্গে সবজি চাষি ফজলুল বারী বলেন, ‘আমি ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও দেখছিলাম। হঠাৎ চোখের সামনে এ ধরনের যন্ত্রের একটি ভিডিও আসে। আমি তিন চারবার ভালো করে ভিডিওটা দেখেছি, কিন্তু এটা আমাদের উপকারে আসবে কি না তখন তা বুঝিনি।পরে ভিডিওটা উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে দেখাই। ভিডিওটি দেখার পর তিনি একদিন বললেন, ’চলেন আমরা সবাই মিলে এটা বানাই। এরপর থেকেই শুরু হয় এটির কাজ।’এ ধরনের যন্ত্রের কারণে কৃষকদের দুশ্চিন্তার সমাধান হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা হাওর এলাকার লোক ইকানো সবজি ফলাইলে চিন্তা থাকে যত তাড়াতাড়ি সবজি বাজারো ছাড়ি দেওয়ার। এর লাগি বালা দাম পাই না।কিন্তু এখন এই চিন্তা করন লাগে না। কারণ ইকানো সবজি ৭ থকি ৮ দিন সংরক্ষণ করা যায়। সবজি টাটকা থাকে। পরে আমরা ইটা বাজারো বিক্রি করি।’ এ ব্যাপারে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সামছুল আলম বলেন, ‘এটি হাওর এলাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখানে একসময় শুধু মাছ ও ধান চাষ হতো। এখন নানা জাতের সবজি চাষ করছেন কৃষকরা। কিন্তু উৎপাদিত সবজিগুলো সংরক্ষণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন কৃষকরা। ফজলুল বারী ইউটিউব দেখে বিনা খরচে সবজিগুলো তাপমাত্রা কমিয়ে ৭-৮ দিন সংরক্ষণ করার একটি যন্ত্র তৈরি করেছেন। তার এ কাজ দেখে এলাকার আরও অনেক কৃষক এমন কুলিং চেম্বার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন।’
বিএ/১২ জানুয়ারী