জকিগঞ্জ প্রতিনিধি:: ৫ম ধাপের নির্বাচনে জকিগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও মেম্বার পদপ্রার্থীগণ। শনিবার (৮ জানুয়ারি) রাত ৯টায় নগরীর পূর্ব জিন্দাবাজারে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানান চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো, মাহতাব হোসেন চৌধুরী।তিনি সকল প্রার্থীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে বলেন, ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে থানা নির্বাচন অফিসার ছিলেন সাদমান সাকিব। একই সাথে তিনি জকিগঞ্জ সদর, সুলতানপুর ও বারঠাকুরী ইউনিয়নের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বেও ছিলেন। জকিগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আরিফুল হক বারহাল ও কাজলসার ইউনিয়ন পরিষদের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন। সাদমান সাকিব ও আরিফুল হকের অধীনে ও তত্ত্বাবধানে বারহাল, কাজলসার, জকিগঞ্জ সদর, সুলতানপুর ও বারঠাকুরী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রকাশ্যে জালিয়াতি করা হয়েছে। সরকারী গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে সাদমান সাকিব ও আরিফুল হক মানুষের রায় নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন। তারা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে নিজেদের নির্ধারিত প্রার্থীদের বিজয়ী করতে কাজ করেছেন। তারা নিজেরা খাবারের প্যাকেটের নামকরে কেন্দ্রে কেন্দ্রে নিজেদের চুক্তিকৃত প্রার্থীর বিজয় সুনিশ্চিত করতে সিলমারা ব্যালট সরবরাহ করেছেন। তাদের এই অনৈতিককাজে সহযোগীতা করেছেন প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারগণ। সরকারী বিভিন্ন দফতরের দায়িত্বশীলরা। এর মাধ্যমে জনরায়কে গলাটিপে হত্যা করা হয়েছে। জালিয়াতি করে জনগণের মনোনীত প্রার্থীকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই আমরা অবিলম্বে জকিগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান ও মেম্বারপদে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি। বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনাকারী নির্বাচনী কর্মকর্তা সাদমান সাকিব ও আরিফুলকে সরকারী চাকুরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নির্বাচনের দিন নির্বাচনী অফিস থেকে উক্ত দুই কর্মকর্তা ব্যালটে নৌকা মার্কায় ও তাদের পছন্দের প্রার্থীর প্রতীকে সিল দিয়ে সাদমান সাকিব ও আরিফুল হক একটি কালো গাড়ি (ঢাকা মেট্রো ট-১৩-৭০২৮) গাড়িযোগে ৫টি ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে অফিসার হিসেবে যাতায়াত করেন। তারা নিজেদের সাথে সিলমারা ব্যালটগুলো প্রিসাইডিং অফিসারের সাহায্যে ব্যালটবাক্সে ডুকান। তারা বেলা তিনটা পর্যন্ত উক্ত ৫টি ইউনিয়ন পরিষদে রক্ষকের বেশে ভক্ষক হয়ে অবৈধভাবে সিলমারা ব্যালট ডুকিয়ে জনগণের রায়কে পাল্টে দিয়েছেন। তারা যখনই গাড়ি নিয়ে যখন যে কেন্দ্রে গেছেন তখন সে কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ ১০/১৫ মিনিট বন্ধ ছিল। এতে আমাদের ধারণা এই কর্মকর্তাদের সাথে প্রতিটি কেন্দ্রের অন্যান্য লোকজনও জড়িত রয়েছেন। পরে গোপন মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে সিলেটের পলিশ সুপার ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসারের দায়িত্বে থাকা সিলেটের জেলা প্রশাসকের হাতে নির্বাচনী কর্মকর্তা সাদমান সাকিব ও আরিফুল হক আটক হন। বিকেল পৌণে ৪টার দিকে আটককালে তাদের গাড়ীর ভিতর থেকে সিলমারা ও সিলছাড়া ৪শত মুড়ি বই ৪টি, সংরক্ষিত সদস্য নির্বাচনের সিল মারা ব্যালট পেপার, সিল ও ব্যালটবক্স সিলগালা করার জিনিস ৮টি, নগদ এক লক্ষ একুশ হাজার পাঁচশত টাকা =এবং ফেনসিডিলের খালি একটি বোতলসহ অন্যান্য দ্রব্যাদি জব্দ করা হয় এবং উক্ত দুই কর্মকর্তাকে আটক করে জকিগঞ্জ থানার মামলা (নং২(০১)২২) ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত জকিগঞ্জ সিলেট মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জোরালোভাবে দাবি জানানো হয়, এতোবড়ো অনিয়মের পরও এসব ইউনিয়নগুলোর মধ্যে অধিকাংশ ইউনিয়নে পরবর্তীতে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এমন ফলাফল বেআইনী, ভিত্তিহীন ও জনগণের প্রদত্ত ভোটের প্রতিফলন নয়। জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিসার যেখানে নিজেই নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং অফিসার ব্যালট কাস্টিং ও নির্বাচন প্রভাবিত করার অভিযোগে হাতেনাতে আটক হয়ে কারাগারে গেছেন সেখানে বেসরকারী ফলাফল ঘোষণা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। উক্ত ৫টি ইউনিয়ন পরিষদসহ জকিগঞ্জ উপজেলাধীন ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বাতিল করে পুননির্বাচনের দাবি উপজেলার প্রতিটি মানুষের, প্রত্যেক প্রার্থীর। লিখিত বক্তব্যে প্রার্থীদের অনেকেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে দাবি করেন, এমন ঘটনা নজীরবিহীন। সরকারী কর্মকর্তা কয়েকজন প্রভাবশালী প্রার্থীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নিজেদের নির্ধারিত প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য কাজ করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. হাসান আহমদ, বারঠাকুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. নাছির উদ্দিন নছির, মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর শাহ চৌধুরী হেলাল, কসকনপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. আব্দুর রাজ্জাক রিয়াজ প্রমুখ। এছাড়া বেশ কয়েকজন মেম্বার প্রার্থীও উপস্থিত ছিলেন।
বিএ/৯ জানুয়ারী