হিম হিম কুয়াশার আবরণে ষড়ঋতুর পরম্পরায় বাংলার প্রকৃতিতে আজ ফিরে আসে পিঠা পার্বণের উৎসব। বাঙালির ঘরে ঘরে পিঠা উৎসব শুরু হয় অগ্রহায়নের শুরু হতে। অগ্রহায়ন মানেই কৃষকের গোলায় নতুন ধান। কৃষাণির ব্যস্ততা দিনভর।নতুন চালের পিঠার ঘ্রাণে আমোদিত চারদিক। গ্রামজুড়ে উৎসবের আমেজ। পিঠা উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস, ঐহিত্য ও সংস্কৃতি। বাংলার কৃষিজীবী সমাজের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব নবান্ন। অনাদিকাল থেকে কৃষিসভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাম বাংলায় পালিত হয়ে আসছে এ উৎসব। পূর্বে অত্যন্ত সাড়ম্বরে উদযাপিত হতো নবান্ন উৎসব। সকল মানুষের সবচেয়ে অসাম্প্রদায়িক উৎসব হিসেবে নবান্ন উৎসব সমাদৃত ছিলো। অগ্রহায়ণের শুরু থেকেই আমাদের গ্রামবাংলায় চলে নানা উৎসব-আয়োজন। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। এ যেন সত্যি হৃদয়ের বন্ধনকে আরো গাঢ় করার উৎসব। এবছর শীত শেষে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন।
করোনা ক্রান্তি লগ্ন শেষে আবারো নতুন ভাবে জেগে ওঠার আহ্বানে আজ শুক্রবার (০৭ জানুয়ারি) ২২ সুবিদবাজারস্থ ব্লু বার্ড স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গণে প্রতিবারের মতো ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রুতি সিলেট আয়োজন করেছিল দিনব্যাপী পিঠা উৎসব ১৪২৮ বাংলা।
দিনব্যাপী আয়োজনে উদ্বোধন করেন সিলেটের মাননীয় জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম । প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শ্রুতি সদস্য সচিব সুকান্ত গুপ্ত। আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পরিতোষ ঘোষ, ফয়সাল মাহমুদ উপ পুলিশ কমিশনার এস এম পি,নিরাজ কুমার জয়সওয়াল-সহকারী হাই কমিশনার,ভারতীয় হাই কমিশন সিলেট,বিশিষ্ট উপস্থাপক এবং শব্দশিল্পী শারমিন লাকী, নজরুল গবেষক এবং শিল্পী ড. প্রদীপ কুমার নন্দী, সংগীতশিল্পী ইরাবতী মন্ডল, বাংলাদেশ আবৃত্তিশিল্পী সংসদের যুগ্ম সদস্য সচিব আবু নাসের মানিক,মুহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটন ,গৌতম চক্রবর্তী, সম্মিলিত নাট্যপরিষদের মিশফাক আহমেদ মিশু, রজত কান্তি গুপ্ত, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য শামসুল আলম সেলিম, রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী অনিমেষ বিজয় চৌধুরী শ্রুতি সমন্বয়ক সুমন্ত গুপ্ত প্রমুখ। বক্তারা বলেন শীতএলেই দিগন্তজোড়া প্রকৃতি হলুদ-সবুজ রঙে ছেয়ে যায়। পাকা ধানের পাশাপাশি প্রকৃতিকে রাঙিয়ে দেয় গন্ধরাজ, মল্লিকা, শিউলি, কামিনী, হিমঝুরি, দেব কাঞ্চন, রাজ অশোক, ছাতিম আর বকফুল। এই শোভা দেখে আনন্দে নেচে ওঠে কৃৃষকের মন। নতুন ধানের চাল দিয়ে তৈরি করা হয় পিঠা, পায়েস, ক্ষীরসহ হরেক রকম খাবার।
সোনালি ধানের প্রাচুর্য আর বাঙালির বিশেষ অংশ নবান্ন জীবনানন্দ দাশের কবিতায় ফুটে ওঠেছে অনন্য মহিমায়। কবি জীবনানন্দ দাশ তার কবিতায় লিখেছেন-
‘আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায়/ মানুষ নয়- হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে/ হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে/ কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল ছায়ায়।’ করোনা কাল শেষে ঋতুরাজ বসন্তের আগমনের বারতায় শীত জেঁকে বসেছে। মানুষ আবারো জেগে উঠছে শুদ্ধ সংস্কৃতির শুভ বারতায়।
করোনাকে জয় করে আবারো এগিয়ে যাবে সমাজ এবং সংস্কৃতি। দিনব্যাপী আয়োজনে সমবেত পরিবেশনায় অংশ নেন রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ,গীতবিতান বাংলাদেশ,দ্বৈতস্বর,পাঠশালা,ছন্দনৃত্যালয়,নৃত্যশৈলী,নৃত্যরথ,অন্বেষা, ভাবুক,মুক্তাক্ষর,ললিত মঞ্জরী,গীতসূধা,শ্রুতি আবৃত্তি বিভাগ,সুরসপ্তক,সংগীত নিকেতন,অনির্বান,সুরের ভূবন, থিয়েটার একদল ফিনিক্স প্রমুখ।
একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবু নাসের মানিক, মুহাম্মাদ মুজাহিদুল ইসলাম , দেবাশিষ চৌধুরী সংগীত পরিবেশন করেন লোক সংগীতশিল্পী পান্ডব চন্দ কানু,বাউল হীরামোহন তালুকদার,গৌতম চক্রবর্তী,প্রদীপ মল্লিক, ইকবাল সাই,লিংকন দাশ প্রমুখ। দিনব্যাপী পিঠা প্রতিযোগিতায় চল্লিশ টি স্টল অংশ নেয়। বাহারী রকমের পিঠার পসরা সাজিয়ে তারা বসেন।
পিঠা প্রতিযোগিতায় পুরস্কার বিতরনীতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পরিতোষ ঘোষ। দিনব্যাপী আয়োজন জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শেষ হয়।
এবিএ/০৭ ডিসেম্বর