সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক;: দুই যমজ মেয়ের লাশের পর এবার এলো মা শিমু আক্তারের মরদেহ।
নিখোঁজের ৫ দিন পর বুধবার দুপুরে শিমু আক্তারের লাশ সুগন্ধা নদীতে ভেসে ওঠে।
খবর পেয়ে শিমুর ভাই হান্নান গিয়ে তার বোনের লাশ শনাক্ত করেন। নদী থেকে উদ্ধার শিমুর লাশটি তার ভাই হান্নানের কাছে হস্তান্তর করে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন।
এদিকে শিমুর লাশ তার যমজ কন্যার কবরের পাশেই দাফন হবে। বাড়িতে প্রতিবেশীরা শিমুর কবর প্রস্তুত করছে। বৃহস্পতিবার সকালে দাফনের কাজও চলছে। এ সময়ও নেই কোনো কান্নার আওয়াজ। শিমুর মা দুলু বেগম (৫৫) ওই লঞ্চেই আগুনে পুরে আহত হয়ে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। বাড়িতে শিমুর বাবা আজিজ হাওলাদার ছাড়া আপন বলতে আর কিউ নেই। মেয়ের লাশের খাটিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে কিছুই বলার যেন ভাষা নেই তার মুখে।
জানা গেছে, বরগুনা তালতলী উপজেলার আগাপাড়া এলাকার আব্দুল আজিজের মেয়ে শিমু তার যমজ কন্যা লামিয়া-সামিয়া এবং মা দুলু বেগমকে (৫৫) নিয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে বরগুনা আসার জন্য এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে রওনা দেন। লঞ্চে উঠে শিমু তার বৃদ্ধ বাবা আব্দুল আজিজ হাওলাদারের কাছে ফোন করে এ খবর জানান।
পর দিন সকালে বৃদ্ধ বাবার কাছে খবর আসে ওই লঞ্চেই আগুন লেগেছে।
লঞ্চের ওই আগুনে আব্দুল আজিজের দুই নাতনি পুড়ে মারা গেছেন। লাশও পেয়ে দাফন করেন; কিন্তু তখন তার মেয়ে শিমু নিখোঁজ ছিল। স্ত্রী দুলু বেগম হাসপাতালের আইসিউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। এদিকে শিমুর স্বামী রবিউল দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, যমজ বোন লামিয়া-সামিয়ার কবরের পাশেই তার মা শিমুর কবর প্রস্তুত হচ্ছে। প্রতিবেশীরা যাওয়া-আসা থাকলেও বাড়িতে নেই কোনো কান্নার শব্দ।
এলাকার লোকজন জানান, রাতেই শিমুর অর্ধগলিত লাশ বাড়িতে আসে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব লাশটি দাফনের চেষ্টা চলছে।
সাংবাদিকদের দেখে আব্দুল আজিজ হু হু করে কেঁদে ওঠে বলেন, মোর নাতির (নাতনি) পোড়া লাশের পাশে মাইয়াডার লাশ। এই করুণ অবস্থা চোহের সামনে কেমনে সই। এ কেমন বিচার করল আল্লাহ। মুই কি ভুল হরছি আল্লাহ্র ধারে, যে হেই ভুলের এত বড় শাস্তি দিল মোরে। এহন মাইয়াডার মরা মুখটি খুলে দেন তার মুখটি শেষবারের মতোই দেখব।
তিনি আরও বলেন, যে সন্তানের লাশ বাবা কাঁধে নিয়ে কবরস্থানে গিয়ে দাফন করে, এ দৃশ্য না দ্যাখলে আম্মেরা বোঝবেন না। এই কষ্টের ভার একজন বাবা কেম্মে মেনে নেবে। মেয়েডার লাশ সামনে রেখে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
শিমুর ভাই হান্নান বলেন, প্রতিদিনই বোনের লাশের খোঁজখবর নিতে ঝালকাঠি সেই ঘটনাস্থলে যাইতাম। বুধবার জানতে পারি দুটি মহিলার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এমন সংবাদ পেয়ে ছুটে যাই গিয়ে দেখি আমার বোনের লাশটি পড়ে আছে মাটিতে। জেলা প্রশাসনের কাছে বোনের সব তথ্য দিয়ে আমার বোনের লাশ নিয়ে বাড়িতে আসি।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কাওসার হোসেন বলেন, নিহতদের পরিবারকে দাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
আইআর/ ৩০ ডিসেম্বর