হবিগঞ্জ প্রতিনিধি :: হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে বারবার অস্ত্র উদ্ধার করছে নিরাপত্তা বাহিনী। সোমবার ভোর থেকে এখানে অভিযান চালিয়ে আবারও অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) একটি দল।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান জানান, উদ্যানের ভেতর থেকে ১৫টি মর্টার শেল ও চারটি বাক্সভর্তি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।ভারতীয় সীমান্তে অবস্থিত এই সাতছড়ি বনাঞ্চলে এ ধরনের অভিযান ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা নতুন নয়।গত কয়েক বছরে এখানে বেশকিছু অভিযান চালিয়েছে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী। সেসব অভিযানে বেশ কিছু ভারী অস্ত্রও উদ্ধার হয়েছে। মোট নয়বার এই এলাকা থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।সর্বশেষ সোমবারের অভিযানে মাটির নিচে পুঁতে রাখা অবস্থায় ১৫টি রকেট প্রফেল গ্রেনেড, ২৫টি গ্রেনেড বুস্টার ও ৬টি টিনের বক্সে রাখা ৫১০ রাউন্ড লংরেঞ্জ অটোমেটিক মেশিনগানের বুলেট উদ্ধার করেছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট।এর আগে চলতি বছরের ২ মার্চ সাতছড়ি বনে অভিযান চালিয়ে ১৮টি কামান বিধ্বংসী রকেট শেল উদ্ধারের কথা জানায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
২০১৪ সালের ১ জুন থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন দফায় অভিযান চালিয়ে সাতছড়ি থেকে ৩৩৪টি কামানবিধ্বংসী রকেট, ২৯৬টি রকেট চার্জার, ছয়টি মেশিনগান, একটি বেটাগান, একটি অটোরাইফেল, প্রায় ১৬ হাজার বুলেট উদ্ধারের দাবি করে র্যাব।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাতছড়িতে অভিযান চালিয়ে ১০টি হাই-এক্সপ্লোসিভ ও ৪০ এমএম অ্যান্টি-ট্যাংক রকেট উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর ১৩টি রকেট লঞ্চারের শেলসহ কিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়।এ বছরের মার্চে সাতছড়িতে আরেকটি অভিযান চালিয়ে ১৮টি ট্যাংকবিধ্বংসী রকেট শেল উদ্ধার করে বিজিবি।
সোমবারের আগে ১৩ আগস্ট এ এলাকায় সর্বশেষ অভিযানটি চালানো হয়।বারবার একই জায়গায় অস্ত্রের এত বড় চালান কীভাবে আসছে সেটি নিয়ে আলোচনা চলছে।নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাচারের সুবিধাজনক জায়গা হওয়ায় এই অঞ্চল বেছে নিয়েছে পাচারকারীরা। এতে আন্তর্জাতিকভাবে কোনো রাষ্ট্র জড়িত রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের গন্তব্য ছিল ভারত।নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আব্দুর রশিদ বলেন, ‘বারবার এই জায়গাকে বেছে নেয়ার কারণ হতে পারে ভৌগোলিক অবস্থান এবং স্থানীয় মানুষের সমর্থন। সীমান্তের এপার-ওপারে একই জনগোষ্ঠী বসবাস করে। এ কারণে সীমান্তের ওপারে অস্ত্র নেয়ার জন্য এটি ভালো জায়গা।পাচারকারীরা মাটির নিচে অস্ত্র জমা রাখে। প্রতিবারই মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা অবস্থায় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। ফলে এই জায়গা দিয়েই যে অস্ত্র পাচার করা হয় সেটা নিশ্চিত। সীমান্তের দু’পারের মানুষ এতে জড়িত রয়েছে।’
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্র এমন একটি জিনিস, যা পাচার করতে হলে ওই জায়গার স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সমর্থন লাগবেই। এ কারণে বারবার ধরা পড়ার পরও তারা এখানেই অস্ত্র নিয়ে যাচ্ছে। তবে বারবার কেন করা হচ্ছে সেটি আরেকটু গবেষণার বিষয়।এই অস্ত্র কোথা থেকে আসছে, এটি চলাচলের রাস্তা খুঁজে বের করতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা অনেক বড়। এই অস্ত্র বাইরের কোনো দেশ থেকে এখানে আসে। এখানে অস্ত্রের পেছনে চোরাকারবারির পাশাপাশি কোনো একটি রাষ্ট্রের অবশ্যই পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে।’
বিএ/২৯ ডিসেম্বর