সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:: কৃষি নির্ভরশীল জেলা সুনামগঞ্জ। জেলার ৭৬ শতাংশ মানুষ বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল। বছরের এই সময়টাতে শুরু হয়ে যায় বোরো আবাদের প্রস্তুতি। ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যেই বোরো চাষাবাদ শেষ করার তাগিদে কাজ করছেন কৃষক-কৃষাণীরা। কারণ সুনামগঞ্জে প্রতিবছরই মার্চের মাঝামাঝি সময়ে আগাম বন্যার শঙ্কা থাকে। আর এই আগাম বন্যার শঙ্কা মাথায় নিয়েই কৃষকেরা চাষাবাদ করেন।
জানা যায়, বর্তমানে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় চলছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। তাই বোরো আবাদে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। অন্যদিকে, হাওর থেকে পানি নামতে বিলম্ব হওয়ায় বীজতলা তৈরিতে বিলম্বিত হয়। এত সবকিছুর পরেও বসে নেই হাওরাঞ্চলের কৃষক-কৃষাণীরা। তীব্র শীত উপেক্ষা করে পুরোদমে কাজ করছেন তাঁরা। কাক ডাকা ভোর থেকে কৃষকেরা মাঠে কাজ শুরু করেন। কেউ বীজতলা তৈরিতে কেউবা জমিতে হালচাষে ব্যস্ত থাকেন। অপরদিকে, চাষাবাদ করার সময়কালে দেখা দেয় শ্রমিক সংকট। বাড়তি অর্থ দিয়ে শ্রমিক আনতে হয়। এ বছর যোগ হয়েছে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধি। সব মিলিয়ে এবার উৎপাদন খরচও বাড়বে। কারণ চাষাবাদ এখন সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে হচ্ছে। জমিতে সেচ দেওয়া, ধান কাটা-মাড়াইও ডিজেল এবং কেরোসিনের ওপর নির্ভরশীল। এমন অবস্থায় উৎপাদন খরচ বাড়ার শঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা। ধানের দাম না বাড়লে তাঁদের লোকসানে পড়তে হবে। জেলার বিশ্বম্ভরপুরের রাধানগর গ্রামের কৃষক জুয়েল আহমদ বলেন, আমরা এ বছর চাষাবাদ করতাছি। কিন্তু খরছ বেশি হচ্ছে। তাই আমরা চাই ধানের ন্যায্য ধাম উঠুক। তবেই আমাদের উৎপাদন খরছ উঠে আসবে। সুনামগঞ্জের দরিয়াবাজার গ্রামের আব্দুল বাতেন বলেন, এবার নির্বাচনের কারণে আবাদের কাজ পিছিয়ে গেছে। তাই বাড়তি শ্রমিক ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে চাষাবাদ শুরু করেছি।
এ বিষয়ে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, আমরা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের কাছে দাবি জানাব যাতে ধানের মূল্য বাড়ানো হয়। যাতে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষকেরা লোকসানে না পড়েন। একই সঙ্গে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর জন্যও আমরা দাবি জানাব। চলতি বছর নির্বাচন ও হাওর থেকে পানি দেরিতে নামায় চাষাবাদে বিলম্ব হচ্ছে। এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ফরিদুল হাসান বলেন, হাওর থেকে পানি নামতে দেরি হলেও চাষাবাদে কোনো প্রভাব পড়বে না। সঠিক সময়েই চাষাবাদ শেষ হবে। উপপরিচালক আরও বলেন, চলতি বছর সুনামগঞ্জে ২ লাখ ২২ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিএ/২৬ ডিসেম্বর