November 22, 2024, 5:15 am

সংবাদ শিরোনাম :
সেইলরের নতুন পূজা কালেকশন সেজে উঠুন আপনিও রুদ্র নিহতের ঘটনায় সিলেটে মামলা, আসামি ৩ শতাধিক বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের পরিচয় আসাদুজ্জামান ও ওবায়দুল কাদেরর নিষেধাজ্ঞা দিতে আহ্বান মার্কিন কংগ্রেসের ৬ সদস্যের নোবেলজয়ী থেকে সরকার প্রধান কে এই ড. ইউনূসের বড়লেখাবাসীকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানালেন সমাজসেবক সাইদুল ইসলাম নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইক্রবাস খাঁদে”পুলিশেরে সাহসী ভূমিকায় বেঁচে গেল ১১ টি প্রান” সিলেটে কমছে বন্যার পানি, বর্ষায় বাড়ছে রোগবালাই আগামীকাল সিলেট ফিরছেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান বাজেটে বাড়ছে বিড়ি-সিগারেটের দাম প্রধানমন্ত্রী পদে মোদীকে সমর্থন নাইডু ও নীতিশের হুয়াওয়ের ‘উইমেন ইন টেক’ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা সিলেটে অবৈধভাবে আসা ২ কোটি টাকার ভারতীয় চিনি জব্দ সিলেট মহানগর যুবলীগের ৪ নং ওয়ার্ড কমিটি গঠন”সভাপতি পদে শাকিল নির্বাচিত চোরাচালান লাইনম্যান রুবেল আহমদ বেপরোয়া জমির ধান নষ্ট করে দিলো প্রতিপক্ষ: দিশেহারা কৃষক সিলেটে ইট ভাটা নিয়ে নজিরবিহীন কেঙ্ককারী বিশ্ব গাজায় হত্যাকাণ্ড প্রত্যক্ষ করছে, বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না : প্রধানমন্ত্রী সুজানগর ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের কমিটি গঠন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত মাওলানা লুৎফুর রহমানের মৃত্যু ”গুজব সংবাদ ফেসবুকে” বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বিজিবির নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) পদে নিয়োগ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জোরালো ভূমিকা নিতে হবে সচিবদের :প্রধানমন্ত্রীর সিলেটে বিজয় দিবসে গানের অনুষ্ঠানে সংঘর্ষ:নিহত-১ বইমেলা বাঙালি জাতিসত্তা দাঁড় করাতে সহায়ক : কবি নুরুল হুদা বন্ধুকে বিদেশ পাঠানোর সহযোগীতায় বন্ধু খুন দুর্নীতি-অনিয়ম র অভিযোগে ডৌবাড়ী প্রবাসী কল্যাণ ট্রাস্টের ৪ সদস্য বহিষ্কারের অভিযোগ ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী গোয়াইনঘাটের শীর্ষ কুখ্যাত চোরাকারবারী কালা মিয়া
মা–বাবার অসুখে পাশে থাকা চাই

মা–বাবার অসুখে পাশে থাকা চাই

Please Share This Post in Your Social Media

তিন সন্তান তিন মহাদেশে। নচিকেতার গানের মতো সবাই মস্ত প্রতিষ্ঠিত। জীবনের সব উপার্জন দিয়ে সন্তানদের মানুষ করেছেন। সত্তরোর্ধ্ব এক দম্পতির কথা বলছি। চাকরিজীবনে অন্যায় উপার্জন করেননি। সন্তানদের দেখার জন্য মন ব্যাকুল হলে মাঝেমধ্যে বিদেশে সন্তানদের কাছে যান। অবসর-ভ্রমণের পাশাপাশি টুকটাক চিকিৎসাও করিয়েছেন সেখানে। এই দম্পতির মন টেকে না দেশের বাইরে। সুস্থ থাকলে ভালোই চলে সব। সমস্যা হয় অসুস্থ হলে। দেশে অসুস্থ হয়ে দুজনের কেউ যখন হাসপাতালে ভর্তি হন—সন্তান ও নাতিদের জন্য ভীষণ ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। দুজনেই চোখের জল ফেলেন নীরবে। সাত সাগর তেরো নদী—এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে আকাশ পাড়ি হুটহাট চাইলেই তো দেওয়া যায় না। এই দম্পতির মনের গোপন ব্যথা গোপনেই থেকে যায়। সন্তানেরাও একধরনের অপরাধবোধে ভোগে।
এ তো গেল বাইরে সন্তান ও তাদের মা–বাবাদের কথা। কিন্তু সন্তানেরা দেশের মধ্যে থেকেও অনেক সময় অসুস্থ মা-বাবার দায়িত্ব নিতে চায় না। কে হাসপাতালে থাকবে, রাত জাগবে কে, চিকিৎসকের কাছে নেবে কে—এসব বিষয় তো আছেই। আরও রূঢ় বাস্তবতা হলো, চিকিৎসার খরচ নিয়ে যখন ভাইবোনে ঠেলাঠেলি, দায়িত্ব না নেওয়ার মনোভাব দেখা যায়।
এমনটা কখনোই কাম্য নয়। স্বজনের সুখে-অসুখে সবাই পাশে থাকবে, সেটাই প্রত্যাশিত। মা-বাবার অসুখে অসুস্থতায় সন্তান পাশে থাকবে না তো কে থাকবে। কিন্তু জীবনের বাস্তবতা যেন ‘ঝলসানো রুটি’।
এই যে বিপন্ন জীবন, কেমন করে তাকে সজীব ও প্রাণময় করে তোলা সম্ভব। কী উপায়? যে সন্তানের জন্য মা-বাবা জীবনের সর্বস্ব ব্যয় করেন, তাঁদের জন্য মন কাঁদবেই। বিপদে-অসুখে সন্তানকে মনে পড়বেই। এই আবেগ অনিরুদ্ধ। যে সন্তান মা-বাবার দুঃসময়ে পাশে থাকতে পারছে না, কেতাবি ভাষায় তাদের ‘কুসন্তান’ বলে আখ্যা দিলেই সমস্যার দায় মেটে না। সমস্যার জটিলতা যাপিত জীবনের গভীরে। একটি সম্পন্ন, সুন্দর জীবনের যে স্বপ্ন আমরা দেখি, সেটা তৈরি কোনো পণে্যন মতো নয়।  সমগ্র একটা জীবনের নানা ধাপে প্রস্তুতি দরকার।

মন যেমন কাঁদে বৃদ্ধ মা-বাবার। তেমনি মন কাঁদে মা-বাবার দুর্দিনে পাশে থাকতে না পারা সন্তানদেরও। আধা গ্লাস পানির যেমন অর্ধেকটা খালি, তেমনি অর্ধেকটা পূর্ণও বটে।
গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে এমন এক নারীর ব্যস্ত সন্তানের সঙ্গে একবার ফোনে কথা হলো। বিরক্ত হয়ে তাঁকে দুই কথা শোনানোর ইচ্ছা হচ্ছিল। সে বেচারাও কাঁদছিল। ঢাকার বাইরে এক উচ্চ বিদ্যাপীঠে চূড়ান্ত পরীক্ষা তাঁর সামনে। মায়ের কাছে ছুটে এলে সব আয়োজন মাটি। এদিকে মাকে দেখার কেউ নেই, সেটাও সত্য।
নগরসভ্যতা বড় নির্মম। আমাদের ক্রমেই বিচ্ছিন্ন করে। যুক্ত করে না। কিন্তু তাই বলে আমরা নিজেদের বদলাব না, বদলাতে সচেষ্ট হব না, তা হয় না। প্রেম, আবেগ, ভালোবাসা—এসব নিয়েই তো মানুষ। হয়তো মা-বাবা মুখে কিছু বললেন, কিন্তু মনের মধ্যে থেকে যাবে গভীর দুঃখ।

বৃদ্ধাশ্রম ও এক ঝুড়ি ফুল
সুইডিশ এক মনোবিদের কথা মনে পড়ছে। তিনি ইউরোপীয় বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে শ্লেষের সঙ্গেই বলেছিলেন, উন্নত বিশ্বে আমরা বুড়ো হলে অনেকেরই ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম। আর সন্তানের ভালোবাসার প্রতীক হলো বিশেষ দিনে এক ঝুড়ি ফুল; গুড উইশ কার্ড কিংবা ফলমূল।
তিনি উপমহাদেশের একান্নবর্তী সংসার ধারণার খুব তারিফ করেন। বলেন, পৃথক হওয়া ও বিচ্ছিন্নতাবোধ মানুষকে ক্রমেই বিপন্ন করে। দু-তিনজনকে নিয়ে খুদে সংসার মানে হোটেলে থাকারই নামান্তর। সেই হোটেল থেকেই ওল্ডহোম—এটা এই সংকীর্ণ সংসার ধারণার অনিবার্য পরিণতি।
ইউরোপীয় ওই মনোবিদের কাছে সংসার ধারণার নবতর সংজ্ঞা জেনে বেশ আপ্লুত হয়েছিলাম। তাঁর মতে, সেটাই প্রকৃত পরিবার, যা বৃদ্ধ, শিশু, তরুণ মধ্যবয়সী সবাইকে বিনি সুতার মালায় বেঁধে রাখে। যেখানে সবাই গুরুত্ব পায়। সম্মান, ভালোবাসা, মর্যাদা পায়। কেউ কাউকে ছেড়ে যায় না। ত্যাগ নয়, পৃথকতা নয়—সম্মিলনই হলো সংসার।
অবাক হয়ে ভাবছিলাম, উন্নত বিশ্ব যখন সংসার টুকরো করে বিপন্নতায় হাহাকার করছে। আর আমরা কি তখন সেই কথিত আধুনিক খুদে সংসার ধারণার জন্য হাপিত্যেশ করছি। নচিকেতা তাঁর বৃদ্ধাশ্রম গানের মাধ্যমে আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে সমস্যাটি দেখিয়েছেন। আমাদের সাহিত্যে, নাটকে, জীবনধর্মী রিপোর্টে সমস্যার বিশ্লেষণ কম হয়নি। তারপরও আমরা কতটা সচেতন!

মিটবে কীভাবে এ সমস্যা
পৃথকতা নয়; বরং সবাই মিলেমিশে থাকার মানসিকতা চাই। ভাঙনে সমাধান নয়, সুরাহা মিলনে। আত্মীয়তার বন্ধনকে প্রাণবন্ত করার চেষ্টা করতে হবে। একটি সংসারের মা-বাবা বৃদ্ধ বয়সে মনোযোগ, মর্যাদা, সম্মান প্রত্যাশা করেন। বয়সের ভারে কিছু রোগব্যাধি হয়। সে সময়ে সেবাযত্নের দাবি খুবই স্বাভাবিক। এটা তাঁদের অধিকার। ভাইবোন, মা-বাবা, চাচা, মামা, খালা, ফুপু ও তাঁদের সন্তানদের মধ্যে আন্তআত্মীয় বন্ধন যাদের যত মজবুত, সুখের দিনে যেমন তাতে ভাগাভাগি করা যায় আনন্দ। অসুখেও সহজ হয় ‘ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট’।
একান্নবর্তী ধারণা নগরজীবনে কঠিন বৈকি। ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্টের সীমিত আয়তনে বিশাল পরিবারের ভরণপোষণ সম্ভব না-ও হতে পারে। কিন্তু সবাই মিলেমিশে সুখে-দুঃখে কাছাকাছি থাকা সম্ভব। এ জন্য চাই ইচ্ছা ও সদ্ভাব। চাই ইতিবাচক কল্যাণ চিন্তা। আপনি
যখন স্বজনের কল্যাণ করছেন, অন্যজনও তা-ই করবে।
একটি সংসারের কোনো বয়স্কজন যখন অসুস্থ প্রথমে তাঁর সুচিকিৎসা দরকার। তখন সবাইকে সম্ভাব্য সহযোগিতা নিয়ে পাশে দাঁড়াতে হবে। আমি কেন যেতে পারব না, সে অজুহাত খুঁজলে চলবে না। অন্য কোনো ভাইবোন বা আত্মীয় কেন দায়িত্ব পালন করল না, বিপদের দিনে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ নয়। বিপদে, অসুখে, দুঃসময়ে প্রথম ও অগ্রাধিকার কর্তব্য হলো, নিজের সাধ্যমতো সমস্যা মোকাবিলায় সাহায্য করা। আমার দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক হলে তা অন্যকে উদ্বুদ্ধ করবে। আমার কাজ দায়িত্ব এড়ানো বা ছিদ্রান্বেষণ হলে তা অন্যকে নেতিবাচক করবে।
হাসপাতালে এমন পরিবারবন্ধন দেখে মুগ্ধ হয়েছি—বৃদ্ধ স্বজনকে সুস্থ করে তুলতে শুধু সন্তান নয়, পরিবারের অন্যরা সবাই পাশে দাঁড়িয়েছে। হুটহাট ভিড় করে চেহারা প্রদর্শন নয়, চিকিৎসাকর্মীদের পাশাপাশি রোগীর সেবা করেছেন সবাই পালা করে। এই মেলবন্ধনের প্রয়াস দরকার।
এখন দেশে মানুষের গড় আয়ুষ্কাল বেড়েছে। ষাটোর্ধ্ব স্বজনের সংখ্যা সব পরিবারেই বাড়ছে। এটা আশীর্বাদ। বয়স্কদের অবহেলা করা যাবে না। সম্মানের সঙ্গে সেবা দিতে হবে। তাতে থাকবে আন্তরিকতা ও ভালোবাসা। তাঁকে যেমন সংসার থেকে ছুটি দিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এলেই মানবিক দায়িত্ব পালন হয় না; তেমনি তাঁর অসুস্থতার দিনে তাঁকে হাসপাতালের ঠিকানায় পৌঁছালে দায় রক্ষা হয় না। একটি শিশু যেমন তার বেড়ে ওঠার দিনগুলোতে সবার ভালোবাসা চায়, তেমনি বয়স্করাও সবার ভালোবাসা ও মনোযোগ চান। বিশেষ করে নিজের সন্তানদের। এটি তাঁদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। রোগও দ্রুত সারে। তাই শরীরের পাশাপাশি মা-বাবা মনের খোঁজও নিতে হবে। ভেবে দেখুন, আপনি যদি আপনার মা বাবার যত্ন করেন তবে আপনার সন্তানেরাও এই শিক্ষা পাবে আপনার কাছ থেকে। নয়তো একসময় আপনিও হয়তো একাকী হাসপাতালে নীরবে চোখের পানি ফেলবেন।
স্থান কৃতজ্ঞতা: আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা।

সুলতানা আলগিন : সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা





Calendar

November 2024
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  



  1. © সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2017 sylhet71news.com
Design BY Sylhet Hosting
sylhet71newsbd