তাহিরপুর প্রতিনিধি: প্রতিটি মানুষ ক্ষুধা নিবারণের জন্য কায়িক বা মানসিক ভাবে কঠিন পরিশ্রমে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্থ যোগান দিয়ে খাবার সামগ্রী ক্রয় করে, শুধু সুস্বাদু আহারের জন্য। সেই সব সামগ্রীর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সবজি মরিচ। প্রতিনিয়ত যে সবজিটির প্রয়োজন। সেই সবজি বীজতলায় রোপণ করে, নিজের চাহিদা পূরণ করেও অবশিষ্ট মরিচের চারা বিক্রয়ের অর্থে লাভবান সবজি চাষীরা।
চাষের উপযোগী ভূমি না থাকলেও একদিকে মরিচ চারা রোপণে হয়েছে বিকল্প কর্মসংস্থান, নিজের চাহিদা মিটিয়ে চারা রোপণ কারীগন বিভিন্ন বাজারে ফেরি করে বিক্রয় করে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান তার সাথে অন্য চাষীকে এই চাষে উদ্বুদ্ধ করে চাষের পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
চারা ক্রয় কারীগন যাতায়াত না করেই, হাতে বগলে পেয়ে চাষের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। যার কারণে বাড়ি কিংবা পতিত ভূমিতে চারা রোপণ করতে ইচ্ছা শক্তি প্রয়োগ করতে বাধ্য হন। যাঁর মাধ্যমে দু দিকেই লাভবান, একদিকে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অন্য দিকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যোগ হচ্ছে রাজস্ব।
তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন খান এর ছেলে” আবুল কালাম খান পারুল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার, কৃষক বান্ধব সরকার, কৃষকের প্রতি আন্তরিক। তিনি আরও বলেন, কৃষি অধিদপ্তরের সদ ইচ্ছার উপর নির্ভর করে,ভাটির জনপদের চাষীদের রঙিন স্বপ্নের বাস্তবায়ন। ভাটির জনপদে বীজতলার উপযোগী ভূমি না থাকলেও, চারা ক্রয়ের মাধ্যমে রোপণ করলেও , বছরের ৫ মাস সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। শুধু চাষীদেরকে এই কাজে উদ্বুদ্ধ করণের প্রশিক্ষণ আর সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে সবজির ঘাটতি পূর্ণ করা সম্ভব। এটি বাস্তবায়ন হলে, সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান। কমবে বেকারের সংখ্যা ।টাংঙ্গুয়ার হাওরসহ ভাটির জনপদে প্রচুর পরিমাণ পরিত্যক্ত ভূমি আর জনবল রয়েছে। এটি কাজে লাগাতে পারলেই , চাষীদের রঙিন স্বপ্ন বাস্তবে রূপান্তরিত হবে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে, বাহিরেও রপ্তানি করে রাজস্ব ভাণ্ডারে অর্থ যোগান দেওয়া সম্ভব।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় উপজেলার শ্রীপুর বাজারে, ছুটে এসেছে বিভিন্ন স্থান হতে চারা বিক্রেতা, জমিয়ে উঠেছে চারা বিক্রয়ের হাট, ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে চলছে দর কষাকষি । শ্রীপুর বাজার , নতুন বাজারসহ বাদাঘাট বাজারে প্রতি দিনেই চারা বিক্রয় কারী গন দলবদ্ধ ভাবে এক সারি বসে চারা বিক্রয় করছেন। আর ক্রেতা গন চারা রোপণের স্বার্থে ভিড় জমাচ্ছেন।
কার্তিক মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হয়, বীজতলায় বীজ রোপণ, চলতে থাকে অগ্রহায়ণের মাস ১ম সপ্তাহ পর্যন্ত । এরপর চারা বিক্রয়ে চাষীরা ছুটে চলে হাঁটে বাজারে।
উপজেলার তরং গ্রামের মোবাশির আখঞ্জী বলেন, আমরা হাওর পাড়ের মানুষ সঠিক সময়ে বীজতলার পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় । বীজ বুনতে পারি না। যাঁর কারণে সবজি চারা ক্রয় বাধ্যতামূলক আমাদের জন্য নৌযানে । তবে দূর দূরান্ত থেকে চারা ক্রয় করতে গেলে যাতায়াত খরচের পরিমাণ বেড়ে যায়। যাঁর কারণে অনেকেই সবজি চাষে অনীহা প্রকাশ করে। চারা চাষীরা নিকটবর্তী হাঁটে আসার কারণেই,অনেকেই সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন । হাতের নাগালে পাওয়ার কারণে বেঁচে যায় যাতায়াতের বারতি খরচ।
উপজেলার লাকমা গ্রামের বীজতলার চাষী আক্কাস মিয়া বলেন, আমি ১০শতক ভূমির উপর বীজ বুনেছি। নিজের জমিতে যতটুকু প্রয়োজন তা রোপণ করে, অবশিষ্ট চারা বিক্রয় করে ১০হাজার টাকা আয় করেছি। যদি সরকার সঠিক সময়ে, বীজ ও সহায়তা দেন, তাহলে অধিক বীজ বুনে, চারা বিক্রয়ের মাধ্যমে নিজেরা স্বাবলম্বী হতে পারতাম ।আর যাঁদের বীজতলা নেই, চারা ক্রয় করে রোপণ করতে পারতেন। অন্য দিকে নিকটবর্তী হাঁটে চারা বিক্রয় করলে, সবজি চাষীর সংখ্যা বাড়বে। যাতায়াত খরচ পরিমাণে কমবে, সেই দিক বিবেচনা করে তারাও অধিক পরিমাণে রোপণ করবেন আমার বিশ্বাস।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী শরীর মিয়া বলেন, মরিচ এমনি এক সবজি, যেটি খাবারের সুস্বাদু যোগাতে প্রতিদিনেই মানুষের প্রয়োজনে লাগে । এই কাঁচা মরিচ খেলে ভিটামিন সি’র কাজ করে।
চিকিত্সকদের মতে, এটি শুকনোর পর মসলা হিসেবে ব্যবহার করি প্রতিদিন । এই সবজি চাষ করা প্রতি পরিবারের দরকার, কারণ নিজে চাষ করলে প্রকৃতির স্বাদ গ্রহণ করতে পারি। অন্যথায় বিভিন্ন প্রযুক্তির মেডিসিন ব্যবহারে প্রকৃতির স্বাদ বিলীন হয়ে যায় ।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রাপ্ত টাংঙ্গুয়ার টাংঙ্গুয়ার হাওর পাড়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক বলেন, স্বাধীনতার পক্ষের সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’ কৃষকের প্রতি আন্তরিক।
যাঁর কারণে কৃষক বিনা মূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক ,স্প্রে পাচ্ছে। যদি দায়িত্ব শীলরা আরেকটু সচেতন হতেন। সঠিক সময়ে কৃষকের হাতে বীজ যদি পৌচ্ছে দিতে পারতেন, তাহলে অধিক চাষাবাদ হত ভাটির জনপদে । আমি নিজে ৫শতক ভূমিতে চারা রোপণ করেছি। আশা করি ভাল ফলন হলে আমার চাহিদা মিটিয়ে ও কিছু বিক্রয় করতে পারব।
তাহিরপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা হাসান উর দৌল্লা জানান, কৃষক বান্ধব সরকার” কৃষকের প্রতি আন্তরিক, কৃষি ফসল অধিক ফলানোর জন্য কৃষকগনকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করেন। উপজেলার কৃষি অধিদপ্তর তার সাথে বিনা মূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক স্প্রে দিচ্ছে । তিনি আরও বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২২০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ করা হয়েছে। তবে মরিচের সাথে , রসুন, পেঁয়াজ, বেগুন, টমেটো, সীম, ইত্যাদি সবজি চাষ করছেন কৃষকরা ।
এবিএ/১৫ ডিসেম্বর