হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: টানা দুই দিনের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে হবিগঞ্জ জেলার ৮০টি ইটভাটায় প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়াও শ্রমিকদের অসল সময় কাটাচ্ছেন বসে বসে। গত রোববার রাত থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত থাকে। এক পর্যায়ে ইটভাটাগুলোতে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। শ্রমিকরা কাঁচা ইট পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখলেও শেষ পর্যন্ত পলিথিনগুলি নষ্ট হয়ে যায়। এদিকে, কয়লার উর্ধ্বগতির ফলে কয়লা ক্রয় করতে হিমশিম খাচ্ছে ভাটার মালিকরা। কয়লা বেশি মূল্য দিয়ে ক্রয় করলেও ইট সেই মূল্যে বিক্রি করতে না পারায় পথে বসার উপক্রম ইটভাটা মালিকদের।
সূত্র জানায়, মাত্র কয়েকদিন আগে ইটভাটার মৌসুম শুরু হয়েছে। কার্তিক মাসের প্রথম থেকে ইটভাটার কাজ শুরু হয়।
কাঁচা ইটকাটার স্থান শুকিয়ে পঠ তৈরি করে স্থান প্রস্তুত করে সব ইটভাটায় পুরোদমে ইটকাটা শুরু করে দিয়েছে। বেশ কয়েকটি ইটভাটায় আগুনও দেয়া হয়। তবে আগুন দিয়ে ইটভাটার মালিকরা পড়েছে বেকায়দায়। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির কারণে তারা চেম্বার দিতে পারছে না। রেজার লোকজন পঠ থেকে কাচা ইট এনে সাজাই দিতে না পারার কারণে আগুন বন্ধ হওয়ার উপক্রম। প্রতিটি ভাটায় প্রায় দুইশত শ্রমিক কাজ করছে। শ্রমিকদের কাজ না থাকায় মালিকরা পড়েছে মোটা অংকের লোকসানে। কাজ ছাড়াই তাদেরকে দিতে হচ্ছে সাপ্তাহিক খোরাকী।
সোমবার বিকেলে গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মধ্যে জেলার বেশ কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত ইটভাটা ঘুরে দেখা যায়, ইট তৈরির মৌসুমের শুরুতেই বৈরি আবহাওয়ার কারণে মালিক ও শ্রমিকরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। বেশ কিছু মেইল শ্রমিকরা বৃষ্টির কারণে কাজ করতে না পারায় বাড়িতে চলে গেছে। বৃষ্টির কারণে আগুন মিস্ত্রীরা টাইম মারতে পারছে না। অনেক ইঠভাটায় চেম্বার ভেঙে যাওয়ার কারণে আগুন নিয়ে সামনে যেতে না পারায় আগুন বন্ধ হওয়ার পথে।
ইটভাটার মালিকরা জানান, প্রত্যেক মৌসুমে এসব ভাটায় কয়েক দফায় ইট তৈরি করা হয়। সে অনুযায়ী প্রতিটি ভাটায় বছরে ৫০ থেকে ৫৫ লাখ ইট তৈরি হয়। অধিকাংশ ইট ভাটায় প্রথম দফায় ইট তৈরি করা হচ্ছে। তারা জানান, এক হাজার ইট তৈরিতে খরচ হয় প্রায় পাঁচশত টাকা এবং এক লাখ ইট তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। বেশ কয়েকদিন ধরে ভাটা মালিকরা কাঁচা ইট তৈরি করে রোদে শুকিয়ে তা পুড়িয়ে পাকা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু চারদিনের বৃষ্টির কারণে পানিতে ভিজে সদ্য তৈরি কাঁচা ইট ভেঙে নষ্ট হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এতে ৮০টি ইটভাটা মালিকের প্রায় ৪ কোটি কাঁচা ইট ধংস হয়ে গেছে।
ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি দুলাল মিয়া বলেন, আকস্মিক গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ও ভারি বৃষ্টিতে ইটভাটা মালিকদের চরম ক্ষতি হয়েছে। আমাদের ৮০টি ইটভাটায় প্রায় ৪ কোটি কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে। কম করে হলেও প্রতিটি ইটভাটায় ৩ লক্ষ মাল নষ্ট হয়েছে। পঠ থেকে নষ্ট মাল সরাতে আরও খরচ হবে প্রায় ৩ কোটি। সব ভাটায় মিলিয়ে গড়ে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতিতে পড়েছি আমরা। তিনি আরো বলেন, সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ না পেলে অনেকেই আর ইট তৈরি করতে পারবেন না।
এবিএ/৭ ডিসেম্বর