এসবিএন ডেস্ক: জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সেবা নিতে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যালয়ে (ন্যাশনাল আইডি রেজিস্ট্রেশন উইং) গিয়ে দালালদের কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন অনেকে।
এই দালালদের সঙ্গে এনআইডি উইংয়ের কিছু কর্মচারীও জড়িয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই অভিযোগ স্বীকার করেই বলেছেন, ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
কয়েকদিন আগে আগারগাঁওয়ে এনআইডি উইংয়ে গিয়ে ভিড়ের সঙ্গে দালালদের আনাগোনা দেখা যায়।
সেখানে বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নওরীন জাহানকে (ছদ্মনাম) পাওয়া যায়, তাকেও দালালরা ধরেছিল।
২০০৭ থেকে দেশের বাইরে ছিলেন নওরীন। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে তিনি দেশে ফেরেন। দেশে ফেরার পর তিনি পড়েন জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত জটিলতায়।
২০০৮ সাল থেকে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের পাশাপাশি নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এ পরিচয়পত্র এখন ব্যাংক একাউন্ট খোলা, পাসপোর্ট তৈরিসহ নানা জরুরি কাজে ব্যবহার হচ্ছে।
জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা দেওয়া হয় আগারগাঁওয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভবনে ইসির এনআইডি উইং থেকে।
নওরীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাইরে থাকার কারণে আমার ন্যাশনাল আইডি কার্ড করা হয়নি। এজন্য এলাম।”
আগেও একদিন এসেছিলেন এই শিক্ষক, কিন্তু ভিড় দেখে ফিরে যান।
“আবার এলাম আজ । কিন্তু ভিড় আগের মতোই, আর সবাই ব্যস্ত। এর মধ্যে একজন লোক এসে আমাকে জিজ্ঞেস করল, কী কারণে এসেছি। সে নিজেকে বলল অফিসের লোক।
“আমি আমার সমস্যার কথা জানালাম। অতিদ্রুত জাতীয় পরিচয়পত্রের ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলে সে কাগজপত্রের ফটোকপি এবং নগদ এক হাজার টাকা চায়। আমি বল্লাম, এক হাজার টাকা কেন লাগবে? সে বলল, এটা দিলে একদিনের মধ্যে আইডি কার্ড পাওয়া যাবে, না দিলে তিন মাস অপেক্ষা করতে হবে।”
ওই ব্যক্তির কথায় সন্দেহ হলে নওরীন পরে খোঁজ নিয়ে জানেন, আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে না।
বেসরকারি এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসিফ উজ জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি দালালদের খপ্পরে পড়েছিলেন হারিয়ে যাওয়া পরিচয়পত্র নতুন করে তুলতে গিয়ে।
“আইডি কার্ড হারানোর পর জিডির কপি নিয়ে আমি অফিসে গেলাম। সেদিন প্রচুর ভিড় ছিল। অফিসের একজন পিওনকে জিডির কাগজ দেখিয়ে জানতে চাইলাম, কার কাছে যেতে হবে। সে আমাকে বলল যে নিচে একজন লোক আছে, তার সঙ্গে দেখা করলে সে-ই সব করে দেবে।”
“নিচে যাওয়ার পর ওই লোক আমার ফরম পূরণ করে দিল, কোথায় ফি জমা দিতে হবে বলে দিল, তারপর ১০০ টাকা নিল আমার কাছ থেকে। ১০০ টাকা বড় কথা না। আমার কথা হল, ফরম তো আমাকে অফিস থেকেই দেওয়া যেত। দালালের কাছে যেতে বলা হল কেন?”
এসব অভিযোগ নিয়ে এনআইডি উইংয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশেই ব্যবসা করে যাচ্ছে এই দালালরা।
“এখন তো এটা অনেক কমে এসেছে। মাস খানেক আগে অফিসের বাইরে ফুটপাতের উপর চেয়ার- টেবিল নিয়ে দালালরা বসে থাকত। নানা ছলছুতোয় সাধারণ মানুষের কাছ থেকে পয়সা হাতিয়ে নিত। আর এদের কাছ থেকে কমিশন নিত অফিসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী।”
এনআইডি উইংয়ের পরিচালক (অপারেশন্স) সৈয়দ মোহাম্মদ মুসার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এসব অভিযোগ তার কানেও এসেছে।
“অফিসের কিছু অসাধু ব্যক্তি এই দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলে, এটাও সত্য। তবে আমরা কিছু কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
দালালদের উচ্ছেদ করতে সম্প্রতি অভিযান চালানো হয় জানিয়ে তিনি বলেন, আর কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তার পরিকল্পনা চলছে।
“তবে অফিসের ভেতরে কারা এদের সঙ্গে যুক্ত, এটা বের করা সত্যিই কঠিন। তারপরও আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
জানুয়ারি পর্যন্ত এনআইডি দেওয়া হচ্ছে না- এমন অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উইংয়ের পরিচালক আনোয়ার হোসেন জানান, যেসব এলাকায় ডিসেম্বরে পৌর নির্বাচন হচ্ছে সেখানে ভোটার হওয়া সংক্রান্ত সব কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে এর বাইরে যে কেউ ভোটার হতে পারবেন।
“আর যারা ২০১৩-১৪ সালে ভোটার হয়েছেন, কিন্তু পরিচয়পত্র পাননি, তাদের স্মার্টকার্ড দেওয়া হবে। এ জন্য আপাতত তাদের এনআইডি দেওয়া হচ্ছে না। জরুরি প্রয়োজনে আবেদন করে তারাও এনআইডি নিতে পারছেন। জানুয়ারিতে নতুন ভোটার হিসেবে যারা তালিকাভুক্ত হচ্ছেন, তারাও এনআইডি পাবেন পরে।”
প্রবাসী যে কেউ দেশে এসে যে কোনো সময় নির্ধারিত ফি ও প্রয়োজনী কাগজ দয়ে ভোটার হতে পারবেন বলে জানান এ কর্মকর্তা।
এছাড়া হারানো বা নষ্ট এনআইডি‘র ডুপ্লিকেট সংগ্রহ ও তথ্য সংশোধনের কাজ গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে নির্ধারিত ফি দিয়ে করতে হচ্ছে। কেন্দ্রীয়ভাবে সেবা চালুর পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়েও চলছে।
দেশে বর্তমানে ৯ কোটি ৬২ লাখের বেশি ভোটার থাকলেও প্রায় অর্ধকোটি নাগরিকের হাতে এখনো এনআইডি পৌঁছে দিতে পারেনি ইসি। এর মধ্যে জানুয়ারিতে যোগ হচ্ছে আরও ৪৫ লাখ নতুন ভোটার।