ছাতক প্রতিনিধি:: ছাতকে নিখোঁজের তিনদিন পর ধানক্ষেত থেকে খুশি বেগম (১৫) নামের এক কিশোরীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের ১৬ দিন পর ওই ঘটনার রহস্য উন্মোচনসহ মূল অভিযুক্ত মো. মহিউদ্দিনের (২২) কে আটক করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
শনিবার (০৪ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।
সিআইডি জানায়, সিলেটের ইউসুফ নামের এক লন্ডন প্রবাসীর সঙ্গে প্রায় দুই বছর আগে পারিবারিকভাবে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খুশি বেগমের বিয়ে হয়। স্বামীর অবর্তমানে একই এলাকার মো. মহিউদ্দিনের সঙ্গে খুশির প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে খুশি তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন মহিউদ্দিন। এ উদ্দেশ্যে রাতে কৌশলে বাড়ি থেকে ডেকে পার্শ্ববর্তী ধানক্ষেতে নিয়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যান মহিউদ্দিন।
তিনি বলেন, ১৭ নভেম্বর নিখোঁজ হয় খুশি বেগম। নিখোঁজের চারদিন পর স্থানীয়রা ২১ নভেম্বর গ্রামের একটি ধানক্ষেতে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় মরদেহ দেখতে পেয়ে তার বাড়িতে খবর দেন। তাৎক্ষনিকভাবে বাড়ির লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহটি নিখোঁজ খুশির বলে শনাক্ত করেন। এরপর স্থানীয় থানা পুলিশ মরদেহের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা কবির মিয়া অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে ছাতক থানায় হত্যা মামলা করেন।
ঘটনাটি দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে ও বিভিন্ন প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বেশ গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হলে সিআইডি ছায়া তদন্ত শুরু করে। হত্যার ঘটনাটি কেন ও কিভাবে সংঘঠিত হয়েছে, ঘটনায় কে বা কারা জড়িতসহ বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর নিহতের পরিবার, ঘটনাস্থল ও আশপাশ এলাকার বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করে সিআইডি।
বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, সিলেট শহর এলাকার ইউসুফ নামের এক লন্ডন প্রবাসীর সঙ্গে প্রায় দুই বছর আগে পারিবারের সম্মতিতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খুশি বেগমের বিয়ে হয়। স্বামীর অবর্তমানে একই এলাকার মহিউদ্দিনের সঙ্গে খুশি বেগমের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মহিউদ্দিন খারগাঁও হাফিজিয়া মাদ্রাসা থেকে ২০১৮ সালে হেফজ্ পাশ করে দুই বছর বেকার ছিলেন।
সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ক্লুলেস এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মহিউদ্দিনের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়। পরবর্তীতে এলআইসির একটি চৌকস টিম মহিউদ্দিনকে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থানাধীন কেডিএস এলাকা থেকে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার মহিউদ্দি স্বীকার করেছেন, তার সঙ্গে নিহত খুশি বেগমের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বেশ কিছুদিন ধরে খুশি তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল। মহিউদ্দিন বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের সম্পর্কের বিষয়টি পরিবার ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে প্রকাশ করার হুমকি দেয় খুশি। তখন মহিউদ্দিন ১৭ নভেম্বর রাতে খুশিকে কৌশলে বাড়ি থেকে ডেকে পার্শ্ববর্তী ধানক্ষেতে নিয়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
এক প্রশ্নের জবাবে মুক্তা ধর বলেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আর কেউ জড়িত কিনা এবং এই কাজে পরোক্ষভাবেও কেউ সহযোগিতা করেছে কিনা এসব বিষয় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে।
এবিএ/ ৪ ডিসেম্বর