অজয় বৈদ্য অন্তর:: বাঙালি, দেশাত্মবোধে তার মাথা উঁচু। গর্বিত সে লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে। আপসহীন সে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে। প্রজন্মের পর প্রজন্মের বেড়ে ওঠা তার একাত্তরের রক্তলেখা ইতিহাস নিয়ে। সেই স্বাধীন দেশেই মানুষের মুখে বাংলা হরফে লেখা- ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’! তার উপরে নিজ দেশের মানুষকে সরাসরি পাকিস্তান সমর্থন করাটা সত্যিই বড্ড পীড়া দিয়েছে।
নিজের দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে যারা ‘পিয়ারে পাকিস্তান’ নামে গলা ফাটাচ্ছে, তারা আসলে নিজেদের পরিচয়হীনতারই পরিচয় দিচ্ছে। একটি বিপথে যাওয়া প্রজন্মের এই প্রতিচ্ছবি দেখে হৃদয় আজ আহত। বাংলাদেশিরূপী কিছু মানুষের হাতে পাকিস্তানের পতাকা দেখে আজ ভাষাহীন। ঠিক তেমনী ক্রিকেটাররা স্তম্ভিত চেনা মিরপুরের অচেনা রূপ দেখে।
আমার তো দেখে মনে হচ্ছেলো এ যেনো পাকিস্তানেই খেলা চলছে। কি করে এতো সাহস পায় দর্শকরা! গ্যালারীতে প্রবেশ করার জন্য সামান্যতম বিধি নিষেধ তখন আরোপ করা উচিত ছিলো। আগে থেকে সতর্ক থাকলে পাকিস্তানের সাপোর্টাররা এতা সাহস করতো না।
পাকিস্তান দল ঢাকায় আসার পর থেকেই মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের প্রধান ফটকের সামনে কিছু উৎসুক জনতার ভিড় বেড়েছে। যারা কিনা পাকিস্তান দলের বাস দেখলেই হাত নাড়াতে শুরু করে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে আসা রাকিব নামের এক কিশোর । কি সুন্দর নির্লজ্জের মতো কিছু লোক বুক ফুলিয়ে বলছিল- ‘পাকিস্তান দলের খেলোয়াড়দের আমাদের ভালো লাগে। তারা বাংলাদেশে এসেছে, তাই আমি আনন্দিত।’
দুঃখজনক হলো, তাদের কাছে বাংলাদেশি সত্তা বলে কিছু নেই। কিন্তু তাদেরও যেন ছাপিয়ে গেছে বাংলাদেশিরূপী পাকিস্তানি দর্শক, যা দেখে মাশরাফি তার ফেসবুকে লিখেছেন- ‘ তাদের পতাকা তাদের দেশের মানুষ ছাড়া আমাদের দেশের মানুষ ওড়াবে, এটা দেখে সত্যিই কষ্ট লাগে। যে যাই বলুক, ভাই দেশটা কিন্তু আমাদের।’
শুধু মিরপুরের গ্যালারিতে বাংলাদেশিদের হাতে পাকিস্তানি পতাকা দেখাই নয়, একাডেমির মাঠে পাকিস্তান দলের অনুশীলনেও সে দেশের পতাকা টানানোর মধ্যে অনেকেই আপত্তি তুলেছেন। এবারের টি২০ বিশ্বকাপ থেকেই বাবর আজমরা এটা করছেন। মিরপুরে এসেও সেটাই করেছিলেন। কেননা, ভিন্ন দেশের পতাকা টানাতে হলে সংশ্নিস্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়।কিন্তু প্রথম দিন সেটা নেওয়া ছিল না বাবর আজমদের।
তথাপি দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার পর দেশের বিজ্ঞজনের নাক কান ও গলা এখন সজাগ হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (২১ নভেম্বর) মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন নিজের দেশের মাটিতে পাকিস্তানের সমর্থন শোভনীয় নয়। এবং পাকিস্তান দলকে যারা সমর্থন করবে তাদের আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মিডিয়ায় সাংবাদের ভিত্তিতে এখন যার যার মতো বিবৃতি দিচ্ছেন কিন্তু তার আগে এরা কোথায় ছিলেন। দেশের বড় বড় পদ কর্তারা ঘটনা ঘটার পূর্বে কিছু ভাবেন না। আজ যখন পাকিস্তানের দালালরা নাকের ডগায় মুলা দেখাচ্ছে খুব ভালো লাগছে কি এসব নোংরামী দেখতে? এভাবে চললে আগামী প্রজন্মের পথ অবশ্যই অন্ধকার দেখতে পাচ্ছি।
বাংলাদেশি নামের কিছু ‘পাকিস্তানি দর্শকের কুৎসিত দৃশ্যটা দেখে মনে হলো কে যেনো বুকে পাহাড় দিয়ে ঢিল মেরেছে’। এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি যাদের জন্য হয়েছে। তাদের শাস্তির আওতায় আনা খুব জরুরী। যদিও ঘটনা ঘটার পূর্বে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের এ সতর্ক দৃষ্টি রাখা উচিত ছিলো।
এ দেশ আমাদের সবার।এদেশে কোনো পাকিস্তানের দালল বেঁচে থাকতে পারে না। সবার আগে দেশ ও মা পরে অন্য দেশ । আপনাদের ছেলে সন্তানদের দেশ প্রেমের শিক্ষা দিন। বর্তমানে যে ধরণের অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছে দেশে। তা দেখে বড়ই আশঙ্কা হচ্ছে মনে। যাদের মধ্যে দেশ প্রেম নেই এরা মানুষ নামের কলঙ্ক। দেশ প্রেমই ধর্মের প্রধান অঙ্গ।
এবিএ/২২ নভেম্বর