সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:: ঘটনার ২৭ দিন পরও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে পারেন নি আমবাড়িবাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কৃপাসিন্ধু রায় ভানু। গত ২৩ অক্টোবর মহানবী (সা.) কে নিয়ে ওই ব্যবসায়ীর এসএসসি পরীক্ষার্থী সন্তান কৌশিক রায়ের (১৬) উপর কটুক্তির অভিযোগ উঠে। এরপর এলাকার মুসল্লীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে তিনি নিজ সন্তানকে থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন।
এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর হস্তক্ষেপে আমবাড়িবাজারে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু ঘটনার ২৭ দিন পর শনিবার (২০ নভেম্বর) এলাকাবাসীর উদ্যোগে আয়োজিত এক বৈঠক থেকে অভিযুক্ত কৌশিক রায়ের বিচার পূর্ববর্তী দোকান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়।
জানাযায়, সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের আমবাড়ী বাজারের ব্যবসায়ী কৃপাসিন্ধু রায় ভানুর এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলের ফেসবুক আইডি থেকে মহানবী (সা.) কে নিয়ে কটুক্তির অভিযোগ উঠে। এর পর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে বাজারের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। পরদিন ২৪ অক্টোবর এলাকাবাসীর উদ্যোগে হাজারো মানুষের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে এলাকাবাসীর নির্দেশক্রমে কৌশিকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বাজারে অবস্থিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ও অংশগ্রহণ করেন। এরপর থেকে বাজারে অবস্থিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলেও কৌশিকের পিতা কৃপাসিন্ধু রায় ভানুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
এদিকে, ব্যবসায়ী ভানুবাবুর বড় ভাই করুনাসিন্ধু রায় বাবলু (৫২) কৌশিকের চিন্তায় গেল ১৪ নভেম্বর হার্টএ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেন। ভানুবাবুও ঘটনার পর থেকে গৃহবন্দী অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। কৌশিকের দাদা ক্ষিতিন্দ্র মোহন রায় (কৃপাসিন্ধু রায় ভানুর পিতা) দীর্ঘদিন থেকে শয্যাশায়ি। বর্তমানে তাঁর শারীরিক অবস্থা আরো শোচনীয়। তার উপর ২৭ দিন থেকে বন্ধ রয়েছে ওই পরিবারের একমাত্র জীবীকার উৎস ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে শনিবার (২০ নভেম্বর) এলাকাবাসীর বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। অধিকাংশ মানুষ বন্ধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেবার পক্ষে মত প্রদান করলেও কিছু সংখ্যক উশৃঙ্খল মানুষ তাতে বাধাঁ প্রদান করেন। এই অবস্থায় বৈঠক থেকে আগামী ২০ ডিসেম্বর পরবর্তী মিটিং পর্যন্ত দোকানপাট বন্ধ রাখার সিদ্বান্ত দিয়েই বৈঠকটি শেষ হয়।
এ ব্যাপারে মন্তব্য জানতে চাইলে অভিযুক্ত কৌশিকের বাবা কৃপাসিন্ধু রায় ভানু ভয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হন নি।
এ ব্যাপারে মন্তব্য জানতে চাইলে অভিযুক্ত কৌশিকের বিচার দাবিতে গঠিত পরিষদের সভাপতি এবং শনিবার অনুষ্ঠিত বৈঠকের সভাপতি মাওলানা আবুল ফজল বলেন, আমি এ ব্যাপারে তেমন কিছু জানি না আপনি তাহের মহাজন সাহেবের সাথে কথা বলেন। আপনি তো সভায় সভাপতিত্ব করেন-তাহলে সিদ্বান্তের বিষয়ে কিছু কি জানেন না ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সভায় কিছু সংখ্যক উশৃঙ্খল মানুষের কারণে আমরা দোকান বন্ধ রাখার পক্ষে মত দিয়েছি। তার মানে এরা কি এলাকার মুরুব্বীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘটনার শুরু থেকেই আমরা ইসলামের মূল মর্মবানী তোলে ধরার মধ্য দিয়ে এলাকাবাসীকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু কিছু মানুষ চায় না- আদালতের বিচারের আগ পর্যন্ত তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলে দেওয়া হোক।
অভিযুক্ত কৌশিকের বিচার দাবিতে গঠিত পরিষদের সহ-সাধারণ সম্পাদক তাহের মহাজন বলেন, সাধারণ মানুষ এই ব্যাপার টা নিয়ে এখনও উত্তেজিত। যদি আবার কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে এ সকল কিছু চিন্তা করে দোকান খোলা হয় নি। আমরা চেয়েছিলাম যাতে দোকান খুলে দেয়া হয়। তবে কিছু মানুষের তোপের মুখে আমরা দোকান খুলে দিতে পারি নি। এ নিয়ে আগামী ২০ ডিসেম্বর আবার বৈঠক রয়েছে। ঐ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে কি করা যায়।
এলাকাবাসীর সিদ্বান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে নবনির্বাচিত মান্নারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইজ্জত আলী তালুকদার বলেন, দোকান বন্ধ নিয়ে আমরা বসেছিলাম। কিন্তু নেতৃত্ব স্হানীয়ওরা সবাই আমরা দোকান খোলার ব্যাপার একমত হয়ে ছিলাম কিন্তু গ্রামের কিছু সাধারণ মানুষ দোকান না খোলার জন্য বলে। এ নিয়ে বৈঠকে বাকবিতন্ডা হয় পরে আমরা এক মাসের সময় নেই। এক মাস পর কিছু উত্তেজনা কমলে আমরা দোকান খুলে দেয়ার চেষ্টা করব। যাতে দোকান খোলার পর তাদের দোকানে কোনও হামলা না হয়।
দোয়ারাবাজার থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেবদুলাল ধর বলেন, বৈঠকের সিদ্বান্তটি আমার কানে পৌছেছে। এরকম সিদ্বান্ত এলাকাবাসী নিতে পারেন না। পুলিশ সুপার মহোদয়ের সাথে কথা বলে এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাংশু সিংহ বলেন, ঘটনাটি আমিও শুনেছি। বিস্তারিত জানার পর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এবিএ/২০ নভেম্বর