সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক:: এক-দুজন নয় সাড়ে বারোশ চাকরিপ্রত্যাশি ব্যক্তি প্রতারিত হয়েছেন তার কাছে। চাকরি দেওয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে হাতিয়েছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। প্রতারিত কয়েকজনের অভিযোগ পেয়ে শেষমেশ ধরা পড়েছেন র্যাবের জালে।
সালমা আক্তার মুন্নি নামের কথিত এই চাকরিদাতা নারীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। ঢাকার খিলক্ষেতে তার কথিত কোম্পানি এনএইচ সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেডের অফিস থেকে জব্দ করা হয়েছে একটি কম্পিউটার, মোবাইল ফোনসেট, ভুয়া নিয়োগপত্র, ভিজিটিং কার্ডসহ অনলাইনে দেওয়া বিজ্ঞাপনের বিভিন্ন স্ক্রিপ্ট।
বুধবার সকালে সালমা আক্তার মুন্নিকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিং করে র্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন জানান। ভুয়া প্রতিষ্ঠান খুলে সাড়ে বারোশর বেশি চাকরিপ্রত্যাশীর কাছ থেকে সালমা বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে র্যাবের ভাষ্য।
এসএসসি পাসের পর চাকরি খোঁজা এক তরুণী অনলাইনে সালমার কথিত প্রতিষ্ঠানের চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে সিভি পাঠান। পরে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ফোন করে তাকে বলা হয়, তিনি প্রাথমিকভাবে কলসেন্টারে চাকরির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। এজন্য তাকে ভাইবাতে আসতে বলা হয়।
তাদের কথা অনুযায়ী ওই তরুণী খিলক্ষেতের সেই অফিসে গেলে তার কাছ থেকে আবেদন করা বাবদ পাঁচশ টাকা দিতে বলা হয়। এরপর চাকরির নিয়োগপত্র দিয়ে আরও সাড়ে তিনহাজার টাকা নেওয়া হয়। তবে পরবর্তীতে চাকরি না পেয়ে প্রতারিত হয়েছেন বুঝে অভিযোগ দেন র্যাবের কাছে। ওই তরুণীর মতো প্রতারিত আরো অনেকের অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে র্যাব।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন জানান, অনলাইনে সাবেক আর্মি অফিসারের বডিগার্ড, বাসা-বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীসহ বিভিন্ন পদে একটি চক্র চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছিল। তারা আকর্ষনীয় বেতনের প্রলোভনে চাকরি প্রত্যাশী সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করছিল। এমন ঘটনায় অনেকে র্যাবের কাছে অভিযোগ দেয়।
অভিযোগ পেয়ে ছায়াতদন্তের পর র্যাব-১ খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ এলাকায় এনএইচ সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেডের অফিসে অভিযান চালিয়ে সালমা আক্তার মুন্নিকে গ্রেপ্তার করে।
র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মুন্নি জানায়, তিনি সংঘবদ্ধ এমএলএম প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। ‘বিডি জবস বিডি’ নামে তার একটি পেজ থেকে বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এভাবে বেকার মানুষকে চাকরি দেওয়ার নামে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
যেভাবে প্রতারণা করা হতো:
প্রথমে বিজ্ঞাপন। তা দেখে চাকরিপ্রত্যাশীদের আবেতদন। তারপর তাদের ভাইবার নামে অফিসে ডাকা। আবেদনের নামে পাঁচশ টাকা নেওয়া। তারপর নিয়োগপত্র দেখিয়ে ব্যক্তিভেদে বিভিন্ন অংকের টাকা আদায়। এছাড়া নিয়োগপত্রে তাদের হয়ে অন্তত দশজন চাকরিপ্রত্যাশী জোগাড় করে দেওয়ার বিষয়ও উল্লেখ থাকতো।
এভাবে গত ছয়মাসে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় সাড়ে ১২শ চাকরিপ্রার্থীর কাছ বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। সিকিউরিটির গার্ড নিয়োগের নামে কোম্পানি চললেও এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান থেকে কাউকে নিয়োগ করা হয়েছে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
কে এই মুন্নি?
র্যাব জানিয়েছে, অভিযুক্ত সালমা আক্তার মুন্নির বাড়ি মাদারীপুরে। নিন্ম মধ্যবিত্ত ঘরের এই নারীর রয়েছে উচ্চাভিলাসী মনোভাব। এইচএসসি পাসের হাবিবুর রহমান নামে একজন প্রতারকের মাধ্যমে ২০২০ সালের ‘এনএইচ সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড’ নামে এই কোম্পানি খোলেন। চাকরিপ্রত্যাশী দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের টার্গেট করেই মূলত তার প্রতারণা চলছিল।
হাবিবুর রহমানের বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘গ্রেপ্তার সালমার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আমরা তাকে ধরতে অভিযান চালাচ্ছি। কিন্তু এখনো তাকে পাওয়া যায়নি। শিগগিরই আমরা তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের প্রতারণা ঠেকাতে সকল মহলের সচেতনতা জরুরি। গণমাধ্যমে বিষয়গুলো ফলাও করে প্রচার হলে মানুষ সচেতন হবে। জনসচেতনতা বাড়াতে সরকারের নির্ধারিত সংস্থাগুলোও কাজ করছে।’
এবিএ/১৭ নভেম্বের