সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক:: করোনার প্রভাবে গত দুই বছরে প্রকাশকবৃন্দ চরম আর্থিক অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। করোনার কারণে গত বছর বইমেলায় প্রকাশকরা সর্বোচ্চ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। প্রকাশকরা করোনাকালীন কোনো প্রণোদনা পায়নি। সে কারণে এ বছরসহ আগামী কয়েকটি বইমেলার পুরো খরচ সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়ার দাবি জানানো হয়। সেই সঙ্গে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অমর একুশে বইমেলা নতুন আঙ্গিকে প্রকাশকবান্ধব করার আহ্বান জানান প্রকাশকরা।
সোমবার বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২২: আমাদের ভাবনা’ শীর্ষক মতবিনিময়সভায় প্রকাশকরা এ দাবি জানান।
সেখানে প্রকাশকরা বইমেলার সময়কাল প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা ও ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা, স্টলের ভাড়া কমিয়ে আনা, বইমেলায় খাবারের দোকানগুলো প্রবেশপথের সামনে না রাখা, মেলার প্রবেশপথ বৃদ্ধি এবং গাড়ি রাখার স্থান নির্দিষ্ট করা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থায়ী মেলার কাঠামো গড়ে তোলা, বইয়ের কমিশন ব্যবস্থা তুলে দেওয়া, বইমেলার অবকাঠামো বইমেলা শুরুর আগে পুরোপুরি প্রস্তুত করা, মৌসুমি প্রকাশকদের বইমেলায় স্থান না দিয়ে শুধু মানসম্মত পেশাদারি প্রকাশকদের অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে বইমেলার মাত্রাতিরিক্ত পরিসর কমানোর দাবি করেন।
এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা, বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার ও লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এ ছাড়া এতে সভাপতিত্ব করেন জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সমিতির নির্বাহী পরিচালক মনিরুল হক। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক জালাল আহমেদ।
এ অনুষ্ঠানে বইমেলা নিয়ে বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন যুক্ত প্রকাশনীর প্রকাশক নিশাত জাহান রানা, অনুপম প্রকাশনীর মিলন কান্তি নাথ, তাম্রলিপির একেএম তরিকুল ইসলাম রনি, কথাপ্রকাশের জসীম উদ্দিন, ঝিঙেফুল প্রকাশনীর গিয়াসউদ্দিন খান প্রমুখ। আর অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অন্বেষা প্রকাশনীর শাহাদত হোসেন।
প্রকাশকদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, বইমেলাকে যে কোনোভাবেই লেখক ও প্রকাশকবান্ধব করে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে এর পাশাপাশি প্রকাশকদের পেশাদার হয়ে উঠার তাগিদ দেন তিনি। পেশাদারিত্ব না এলে সরকারের হাজার প্রণোদনা দিয়েও প্রকাশনা শিল্পের উন্নতি হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, বই মানুষের ভাবনার গভীরতা সৃষ্টি করে। বইমুখী করতে না পারলে নতুন প্রজন্ম বিকশিত হবে না। প্রকাশক ও তরুণ লেখকদের মানহীন বই প্রকাশ থেকে সরে আসার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, যতদিন একজন প্রকাশক নিজের টাকায় বই প্রকাশ না করবে, ততদিন একজন লেখককের বই প্রকাশ করা উচিত নয়। নিজের টাকায় মানহীন বই প্রকাশের কোনো মূল্য নেই।
রামেন্দু মজুমদার বলেন, প্রতি বছর মেলার উন্নতি হলেও পেশাদারিত্ব সৃষ্টি করা সম্ভব হচ্ছে না। বইমেলা আয়োজনের দায়িত্ব বাংলা একাডেমির হাতে না রেখে প্রকাশকদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বইমেলা আয়োজনের টাকা পুরোপুরি সরকারের পক্ষ থেকে ব্যয় করার প্রস্তাব রাখেন তিনি। প্রতি বছর মেলা আয়োজনে চার কোটি টাকা প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া তিনি করোনাকালীন পরিস্থিতিতে এ টাকা সরকারের বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করেন।
ড. জালাল আহমেদ বলেন, বইমেলা প্রতিবছরই তার পূর্বের মানকে ছাড়িয়ে যায়। আমরা বইমেলাকে অনেকটাই আধুনিক করে তুলতে পেরেছি। আগামীতে এ বইমেলাকে সবাই মিলে আরও গোছানো, পাঠক ও প্রকাশকবান্ধব করে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।
ফরিদ আহমেদ আগামী ২০২৩ সাল পর্যন্ত সরকারি খরচে মেলার ব্যয়ভার বরাদ্দের আহ্বান জানান।
এবিএ/১৬ নভেম্বর