হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:: গ্রামবাংলার চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী, অগ্রহায়ণ মাসেই নবান্নের আয়োজনে ধান কাটা শুরু হয় । কৃষকরা অগ্রহায়ণ মাসেই সারাবছরের ধানের খোরাক জমিয়ে রাখেন। কয়েক বছর যাবত শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নুরপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষ বন্য শূকরের উৎপাতের কারণে ঠিকমত ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না। বিশেষ করে সুরাবই, পুরাসুন্দা ও লাদিয়া গ্রামের মানুষ সবচেয়ে বেশি বন্য শূকরের উৎপাতের শিকার হচ্ছেন।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে রঘুনন্দন পাহাড়ের পাদদেশে রয়েছে কয়েক শ’ একর ফসলী জমি। যে কারণে ধান পাকার মৌসুম এলেই পাহাড় থেকে দলবেঁধে জমিতে হানা দেয় বন্যশূকরের পাল। সরেজমিনে দেখা যায়, কাঁচা-পাকা ধানের বেশ কিছু জমি বন্যশূকরের আক্রমণে নষ্ট হয়ে গেছে। কোন কোন জমির পাকা ক্ষেতে নতুন করে যেন মই দিয়ে গেছে এসব বন্য শূকরের পাল। এমতবস্থায় এ অঞ্চলের অনেকেই এদের আক্রমণে কৃষি কাজ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছে। আবার কেউ কেউ ফসল নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য কাঁচা ধানই কোনোমতে কেটে ঘরে তুলছে। জানা গেছে, এসব জমিতে এবার বেশ ভাল ফলন হয়েছিল। কিন্তু পাকা ধান ঘরে তুলতে পারবেন কিনা এ নিয়ে শঙ্কায় আছেন কৃষকরা। সেই শঙ্কা থেকে মানুষজন বিগত ১৫-২০ দিন যাবত ধান বাঁচাতে যৌথভাবে জমিতে রাতের বেলা পালাক্রমে মশাল জ্বালিয়ে পাহারা দিচ্ছেন। এছাড়াও জমির পাশে বাঁশ দিয়ে মাচাং বানিয়ে পাহারা বসিয়ে সারা রাত সেখানে না ঘুমিয়ে কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ রাতে কিছুক্ষণ পরপরই বেশ কয়েকরকম হুইসেল বাজিয়ে তাড়াচ্ছেন বন্যশূকর। এছাড়া দলবেঁধে শূকর হানা দিলে আত্মরক্ষার জন্য লাটিসোটাও সাথে রাখছেন তারা।
সুরাবই গ্রামের কৃষক মোঃ শাহিন মিয়া জানান, ‘প্রতিবছরই এরকম সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে আমাদের। কিন্তু সরকার থেকে কোনো সহায়তা আমরা পাচ্ছি না। যেসব জমিতে একর প্রতি ২০-২৫ মণ ধান হত, বন্য শূকরের উপদ্রবের কারণে সেখানে পাঁচ থেকে ছয় মণ ধান হয়। সেজন্য সোনার ধান বাঁচাতে আমরা নিজেরাই সম্মিলিতভাবে কষ্ট করে যাচ্ছি। শূকরের দল কখনো গভীর রাতে আবার কখনো ভোর রাতে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ধান ক্ষেতে নামে। যে জমিতে এরা নামে এ জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট করে ফেলে। আমি সরকারের কাছে দাবি জানাই, এই পাহাড়ের কিনার দিয়ে যেন তারকাটা বেড়া দেয়া হয়, তাহলে আমাদের ফসল আর নষ্ট হবে না।’এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ শহিদুর রহমান জানান, ‘আসলে বনবিভাগ থেকে বন্যশূকরদের রক্ষা করার নির্দেশনা রয়েছে। কৃষকদের ফসল বাঁচাতে কিছু পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে। মাটি থেকে ৫-৬ ফুট উঁচু করে মাচাং বানিয়ে সেখানে টিন বেঁধে শব্দ করে কিংবা মশাল জ্বালিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেই ফসল রক্ষা করতে হবে। এদের তাড়িয়ে দেয়া যেতে পারে কিন্তু কোনোভাবেই মারা যাবে না। এছাড়া এ বিষয়ে আমি অবগত থাকলেও আমাদের তেমন কিছু করার নেই। বনজঙ্গলে ওদের জন্য আমরা আলাদা খাদ্যের ব্যবস্থাও করতে পারছি না।’
বিএ/১৬ নভেম্বর