সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: ‘তথাকথিত ব্যবস্থাপনার নামে লুটপাট বন্ধ কর, টাঙ্গুয়ার হাওরে মাছ, গাছ, পাখিসহ জীববৈচিত্র ফিরিয়ে আন’ এমন স্লোগান নিয়ে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র ও পরিবেশ সুরক্ষার দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে।
সোমবার (৮ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় হাওর বাঁচাও আন্দোলন সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির আয়োজনে শহরের ট্রাফিক পয়েন্টে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন অংশগ্রহণ করেন।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি ইয়াকুব বখত বহলুলের সভাপতিত্বে ও কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক মিলনের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবু সুফিয়ান।
এ সময় আরও বক্তব্য দেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়, এ কে কুদরত পাশা, জেলা কমিটির সহ-সভাপতি আলী হায়দার, রাধিকা রঞ্জন তালুকদার, তাহিরপুর উপজেলা কমিটির সদস্য সচিব হোসাইন শরীফ বিপ্লব, সদস্য মানব তালুকদার, ফারুক আহমদ, এম আর শামীম, মিজানুর রহমান, শান্তিগঞ্জ উপজেলা কমিটির আবু সাইয়িদ প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলায় অবস্থিত একশ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে বিখ্যাত টাঙ্গুয়ার হাওরের অবস্থান। টাঙ্গুয়ার হাওর অত্যন্ত জীববৈচিত্র সম্পন্ন একটি হাওর হওয়ার কারণে এই হাওরকে জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্র কর্তৃক রামসার সাইট এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। এটিকে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র জলাভূমিরও মর্যাদা দেওয়া হয়। টাঙ্গুয়ার হাওরকে ১৯৯৯ সালে সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণাও করা হয়। পরবর্তীতে ২০০০ সালের ৩০ জানুয়ারি এটিকে রামসারসাইট ঘোষণা করা হয়। পরে ২০০১ সালে বাংলাদেশ সরকার ও সুইজারল্যান্ড সরকার কর্তৃক টাঙ্গুয়ার হাওর রক্ষণাবেক্ষণ করতে একটি সমঝোতা স্মারক চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। সেই চুক্তির আলোকে ২০০৩ সালের ৯ নভেম্বর এই হাওরের রক্ষণাবেক্ষণে সুইজারল্যান্ড সরকারের চুক্তি অনুযায়ী দায়িত্ব নেয় সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন।
তারা বলেন, গত ১৭ বছর ধরে এই টাঙ্গুয়ার হাওরকে জেলা প্রশাসন কর্তৃক রক্ষণাবেক্ষণ করে এলেও সিএনআরএস কর্তৃক এই টাঙ্গুয়ার হাওরের রক্ষণাবেক্ষণে তদারকি শুরুর পর এনজিওরা লাভবান হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ধ্বংস করে দিয়েছে এই হাওরটিকে। এই হাওরে মাছের যে অভয়াশ্রম গড়ে তোলার কথা, সেখানে অব্যবস্থাপনার কারণে হাওরের তলদেশে পলিথিনসহ নানান বিষাক্ত দ্রব্যাদি অবাধে ফেলে দেয়ার কারণে মৎস্য নিধন, হিজল-করচ গাছ অবাধে কেটে নেওয়া হয়। এখানে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা থাকার পরও রাতের আঁধারে পাখি শিকারীরা পাখি শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে। মৎস্যজীবীরা মৎস্য নিধন করায় টাঙ্গুয়ার হাওর আজ মাছশূন্য। শীতের মৌসুমেও এখানে অতিথি পাখির দেখা মিলছে না।
এনজিওদেরর রক্ষণাবেক্ষণের সময়কালে যদি কোনো নিয়ম আর দুর্নীতি হয়ে থাকে, তার শ্বেতপত্র জনসম্মুখে প্রকাশের জন্য সরকারের নিকট দাবি জানান বক্তারা। অন্যথায় এই হাওরের জীববৈচিত্র রক্ষার জন্য আগামীতে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।
এবিএ/০৮ নভেম্বর