চুনারুঘাট প্রতিনিধি:: হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার নরপতি গ্রাম থেকে আবদুর রউফ ও আলেয়া আক্তার নামের এক দম্পতির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার(০৫ নভেম্বর) দুপুরের দিকে ওই গ্রাম থেকে মরদেহ দুটি উদ্ধার করা হয়।
এদিকে দম্পতির মরদেহের পাশেই তাদের শিশু সন্তানকে বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন একজন সহকারী পুলিশ সুপার। মা-বাবার ঝুলন্ত মরদেহ পাশে বসিয়ে শিশুসন্তানকে জিজ্ঞাবাসাদের ঘটনায় তার (সহকারী পুলিশ সুপারের) দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম মহসিন আল মুরাদ। তিনি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি)। তবে সহকারী পুলিশ সুপার (চুনারুঘাট সার্কেল) মহসিন মুরাদ বলেন, ‘এখানে (লাশের পাশে বসিয়ে) আমরা তাদের মা-বাবার মৃত্যু সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করিনি। তাদের মানসিক অবস্থা ঠিক রাখার জন্য কেবল নাম-পরিচয় জিজ্ঞেস করেছি।’ কেন বাবা-মায়ের ঝুলন্ত মরদেহের পাশে শিশুকে তার নাম-পরিচয় জিজ্ঞেস করতে হবে- এমন প্রশ্ন করলে এএসপি মহসিন আবার বলেন, ‘কিছুক্ষণমাত্র কথা বলেছি।’ অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবী বলছেন, বাবা-মা হারানো শিশুটি এমনিতেই মানসিকভাবে চাপে ছিল। তাকে যত দ্রুত সম্ভব এমন পরিস্থিতি থেকে দূরে সরিয়ে নেয়া উচিত ছিল। সেটি না করে পুলিশ কর্মকর্তা যেটি করেছেন, তা সেই শিশুর মনোজগতে চাপ তৈরি করবে। হবিগঞ্জের আইনজীবী শাহ্ ফখরুজ্জামান এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘বিষয়টি সামাজিক এবং আইনের দৃষ্টিতে খুবই অমানবিক। মা-বাবার মরদেহের পাশে এই শিশুদের সঙ্গে কথা বলা ঠিক হয়নি। এতে তাদের মনোজগতে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়তে পারে। এ বিষয়ে অবশ্যই আরও সতর্ক থাকতে হবে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আবদুর রউফ ও আলেয়া আক্তার দম্পতি গ্রামের হাওরে একটি বাড়ি তৈরি করে সেখানে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। তাদের আশপাশে আর কোনো বাড়িঘর নেই। প্রতিদিনের মতো নিজ বাড়িতে রাতের খাবার শেষে তারা ঘুমিয়ে পড়েন। শুক্রবার সকালে তাদের দুই সন্তান রায়হান ও ফরহাদ ঘুম থেকে উঠে দেখতে পায়, ঘরের আড়ার সঙ্গে এক রশিতে তাদের মা-বাবার লাশ ঝুলছে। তাদের চিৎকারে দাদা-দাদি ও প্রতিবেশীরা সেখানে যান। খবর পেয়ে থানার পুলিশ ও চুনারুঘাট সার্কেলের এএসপি মহসিন গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করেন। মৃত দম্পতির পরিবারের সদস্যরা জানান, আব্দুর রউফ ছিলেন রিকশাচালক। তার স্ত্রী আলেয়া দীর্ঘদিন সৌদি আরব ছিলেন। এক মাস আগে তিনি দেশে ফিরে আসেন। এর পর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ লেগে থাকত। তবে তাদের দাবি, এটি হত্যাকাণ্ড। তবে পুলিশ বলছে, এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা, তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ছাড়া বলা যাচ্ছে না।তাদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানান পুলিশ পরিদর্শক চম্পক দাম। তিনি আরও জানান, ওই শিশুরা বাড়িতেই দাদা-দাদির কাছে আছে।
বিএ/৬ নভেম্বর