কবি অজয় বৈদ্য অন্তর :: এতোদিন কে ভালো আর কে মন্দ সেটা বুঝতে অক্ষম হলেও বা অপরিষ্কার থাকলেও আজ দেশের এই দুর্দিনে
প্রকৃত পক্ষে কে মানুষ আর কে অমানুষ অক্ষরে অক্ষরে এটা অনুধাবণ করতে পেরেছি।
কেউ নিরব, কেউ সরব। কেউ হিন্দুদের এই দশা দেখে নিরবে মজা নিচ্ছে। কেউ কাছে এসে সহানুভূতি দেখালে আসলে সেও হিন্দু নিধনই চায়। অনেক মেরুদণ্ডহীন হিন্দুরাও দুমুখো সাপের মতো অবস্থান নিচ্ছেন।
সবাই যে মন্দ, সবাই যে অমানুষ একদম তা নয়। দেশের এই মহা সংকটে আমি আসল মানুষদেরও দেখতে পেয়েছি। যারা শুধু কথায় নয় কাজে মিছিলে মিটিয়ে সরাসরি সম্পৃক্ত থেকে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
সত্যি বলতে যারা দেশের মঙ্গল চায় তারা এমনই। তারা ধর্ম বর্ণ জাতভেদ ভুলে দেশের সেবায় এগিয়ে থাকে। তারা ভুলে যায় কে আপন আর কে পর, তাদের কাছে দেশের সব সন্তানই তার ভাই, দেশের সকল মাই তার মা। এটাই তো দেশপ্রেমের শিক্ষা। তারা ভালোবাসাকে, মানবিকতাকে কখনোই আপন আর পর নামক শব্দে পৃথক করতে পারেন না।
কুমিল্লার ঘটনায় মুসলিম বলছে কোরান অবমাননা হয়েছে। কিন্তু আমি বলবো মন্দির অশুদ্ধ হয়েছে। আর এ থেকেই শুরু হবে দ্বন্দ্ব বা বিরোধ।
কোরান অবমাননা কে করেছে? কে রাখছে কোরান? যাকে কেন্দ্র করে আপনারা ঘরবাড়ি পুড়ছেন। যার জন্য মেয়ে হয়েছে ধর্ষিতা, মা হয়েছে লাঞ্চিত। বাবা হয়েছে পঙ্গু। অনেক ভাই ও শিশুরা হয়েছে আশ্রয়হীন।
যুক্তিতর্ক অনেক করা যেতে পারে। কিন্তু এর থেকে কোনো ভালো ফল হবে না। কেউ বলছে ঘটনা ঘটেছে ১২ তারিখ তাহলে আজ কেনো ফুটেজ বের হলো? অনেকে ফেইসবুকে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন দেশ থেকে এমনকি বিদেশ থেকে যতো কুরুচি ভাষায়।
কেউ আবার ইকবালের নাম কে বিকৃত করছেন। পাগল/মাদকাসক্ত বলে তাকে বাঁচানোর পায়তারাও চলছে। নানাভাবে নানা জনে টহল দিচ্ছেন নেট জুড়ে। বন্ধু হচ্ছে শত্রু আর ভালো হচ্ছে মন্দ। কিন্তু মূল আলোচনা হলো আমরা এতো কিছু চাই না। ঘটনা যে ঘটিয়েছে স্বচ্ছভাবে তার বিচার চাই।
আর এখন যদি ছেলে পাগল অথবা ছেলে মুসলিম এসব বলে নতুন ঘটনার রূপ তৈরী করেন তাহলে এর শেষ কখনোই হবে না।
আমরা অপরাধীদের নির্মূল করতে চাই। আমরা ধ্বংসযজ্ঞ নয় সুন্দর শোভিত বাংলাদেশ চাই। আর এর জন্য সবাই সম্পৃক্ত হয়ে চলতে হবে।
“হিন্দু মুসলিম বিভেদ করে কাড়ছো কেনো মানুষের প্রাণ
মানুষকে যে সেবিতে জানে সেই হয় ভাই মহিয়ান।
এই মানুষ ভজ মানুষ পূজো এই মানুষেরই গাও গান
মানুষের হৃদয়েই মন্দির, শুনবে মসজিদের আযান।”
লেখক ও কবি: অজয় বৈদ্য অন্তর
এবিএ/১৭