ছাতক প্রতিনিধি:: সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ভাতগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১১টি কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উৎসব মূখর পরিবেশে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলে। নির্বাচনে কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে এলাকায় অস্থায়ী বিজিবি ক্যাম্প স্থাপনসহ প্রতিটি কেন্দ্রেই ছিলো র্যাব ও পুলিশের কড়া নজরদারি। কেন্দ্র গুলোতে পুরুষের তুলনায় নারী ভোটারের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো।
কেন্দ্রগুলোতে পৃথক লাইনে নারী-পুরুষ ভোটাররা দাঁড়িয়ে থেকে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ভোট কেন্দ্রের ভেতর-বাইরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও ছিলেন সতর্ক অবস্থায়।
হায়দরপুর গ্রামের বাসিন্দা শরিফ উদ্দিন (১১০)। তিনি তার ছেলের কাঁদে ভর করে একতা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে এসেছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবার ভোটের পরিবেশ ভালো হওয়ায় অসুস্থ থেকেই তিনি ভোট দিতে পেরেছেন।
আনুজানি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে হুইল চেয়ারে আসেন ওই গ্রামের বাসিন্দা ইয়াছির আলী (৬৭)। শান্তিপূর্ন পরিবেশ দেখে তিনিও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
হায়দরপুর গ্রামের আনা মিয়ার কলেজে পড়ুয়া মেয়ে তানজিনা বেগম ভোট দিতে এসে বলেন, আমি আমার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরে আনন্দিত। এভাবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকলে আগামী নির্বাচনেও ভোটারদের উপস্থিতি আরও বাড়বে।
ঝিগলী স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে পাওয়া যায় ছাতক থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত) মিজানুর রহমানকে। তিনি বলেন, ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ। কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা ছাড়াই ভোট গ্রহন চলছে।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি চেয়ারম্যান প্রার্থী উবায়দুল হক শাহীন ও লিক্সন মিয়া নির্বাচনের পরিবেশ ও ভোট গ্রহন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত মোট ১১টি কেন্দ্রে গড়ে ৬৪ শতাংশ ভোট কাষ্টিং হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভাতগাঁও ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আওলাদ হোসেন মাস্টার (নৌকা) প্রতীকে ৫হাজার ৭৭টি ভোট পেয়ে বেসরকারী ফলাফল অনুযায়ী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এ নিয়ে তিনি তৃতীয় বারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন ভাঁতগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র প্রার্থী লিক্সন মিয়া (ঘোড়া) প্রতীকে পেয়েছেন ৩হাজার ৭১৮ ভোট। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী উবায়দুল হক শাহীন (টেলিফোন) প্রতীকে পেয়েছেন ২হাজার ১২৮ ভোট ও মোহাম্মদ কবির মিয়া (চশমা) প্রতীকে ২হাজার ৩০৯ ভোট পেয়েছেন।
এদিকে, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে প্রার্থী ছিলেন ১০জন। এর মধ্যে ১নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে সেবিনা বেগম (সূর্যমূখী ফুল) প্রতীকে ২হাজার ৯৯১ ভোট পেয়ে তিনি ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সদস্যা নির্বাচিত হয়েছেন। ২নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে সুমি আক্তার রাবেয়া (সূর্যমূখী ফুল) প্রতীকে ১হাজার ৫৯২ ভোট পেয়ে ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের সদস্যা নির্বাচিত হন। ৩নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে শিল্পী বেগম (সূর্যমূখী ফুল) প্রতীকে ২হাজার ১৩৬ ভোট পেয়ে তিনি ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের সদস্যা নির্বাচিত হয়েছেন। সূর্যমূখী ফুল প্রতীকে তারা তিনজন প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।
এছাড়া ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে ৪২জন সাধারণ সদস্য পদে প্রার্থীরা প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছেন। তাদের মধ্যে বেসরকারী ফলাফল অনুযায়ী বিজয়ীরা হলেন, ১নং ওয়ার্ডে শাহ খালেদ আহমদ (তালা) প্রতীকে ৫৭৭ ভোট, ২নং ওয়ার্ডে মনির উদ্দিন (বৈদ্যুতিক পাখা) প্রতীকে ৪০০ ভোট, ৩নং ওয়ার্ডে কামাল উদ্দিন (মোরগ) প্রতীকে ৮৩১ ভোট, ৪নং ওয়ার্ডে সুহেল আহমেদ (ফুটবল) প্রতীকে ৭৮৫ ভোট, ৫নং ওয়ার্ডে আরকুম আলী (টিউবওয়েল) প্রতীকে ৮০৯ ভোট, ৬নং ওয়ার্ডে হেলাল হুসেন (আপেল) প্রতীকে ২৮৫ ভোট, ৭নং ওয়ার্ডে আবদুল হামিদ (টিউবওয়েল) প্রতীকে ৫০২ ভোট, ৮নং ওয়ার্ডে রাফি আহমদ (টিউবওয়েল) ৮৬৬ ভোট ও ৯নং ওয়ার্ডে মাছুম আহমদ (ফুটবল) প্রতীকে ৩৭৭ ভোট পেয়েছেন। জানা গেছে এ ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ২০ হাজার ৪শ’৩৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১০ হাজার ৪৯০ ও নারী ভোটার ৯হাজার ৯৪৭জন।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়েজুর রহমান বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোট চলাকালে কোনো কেন্দ্রেই বিশৃঙ্খলা ঘটেনি। সারাক্ষণ কড়া নজরদারিতে ছিলেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাসহ সদস্যরা।
এবিএ/০৩