সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক:: করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়িদের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা ঋণ বিতরণ শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ বাস্তবায়ন হলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম আড়াই মাসে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাত এবং কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতে প্রণোদনা ঋণের বিতরণের হার ৩ শতাংশের নীচেই রয়ে গেছে। এই দুই খাতে চলতি মূলধন হিসেবে প্রণোদনার ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। তবে এই খাত দুটিতে ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনাগ্রহ দেখা গেছে।
করোনাভাইরাসের ফলে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন সরকার কর্তৃক ঘোষিত দশটি প্রণোদনা ঋণ প্যাকেজের বাস্তবায়ন পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ আয়োজিত এক সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
সূত্র জানায়, আলোচ্য দুই খাতের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতে দ্বিতীয় দফায় ঘোষিত ৩৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঋণ প্যাকেজের বিপরীতে চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলতি মূলধন হিসেবে মোট ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৫১৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এটি ঘোষিত প্যাকেজ ঋণ তহবিলের মাত্র ১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। মোট ৫৫টি শিল্প প্রতিষ্ঠান এ ঋণ সুবিধা পেয়েছে।
অন্যদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত সিএমএসএমই খাতে দ্বিতীয় দফায় ঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঋণ প্যাকেজের বিপরীতে চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলতি মূলধন হিসেবে মোট ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ৫৬৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা (২.৮৪ শতাংশ) এবং অনুমোদনের বিপরীতে বিতরণ করা হয়েছে ৪৭৭ কোটি টাকা (২.৩৮ শতাংশ)।
সভায় উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ব্যাংক ব্যবস্থার আওতায় সরকার ঘোষিত দশটি প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে দুটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়েছে। এর একটি হচ্ছে- ২১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ‘রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল’ (সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৮,৯২০ জন ঋণগ্রহীতা) এবং অপরটি রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানে ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ তহবিল (সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৩৭,৭৮,৯৬৯ জন শ্রমিক)। বাকি ৮টি প্রণোদনা ঋণ প্যাকেজের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতে প্রথম দফায় ৪০ হাজার কোটি টাকার ঋণ তহবিলের বিপরীতে ঋণ দেওয়া হয়েছে ৩২ হাজার ৭০৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা (বাস্তবায়ন হার ৮১.৭৫ শতাংশ, সুবিধাপ্রাপ্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান ৩,৩০৯টি)।
সিএমএসএমই খাতে প্রথম দফায় ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণ তহবিলের বিপরীতে ঋণ দেওয়া হয়েছে ১৬ হাজার ২১৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা (বাস্তবায়ন হার ৮১.০৭ শতাংশ, সুবিধাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ১,০০,১২১টি)। প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রি-ফাইন্যান্সিং স্কিম’-এর আওতায় ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ তহবিলের বিপরীতে দেওয়া হয়ছে ৩৭৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা (বাস্তবায়নের হার ৭.৫১ শতাংশ, সুবিধাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ৬৫টি)। এসএমই খাতের জন্য ২ হাজার কোটি টাকার ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম-এর আওতায় ২৭৪টি আবেদনের বিপরীতে ঋণ দেওয়া হয়েছে ২৯ কোটি ৪ লাখ টাকা। কৃষি খাতে ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কীমের বিপরীতে ঋণ দেওয়া হয়েছে ৪ হাজার ৪৯৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা (বাস্তবায়ন হার ৮৯.৮৭ শতাংশ, সুবিধাভোগী কৃষক/কৃষি খামারের সংখ্যা ১,৮৩,০৭৫ জন)। অন্যান্যের মধ্যে পর্যটন খাতের (হোটেল/মোটেল/থিম পার্ক) কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানে ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ তহবিলের ঘোষণা দেওয়া হলেও এ খাতে কোনো ঋণ দেওয়া হয়নি।
সূত্র জানায়, করোনাকালীন গত ২০২০ সালের এপ্রিল-মে মাসের জন্য ঋণের বিপরীতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সুদ ভর্তুকি বাবদ ২ হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে ১ হাজার ৩৯০ কোটি ৯ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে (বাস্তবায়ন হার ৬৯.৫ শতাংশ, সুবিধাভোগী ঋণগ্রহীতা ৭২,৮২,২৫৩ জন)।
এবিএ/১২