সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক: ণ্ড শিক্ষাপ্ঞ্জুীতে বিপাকে শিশু শিক্ষার্থীরা। অনেকেই এখনো স্কুল আঙ্গিনার বাইরে। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে যেসব শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিল মাত্র এক মাসের ব্যবধানে স্কুল বন্ধ হওয়ায় সরাসরি ক্লাস থেকে ছিটকে পড়ে তারা। একইভাবে প্রাকল্প্রাথমিকের (শিশু শ্রেণী) শিক্ষার্থীরাও স্কুল চেনার আগেই করোনায় ঘরবন্দী হয়। ২০২১ সালের নতুন শিক্ষাবর্ষেও প্রথম শ্রেণী এবং প্রাকল্প্রাথমিকের কোনো শিক্ষার্থী স্কুলে যেতে পারেনি। ফলে এই দুই শ্রেণী মিলে দুই বছরে প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থী স্কুলের চৌহদ্দিতেই ঢুকেনি বলা যায়। প্রিয় স্কুলের আঙিনা এখনো তাদের অচেনা।
অবশ্য শিক্ষামন্ত্রী এ বিষয়ে শুনিয়েছেন আশার কথা। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে, আগামী জানুয়ারি অর্থাৎ আসন্ন নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক গতিতে ফিরবে। শুরু হবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সব শ্রেণীর স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রম। শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, জানুয়ারি থেকে কোনো একটি শিশুও আর শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে থাকবে না। সব শিক্ষার্থী তাদের বয়স ও শ্রেণী অনুযায়ী স্কুলে ভর্তি হতে পারবে।
প্রাইভেট একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন মালিবাগের রিয়াজুল ইসলাম। তাদের একমাত্র ছেলে নাবিল। বয়স এখন সাত ছুঁই ছুঁই। দুই বছর আগে তার বয়স ছিল ৫ বছর। নাবিলের টেবিলে নতুন বই। স্কুল ব্যাগ তুলে রাখা হয়েছে আলমিরাতে। স্কুল ব্যাগ বদল না হলেও গত দুই বছরে কয়েক দফায় কেনা হয়েছে নতুন বই। কিন্তু দুই বছর আগে স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করা হলেও স্কুল চেনার আগেই করোনায় ঘরবন্দী হতে হয়েছে তাকে। রিয়াজুল এই প্রতিবেদককে জানান, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ছেলেকে শিশু শ্রেণীতে ভর্তি করালেও দুই সপ্তাহ সময়ও সে স্কুলে যেতে পারেনি। এরই মধ্যে করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যে নাবিলের স্কুলটিও বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) সূত্র জানায়, প্রতি বছর নতুন শিক্ষাবর্ষে শুধু প্রথম শ্রেণীতেই ৩৭-৩৮ লাখ শিশু শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। এদের প্রত্যেকেরই বয়স ৬ বছর। আর সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ৫ বছর বয়সের শিশুরা ভর্তি হয় শিশু শ্রেণী বা প্রাক-প্রাথমিকে। প্রাক-প্রাথমিকের শিশুদের সংখ্যাও কমবেশি ১৮ থেকে ২০ লাখ। অর্থাৎ ডিপিইর দেয়া তথ্যমতেই প্রতি বছর প্রাক-প্রাথমিক আর প্রথম শ্রেণী মিলে দুই শ্রেণীতে নতুনভাবে স্কুলে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৭ থেকে ৫৮ লাখ। যেহেতু করোনার কারণে দুই বছর শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ ছিল তাই স্বাভাবিকভাবেই গত দুই বছরে এক কোটির বেশি শিশু স্কুলের আঙ্গিনার ভেতরে প্রবেশই করতে পারেনি। নতুন শিক্ষাবর্ষ চালু হলে স্কুলে ভর্তির আশায় রয়েছে তারা।
ডিপিইর সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) প্রফেসর ড. ফসিউল্লাহ গতকাল সন্ধ্যায় জানান, দ্ইু বছর স্কুল বন্ধ থাকায় প্রাথমিকে প্রথম শ্রেণী এবং শিশু শ্রেণীতে চাপ বাড়বে। তবে শিশুদের পড়াশোনার চাপ যেহেতু তুলনামূলকভাবে কম তাই তারা অটো প্রমোশনের মাধ্যমে উপরের ক্লাসে ভর্তি হতে পারবে। অর্থাৎ, গত বছর যেসব শিশু প্রথম শ্রেণীতে ছিল তারা অটো প্রমোশন নিয়ে এবার দ্বিতীয় শ্রেণীতে উঠে যাবে। একইভাবে প্রাক-প্রাথমিকের শিশুরা উঠে যাবে ক্লাস ওয়ানে। আর নতুন শিক্ষার্থীরা ভর্তি হবে প্রাক-প্রাথমিকে। ক্লাস এবং শিক্ষায় ছন্দপতন হলেও শিশুরা তাদের পড়াশোনা আগের গতিতেই চালিয়ে নিতে পারবে বলেও মনে করেন সাবেক এই শিক্ষা কর্মকর্তা।
এ দিকে শিক্ষার্থীদের পাঠকার্যক্রম জানুয়ারি থেকে নতুন গতিতে চালুর ইঙ্গিত দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি। গত ১৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগামী মাসে (নভেম্বর) এসএসসি এবং পরের মাসে এইচএসসি পরীক্ষা শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক পাঠদান শুরু করা হবে। অর্থাৎ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকেই প্রথম ও প্রাক-প্রাথমিকে নতুন করে বয়স অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। তখন কোনো শিক্ষার্থী আর স্কুলের বাইরে থাকার সুযোগ নেই। সব শিশুকেই স্কুলে ফিরিয়ে আনা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সচল হওয়ার পর কী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা মূল্যায়ন করে ইতোমধ্যে দুই দফায় শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি রিভিও বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো: জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ উভয় মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসন্ন এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার কারণে নতুন করে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ ও ঝুঁকি তৈরি করা হবে না। এ দুই পরীক্ষা শেষ হলে আগামী বছরের শুরু থেকে সব শ্রেণীর ক্লাসে পাঠদান স্বাভাবিক করা হবে।
এবিএ/০১