নিজস্ব প্রতিবেদক: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের পিঠাকরা গ্রামে মাজার ও মাজারের সংশ্লিষ্ট ভূমি নিয়ে দুটি পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চরম বিরোধ চলে আসছে। মাজারের কাগজ পত্রে এবং ডিপি, এসএ ও বিএস রেকর্ডে শাহ সিকান্দার রহ. দরগাহ নামে রেকর্ড থাকলেও ইদানিং শাহ সুনামদি গং নামে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে মাজারটি দখলের অপচেষ্টা করা হচ্ছে। এ নিয়ে গ্রামের একটি প্রভাবশালী মহল মাজারের রেকর্ডীয় মালিকের উত্তরাধিকারীর উপর কয়েক দফা হামলা ও সাজানো মামলা দিয়ে হয়রানী করার অভিযোগ রয়েছে।
গত ১২ সেপ্টেম্বর সিলেটের মাননীয় যুগ্ম জেলা জজ ৩য় আদালতে স্বত্ব মোকদ্দমা নং ৪০/২০২১ইং দায়ের করেন পিঠাকরা গ্রামের মোঃ ইলিয়াছ আলী।
সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, বাংলাদেশের ওয়াকফ প্রশাসক সহ ১৫জনকে বিবাদী করে মামলাটি দায়ের করা হয়। বাদী মামলায় উল্লেখ করেন যে, পিঠাকরা মৌজার জে,এল নং-৩৫, এসএ খতিয়ান-২৪৮ ও ২০, দাগ নং-৭০৯,৭১৬, ৭১৮, ১০১৬, ১০১৮ ও ১০১৯; বিএস- ৪৬৪ খতিয়ান ও দাগ নং-৮১১ ও ১০০৭নং দাগে ৩.৩৬ একর ভূমি শাহ সিকান্দার রহঃ দরগাহ নামে রেকর্ডভুক্ত রয়েছে। জমির মালিক শাহ মোহাম্মদ আজিম শাহ সিকান্দর রহ. দরগাহের নামে বর্ণিত ভূমি ওয়াকফ করে দেন ও প্রথম মোতাওয়াল্লী হিসাবে তা রক্ষনা-বেক্ষন করেন। ওয়াকফকারীর মালিকানার তৌজি নং-২৪৯৬৪, হরলাল মুন্সী মহাল দশসনা, থাক নং-৪০১৬, যাহা মোহাম্মদ আজিম নামে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়। মোহাম্মদ আজিমের মৃত্যুর পর তাঁর একমাত্র পুত্র শাহ হাছন আলী উত্তরাধিকারী ও দ্বিতীয় মোতাওয়াল্লী হন। হাছন আলীর মৃত্যুর পর তার তিনপুত্র শাহ জহুর আলী, শাহ নিম্বর আলী, শাহ ইরফান আলী উত্তরাধিকারী হন। তিনজনের মধ্যে শাহ জহুর আলী শাহ সিকান্দার (রহঃ) দরগাহের তৃতীয় মোতাওয়াল্লী নিযুক্ত হন। এসএ জরিপে জহুর আলী নামে নালিশা ভূমি রেকর্ডভুক্ত আছে। কিন্তু এসব রেকর্ড থাকা সত্বেও বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসককে ভূল তথ্য প্রদান করিয়া ১৫৪০৫নং ইসি মুলে আক্তার হোসেন গং-রা শাহ সুনাম উদ্দিন কল্পিত মাজারের নামে উক্ত ভূমি ওয়াকফ বলে ইদানিং দাবী করছেন। কিন্তু মাজারের রেকর্ডপত্রে উক্ত কল্পিত শাহ সুনাম উদ্দিন নামের কোন অস্থিত্বই নেই। স্থানীয় আক্তার হোসেনের বাড়ির দেয়ালে সুনামদি, সরবদি সনদাসি/সন্ন্যাসী নামে দেয়াল লিখন ও ইদানিং মাজারে ঐ রকম সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়ায় ওয়াকফ প্রশাসক এই নামে একটি নতুন কমিটিও অনুমোদন দেন। বাদী তার শাহ সিকান্দার দরগাহ নামে মাজারের নিরংকুশ স্বত্ত্ব ঘোষণা ও তথায় ওয়াকফ প্রশাসকের শাহ সুনাম উদ্দিন কল্পিত মাজার নাম বাতিলের দাবীতে মামলাটি দায়ের করেন।
সিলেট জেলা বারের আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ভূমির কাগজ ছাড়া স্বত্ব মালিকানা বা বাংলাদেশ ওয়াকফ এর তালিকাভুক্তির আইনগত সুযোগ নাই। হযরত শাহ সিকান্দার রহ. দরগাহের মালিকানার ভূমিতে উক্ত ইসি অকার্যকর ও কোন ভাবেই প্রযোজ্য নহে। সে জন্য বর্তমান মোতাওয়াল্লী মোঃ ইলিয়াছ আলী শাহ সিকান্দার রহঃ এর মালিকানার নিরংকুশ স্বত্ব ঘোষণা এবং বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসক ইসি নং ১৫৪০৫ এর আলোকে শাহ সুনাম উদ্দিন গং সিলেট উক্ত ইসি নং অকার্যকর এবং নালীশা সম্পত্তিতে উক্ত ইসি প্রযোজ্য নহে মর্মে ঘোষণার জন্য মামলাটি দায়ের হয়। মাননীয় যুগ্ম জেলা জজ ৩য় আদালত সিলেট মামলাটি স্বত্ব ৪০/২১ইং হিসাবে আমলে নিয়ে বিবাদীর প্রতি সমন ইস্যুর আদেশ প্রদান করেন।
মামলার বাদী পিঠাকরা গ্রামের মোঃ ইলিয়াছ আলী বলেন, নালিশা সম্পত্তি আমার ও আমার পূর্ব পুরুষের এবং গতানুগতিক ভাবে আমি ও উত্তরাধিকারীগণ উক্ত দরগাহের বৈধ মালিক ও দখলকার হিসাবে শাহ সিকান্দার রহ. দরগাহ নামে মাজারটি পরিচালনা করিয়া আসিতেছি। আক্তার হোসেন গং-রা মিথ্যা তথ্যের আলোকে বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসক ইসি নং ১৫৪০৫ এর আলোকে শাহ সুনাম উদ্দিন গং সিলেট এর বানোয়াট নামে নালীশা সম্পত্তিতে ইদানিং দাবী করিয়া একের পর এক মামলা-হামলায় আমার ও আমার পরিবারের লোকজনকে হেনস্থা এবং সমস্যা ফেলছেন।