স্টাফ রিপোর্ট : ভূমি খেকো চক্রের অব্যাহত তৎপরতায় ফের আতঙ্কের মুখে সিলেটের অনেক প্রবাসীসহ একাধিক পরিবার। এই চক্রের মূল হোতা সিলেটের সিলেটের বিমানবন্দর থানাধীন ফরিদাবাদ আহমেদ হাউজিংয়ের বাসিন্দা মিজবাহ উল ইসলাম কয়েস। সাথে যুক্ত রয়েছেন ব্যবসায়ীক পার্টনার হেলেন আহমদ। এর আগে ওই চক্রের কবল থেকে ২০০৮ সালের ১৯ জুন যৌথ বাহিনীর অভিযানে মিলিটারি স্টেটের ১২ কোটি টাকার ভূমি উদ্ধার করা হয়। একই বছরের জুলাই মাসে এক সেনা সার্জেন্টকে বেঁধে মারধোরের অভিযোগে দুই সহযোগীসহ হেলেন আহমদকে গ্রেফতার করা হয়। তাছাড়া ওই বছরের ২৩ জানুয়ারি বড়শালার ২৫ টি পরিবার কয়েস-হেলেন চক্রের হাত থেকে নিজেদের ভূমি রক্ষায় সিলেট প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে। ২৫ পরিবারের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বড়শালার আবদুর রশিদ বলেন, ভূমি দস্যু এই চক্রের অত্যাচার ও নির্যাতনের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তাঁরা। সরকারি দলের প্রভাব খাটিয়ে ওই চক্র একের পর এক ভূমি দখলের মাধ্যমে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছে। এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেই লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে চালানো হয় অকথ্য নির্যাতন একই সাথে মিথ্যা মামলা দিয়ে সবাইকে হয়রানির মুখে ফেলে দেওয়া হয়।
এদিকে হেলেন-কয়েস চক্রকে ভূমি দস্যু উল্লেখ করে যুক্তরাজ্য প্রবাসী হোসাইন আহমদ বলেন, এয়ারপোর্ট বড়শালা এলাকায় ওই চক্রটি চিহ্নিত। এদের ভয়ে মুখ খোলার সাহস নেই কারো। এরা কখনো পররাস্ট্রমন্ত্রীর লোক কখনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ভূমি দখল বাণিজ্য চালিয়ে আসছে। ২০১৭ সালের ১৬ জুন এই চক্রের হাত থেকে ভূমি রক্ষায় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়ে সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জহুরা জিয়া চৌধুরী বলেন, আহমদ হাউজিং লিং এর প্রয়াত মালিক ফরিদ উদ্দন আহমদ তাদের ভূমির ৩০১২ নং দাগ থেকে রেজিস্ট্রিসহ কিছু ভূমি বিক্রি করেন। ফরিদ আহমদের একমাত্র উত্তরাধিকারী রুহেল আহমদও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। ওই ভূমিতে দুই পরিবারের ঘনিষ্টতার মধ্যে ৪২ বছর যাবত বসবাস করছি। কিন্তু রুহেল আহমদ অজ্ঞাত কারণে মৃত্যুবরণ করার পর তাদের পরিবারে নিয়োজিত তৎকালীন গাড়িচালক বর্তমান আইনজীবী মিছবাউল ইসলাম কয়েছ ক্রমে ক্রমে ব্রেইনওয়াশ করে প্রয়াত রুহেলের স্ত্রী হেলেন আহমদের। তারপর শুরু হয় ভূমির জাল দলিল পত্র। মূলত রুহেল আহমদের মৃত্যুর পর হেলেন-কয়েছ সখ্যতা গড়ে উঠে এবং শুরু হয় ভূমি নিয়ে দস্যুপনা।
এরই ধারাবাহিকতায় ২৫ জন লন্ডনপ্রবাসীর নিকট হেলেন আহমদের স্বামী মরহুম রুহেল আহমদের বিক্রি করা ভূমি থেকে উচ্ছেদ করার জন্য ভয়-ভীতি ও হুমকী প্রদর্শন চলে অব্যাহতভাবে। ওই প্রবাসীরা ন্যায্য টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রিসহ ভুমি ক্রয় করার পরও ক্রয়কৃত ভূমি নিজেদের দখলে নিতে পারছেন না ।
এদিকে মিসবাউল ইসলাম কয়েসের হঠাৎ করে কাড়ি কাড়ি টাকা ও সম্পত্তির মালিক বনে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেছেন জহুরা জিয়া চৌধুরী। তিনি বলেন, একদিন যিনি জীবিকার তাগিদে গাড়ি চালাতেন, সেই আইনজীবী মাত্র দেড়যুগে কিভাবে এতো বিত্ত বৈভবের মালিক হলেন? তিনি বলেন, চতুর মিসবাউল ইসলাম কয়েস এইচএম কর্পোরেশনের আইনজীবী দাবি করলেও মূলত তিনি হেলেন আহমদের ব্যবসায়ী পার্টনার। নগরীর জিন্দাবাজারস্থ এইচএম কর্পোরেশন থেকেই মিসবাউল আরো একাধিক ইলেকট্রনিক্স দোকান সৃষ্টি করেছেন। সবকটি দোকান নিজের আত্মীয় স্বজনদের দিয়ে পরিচালনা করছেন তিনি। অপর এক প্রবাসী বলেন, যেকোনো মানুষকে হয়রানী হিসেবে যেসব মামলা করা হয়, সেইসব মামলায় সাক্ষী হিসেবে ওই সব দোকানের লোকজনদেরকে যুক্ত করা হয়।
একসময় নৌবাহিনীতে চাকুরী করতেন মিসবাউল ইসলাম কয়েছ। সেখানকার শৃঙ্খলিত জীবন ছেড়ে তিনি একসময় পালিয়ে আসেন। পরে এই ঘটনায় ওয়ারেন্ট জারি হয় মিসবাউল ইসলামের নামে। পরবর্তীতে ফেঞ্চুগঞ্জ ১১ নং শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মছব্বির এর হাত ধরে ন’য়ের দশকে সিলেটে আগমন ঘটে মিসবাউল ইসলাম কয়েছের। তিনি নগরীর জল্লারপাড় রোডে ফরিদ ম্যানশনে নিজের শো’রুমে মিসবাউল ইসলামকে চাকুরীর সুযোগ দেন। ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীক পার্টনার ছিলেন হেলেন আহমদের শ্বশুর প্রয়াত ফরিদ আহমদ। এভাবেই হেলেনের সাথে পরিচয় মিসবাউলের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান আবদুল মছব্বির বলেন, যাকে উপকার করেছি, তার কোনো ক্ষতি করতে চাই না। অনেক কথা বলার আছে-যা বললে, তাঁর কুৎসিত রূপটি জনসমক্ষে প্রকাশ হয়ে যাবে। তবে একটি কথা বলতে চাই, মিসবাউল-হেলেনদের কারণে প্রবাসীসহ যতো মানুষ ভূমি হারা এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তার জন্য একদিন তাদের কঠিন বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
এদিকে প্রবাসীদের অভিযোগ এবং ভূমি দখলের অভিযোগ বিষয়ে মিসবাউল ইসলাম বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত সকল অভিযোগও ভুয়া,ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত’।