সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক:: মেছের আলীর বয়স ৯৫ বছর। আর তাঁর স্ত্রী সোনাভানের বয়স ৮৬ বছর। বয়সের ভারে আর নানা রকম অসুখে তেমন হাঁটাচলা ও কাজকর্ম করতে পারেন না। এই দম্পতির চার ছেলে। তবে কোনো ছেলের ঘরেই আর আশ্রয় হয় না তাঁদের। দুই দিন রাস্তার ধারে বাজারের এক দোকানের ছাউনিতে থাকতে হয়েছে ওই বৃদ্ধ–বৃদ্ধাকে।
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নের মানিকতলা বাজার থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ বি এম খালিদ হোসেন ওই বয়স্ক দম্পতিকে উদ্ধার করেছেন। ইউএনও এরপর তাঁদের চার ছেলের সঙ্গে কথা বলেন। তবে কেউই মা–বাবাকে আশ্রয় দিতে চাইছিলেন না। পরে গতকাল সোমবার রাতে ইউএনওর হস্তক্ষেপে ওই বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে তাঁদের বড় ছেলে রওশন গাজীর বাড়িতে জোর করে তুলে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে মা–বাবাকে আশ্রয় না দেওয়া অপর তিন ছেলেকে তুলে দেওয়া হয়েছে পুলিশের হাতে।
এলাকাবাসী জানান, একসময় বেশ জমিজমা ছিল মেছের আলীর। বৃদ্ধ হওয়ায় তাঁর চার ছেলেকে সমানভাবে সব সম্পত্তি লিখে দেন। এরপর মা সোনাভান বিবির আশ্রয় হয় বড় ছেলে রওশন গাজীর বাড়িতে। আর বাবা মেছের আলী প্রতি মাসে ঘুরে ঘুরে একেক সন্তানের বাড়িতে থাকতেন। কিন্তু বিপত্তি বাধে ১ আগস্ট ছোট ছেলে মোশারফ গাজী তাঁর বাড়িতে আশ্রয় না দেওয়ায়।
সোমবার রাতে ইউএনওর হস্তক্ষেপে ওই বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে তাঁদের বড় ছেলে রওশন গাজীর বাড়িতে জোর করে তুলে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে তিন ছেলেকে তুলে দেওয়া হয়েছে পুলিশের হাতে।
শর্ত অনুযায়ী গত রোববার মেজ ছেলে মো. মতলব আলীর বাড়ি থেকে বের হয়ে মেছের আলীর যাওয়ার কথা ছিল ছোট ছেলে মোশারফের বাড়িতে। কিন্তু ছোট ছেলে তাঁকে তাঁর বাড়িতে উঠতে দেননি। পরে উপায়ান্তর না দেখে বাজারের একটি দোকানের ছাউনিতে আশ্রয় নেন মেছের আলী। ওই কথা শুনে সেখানে চলে আসেন তাঁর স্ত্রী সোনাভান। ওই দিন দুপুর ও রাতে বাজারের লোকজন তাঁদের সামান্য খাবার দেন। গতকাল ব্যাপারটি ইউএনওর কানে গেলে তিনি চলে আসেন ওই বাজারে। এরপর রাতে মেছের আলী ও সোনাভানের থাকার ব্যবস্থা করেন বড় ছেলে রওশন গাজীর বাড়িতে। এ সময় ইউএনও নিজে তাঁদের ২০ কেজি চালসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী দেন। পাশাপাশি তাঁদের প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র কিনে দেন। ওই দুজনের থাকা-খাওয়ার খরচ এখন থেকে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ইউএনও বহন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
গদাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান গাজী জুনায়েদুর রহমান বলেন, ব্যাপারটি অমানবিক। বৃদ্ধ বয়সে ছেলেরা মা–বাবাকে আশ্রয় দিচ্ছেন না, এটা মানা যায় না। খবর পেয়ে ইউএনও সেখানে চলে আসেন। পরে তাঁকে (চেয়ারম্যান) ফোন করলে তিনিও সেখানে গিয়ে এলাকাবাসীর সহায়তায় ওই দুজনকে বড় ছেলের বাড়িতে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন।
কোনো ছেলেই মা–বাবার দায়িত্ব নিতে চান না। পরে অপেক্ষাকৃত সচ্ছল হওয়ায় বড় ছেলের বাড়িতে মা–বাবাকে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যত দিন তাঁরা বেঁচে থাকবেন, তত দিন উপজেলা থেকে তাঁদের খরচ বহন করা হবে।
এ বি এম খালিদ হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পাইকগাছা
পাইকগাছার ইউএনও এ বি এম খালিদ হোসেন বলেন, ‘খবর পেয়ে মানিকতলা বাজারে গিয়ে দেখি বৃদ্ধ-বৃদ্ধা দোকানের একটি ছাউনির নিচে বসে আছেন। এরপর ঠিকানা সংগ্রহ করে চার ছেলের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু কোনো ছেলেই মা–বাবার দায়িত্ব নিতে চান না। তবে অপেক্ষাকৃত সচ্ছল হওয়ায় বড় ছেলের বাড়িতে মা–বাবাকে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যত দিন তাঁরা বেঁচে থাকবেন, তত দিন উপজেলা থেকে তাঁদের খরচ বহন করা হবে।’
ওই দম্পতির তিন ছেলেকে আটকের কথা নিশ্চিত করে পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এজাজ শফি বলেন, তিন ছেলেকে মারামারির ঘটনা এড়াতে সিআরপিসি ১৫১ ধারায় আটক করা হয়েছে। ২০১৩ সালের বৃদ্ধ মাতা–পিতার ভরণপোষণ আইনে মামলা হলে তাঁদের ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে। তবে ওই মামলা করতে হয় মা–বাবাকে। কিন্তু ওই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা কেউই মামলা করার মতো অবস্থায় নেই। তারপরও ওই তিনজনকে আদালতের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। আর ওই বৃদ্ধ-বৃদ্ধার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সমাজসেবা দপ্তরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
সুত্র : প্রথম আলো