বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিম ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল বুধবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে সিলেট নগরীর মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ১ ছেলে ও ২ মেয়ে এবং ভাই-বোনসহ অনেক গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার ছেলে-মেয়েদের ৩ জনই যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী।
তার মৃত্যু সংবাদ শুনে দলের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী মাউন্ট এডোরা হাসপাতাল ও তার লামাবাজারস্থ বাসার সামনে ভিড় করেন। রাত ২টায় তার লাশ রাখা হয় ডায়াবেটিক হাসপাতালের হিমাগারে।
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ জেলা সভাপতি, সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বাবার মৃত্যুর সংবাদ শুনে তার আমেরিকা প্রবাসী ছেলে-মেয়ে দেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন। ৮ মে সকালে তাদের দেশে পৌঁছার কথা। ছেলে দেশে ফেরার পর তার দাফনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তার আগ পর্যন্ত সাবেক এ এমপির লাশ ডায়াবেটিক হাসপাতালের হিমাগারে থাকবে বলে জানান তিনি।
সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার একাধিক বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দিলদার হোসেন সেলিম দীর্ঘদিন ধরে নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন। সম্প্রতি চিকিৎসা শেষে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরেন। মঙ্গলবার (৪ মে) রাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে এবং শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে তাঁকে সিলেট নগরীর মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় বুধবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
দিলদার হোসেন সেলিম ১৯৪৯ সালে গোয়াইনঘাট উপজেলার রাধানগর ভিত্রিখেল গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তারা ৫ ভাই ও চার বোন। তার এক ভাই যুক্তরাষ্ট্রে ও ৩ ভাই যুক্তরাজ্যে থাকেন। শুধু তিনিই দেশে বসবাস করতেন।
গোয়াইনঘাট রাধানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন দিলদার হোসেন সেলিম। ৬ষ্ঠ থেকে এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন সিলেট দি এইডেড হাই স্কুলে। এইচএসসি এবং স্নাতক সম্পন্ন করেন সিলেট এমসি কলেজ থেকে। তিনি ১৯৬৯ সালে ছাত্র ইউনিয়ন থেকে এমসি কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস নির্বাচিত হন। পরের বছর ১৯৭০ সালে ছাত্র ইউনিয়ন থেকে এমসি কলেজের ভিপি নির্বাচিত হন। তিনি দীর্ঘদিন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। ১৯৮২ সালে সিলেট মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত ৩ বার সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯০ সালে বিপুল ভোটের ব্যবধানে গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ সালের ১৯ ফেরুয়ারি সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমানের হাত ধরে বিএনপিতে যোগদান করেন তিনি। ২০০১ সালে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে সিলেট-৪ আসন জৈন্তাপুর গোয়াইনঘাট থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিএনপি’র বিগত কাউন্সিলে তিনি দলের সিলেট বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন।
দিলদার হোসেন সেলিমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। এছাড়া, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান, কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও সিলেট বিভাগীয় টিম লিডার ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা: সাখাওয়াত হাসান জীবন ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কাইয়ুম চৌধুরীও অনুরূপ বার্তায় শোক প্রকাশ করেছেন।