সিলেট : দেশজুড়ে তান্ডব ও সহিংসতার ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। সারাদেশেই হেফাজত নেতাদের ধরপাকড় চললেও সিলেটে এখন পর্যন্ত তেমন কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবু সারাদেশের ন্যায় সিলেটের হেফাজত নেতাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
হেফাজতের নেতারা বলছেন, এখন পর্যন্ত দায়িত্বশীল কাউকে গ্রেপ্তার করা হলেও পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্নজনকে চিঠি দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। তবে পুলিশ বলছে, এখন পর্যন্ত সিলেটে কোনো হেফাজত নেতাকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হয়নি। সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় আইন বিষক সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সাংসদ শাহীনুর পাশাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এ গুজবের সত্যতা পাওয়া যায়নি। শাহীনুর পাশা সিলেটে নিজের বাসায়ই অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
হেফাজতের যুগ্ন মহাসচিব মামুনুল হককে গ্রেপ্তারের পর গত ১৯ এপ্রিল সিলেটের জকিগঞ্জে তারাবির নামাজের তার পক্ষে মিছিল করে কিছু রোক। এ ঘটনায় ওই রাতে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। সোমবার রাতেই ওই মামলায় ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে জকিগঞ্জ থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত কয়েকজন হেফাজতের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে। এই ঘটনার পর গ্রেপ্তার আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে জকিগঞ্জের হেফাজত কর্মীদের মধ্যে। এরপর গত ২১ এপ্রিল সিলেটের গোয়াইনঘাট থেকে ওই উপজেলার হেফাজত কর্মী কাউসার বিন আনিসকে গোয়াইনঘাট পুলিশ গ্রেপ্তার করে বলে জানিয়েছে সিলেট মহানগর হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দ।
গত ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের দিন থেকে হেফাজত কর্মীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডব চালায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১১ এপ্রিল থেকে শুরু হয় গ্রেপ্তার অভিযান।
১৮ এপ্রিল ঢাকার মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি মামুনুল হককে।
এরপর থেকে সিলেটের হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানান সিলেট মহানগর হেফাজতে ইসলামের মিডিয়া সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও সিলেট জেলা জমিয়তের দপ্তর সম্পাদক সালেহ আহমদ শাহবাগী।
সম্প্রতি সিলেটের জৈন্তাপুরের এক হেফাজত নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিলেটের পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে চিঠি দিয়ে ডেকে পাঠানো হয়। তবে পুলিশ বলছে, হেফাজত সংশ্লিস্ট নয়, ভিন্ন একটি ঘটনায় তাকে ডাকা হয়েছে।
সিলেট মহানগর হেফাজতে ইসলামের মিডিয়া সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও সিলেট জেলা জমিয়তের দপ্তর সম্পাদক সালেহ আহমদ শাহবাগী বলেন, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনল হককে গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে ১৯ এপ্রিল সিলেটের জকিগঞ্জে ৮জন হেফাজতের কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া গোয়াইনঘাট উপজেলার হেফাজত কর্মী কাউসার বিন আনিসকে গোয়াইনঘাট পুলিশ গ্রেপ্তার করে। কিন্তু এখনো তারা বলেনি তাকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিচ্ছিন্ন ভাবে এসব গ্রেপ্তারের কারণে সারা সিলেটের হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সিলেটে হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। সিলেট মহানগরেও এ পর্যন্ত কোনো হেফাজতের কর্মী গ্রেপ্তার বা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়নি। তারপরও সবার মধ্যে একটা ভয়ভীতি কাজ করছে। তার উপর শুনলাম জৈন্তাপুরের এক হেফাজত নেতাকে সিলেটের এসপি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চিঠি দিয়ে ডেকে পাঠিয়েছেন। সবকিছু মিলিয় সবার মধ্যে একটা আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) বি.এম. আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, এখন পর্যন্ত সিলেটে কোনো হেফাজত নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে সম্প্রতি নয়াসড়ক এলাকায় একটি নাশকতার মামলা হয়েছে। সেখানে জামাত শিবিরের কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত কয়েকজনের নামে মামলা হয়েছে। এই মামলাতে সুনির্দিষ্ট ভাবে হেফাজতের কারো নাম উল্লেখ নেই।
সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) মো. লুৎফুর রহমান বলেন, মূলত যেসব এলাকায় হেফাজতের যাদের নামে অভিযোগ আছে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তবে সিলেটে হেফাজতের নেতাকর্মীদের নামে কোনো মামলা নেই। পলে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আর হরিপুরের যে হেফাজত নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলা হচ্ছে সেটা অন্য কোনো ইসুতে হতে পারে।