বিশ্বনাথ উপজেলার চাউলধনী হাওরের ইজারাদারের লীজ বাতিল, কৃষকদের উপর সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, কৃষকদের হয়রানী বন্ধ, ছরকুম আলী দয়াল হত্যা মামলার আসামীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, সরকারি জলাশয়ের সীমানা নির্ধারণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণের দাবীতে সিলেট প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। চাউলধনী হাওর ও কৃষক বাচাঁও আন্দোলন কমিটির উদ্যোগে ৩ এপ্রিল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দৌলতপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও কমিটির যুগ্ম আহবায়ক মোঃ আরিফ উল্লাহ সিতাব।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দশঘর মৎসজীবি ভূয়া সমবায় সমিতির নামে যুক্তরাজ্য প্রবাসী চৈতন নগর গ্রামের মৃত আফতাব আলীর পুত্র সাইফুল আলম চাউলধনী হাওর ৬বছরের জন্য ১৭৮.৯৮ একর সরকারি খাস জলাশয় লীজগ্রহণ করে। এই সমিতির সভাপতি দশঘর নোয়াগাঁও ঘাগুটিয়া গ্রামের আব্দুল জলিল হলেও মূলত সবকিছু নিয়ন্ত্রন করছে সাইফুল ও তার সশস্ত্রবাহিনী। চলতি বছর এই বাহিনী সেচ দিয়ে মাছ ধরা ও বাধ কেটে পানি প্রত্যাহার করায় ২৫/৩০টি গ্রামের কয়েক হাজার কৃষক ফসল ও মৎস্য উৎপাদন করতে পারেননি। এতে শতকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবী করা হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, গত বছর ২২ ডিসেম্বর চাউলধনী হাওরে কৃষি উৎপাদনে বাধা, লীজের শর্ত ভঙ্গ করে হাওর পানি শুকিয়ে পানি শূণ্য করার প্রতিবাদে হাওরে কয়েক হাজার কৃষক ইজারাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবীতে মানববন্ধন করেন। পরবর্তীতে গত ২০ জানুয়ারী উপজেলা সদরে কৃষকরা মানববন্ধন করে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপিও প্রদান করেন। এতে ক্ষীপ্ত হয়ে সাইফুল বাহিনী আন্দোলনরত কৃষকদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ ৫টি মামলা দায়ের করে। এসব ঘটনা বিশ্বনাথ থানার ওসি শামীম মূসা তদন্ত ছাড়াই বড় অঙ্কের ঘুষ নিয়ে কৃষকদের বিরুদ্ধে মামলা রেকড করেন। এক পর্যায়ে আন্দোলনরত কৃষকদের দমনের জন্য ২৮জানুয়ারী সাইফুল ও তার বাহিনী চৈতননগর গ্রামের কৃষক দয়ালকে হত্যা ও তার আত্মীয় স্বজনকে গুরুত্বর জখম করে। তারা নিজের জমি থেকে পানি প্রত্যাহার না করতে বাধা দিয়েছিলেন। এঘটনায় দয়ালের ভাতিজা আহমদ আলী বাদী হয়ে বিশ্বনাথ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যা মামলার প্রধান আসামী সাইফুল সহ অন্যান্য আসামীরা প্রায়ই থানা পুলিশের সাথে বৈঠক ও চলাফেরার অভিযোগ করা হয়। অভিযোগে আরও বলা হয় উপজেলা প্রশাসন অন্ধ হয়ে খুনের মামলার আসামী সাইফুলের কেনা গেঞ্জি পড়ে তাকে নিয়ে উপজেলা সদরে র্যালী করে। দয়াল হত্যার ৯জন আসামী মহামান্য হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে পলাতক হওয়ায় আদালত গ্রেফতারী পরোয়ারী জারি করেন। কিন্তু পুলিশ আসামীদের গ্রেফতার করছে না। এসব কারনে সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত কৃষকরা ওসি শামীম মূসা ও এসআই ফজলুল হকের অপসারণ ও তদন্তক্রমে শাস্তির দাবী করেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, দয়াল হত্যা মামলাটি সিআইডি ও পিবিআই দ্বারা তদন্তের জন্য আইজিপি বরাবরে আবেদন করা হয়েছিল। দয়াল হত্যার ময়না তদন্তের রির্পোট নিয়ে সাইফুল বাহিনী বড় অঙ্কের টাকা নিয়ে উলটপালট এর চেষ্ঠা করছে বলে অভিযোগ করা হয়।
উপস্থিত কৃষকরা চাউলধনী হাওরের স্থায়ী সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সরকারি খাস জলাশয়ের সীমানা নির্ধারণ, বেড়িবেধ নির্মাণ, খাল, বিল, নালা পুকুর খনন, সাইফুল বাহিনীর অস্ত্র উদ্ধার এবং কৃষকরা শান্তিপূর্ণ ভাবে নিজের জমিতে কৃষি ও মৎস্য উৎপাদনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ সংশ্লিষ্টমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আনোয়ার হোসেন ধন মিয়া, আব্দুল মজিদ, সাবেক মেম্বার সামছুদ্দিন, শফিক আহমদ পিয়ার, গিয়াস উদ্দিন, মাস্টার বাবুল মিয়া, বিশিষ্ট মুরব্বী আলা উদ্দিন, নাজির উদ্দিন, রোশন আলী, আহমদ আলী, মাওলানা ছমির উদ্দিন, ইদ্রিছ আলী, যুক্তরাজ্য প্রবাসী শফিকুর রহমান, রফিজ আল,ি রজব আলী, কুতুব উদ্দিন, আব্দুল মুমিন কালু, আব্দুল মতিন, রফিক আলী, পংকি মিয়া, হাজী ছমির উদ্দিন, আতাউর রহমান, নজরুল ইসলাম আজাদ, শামীম মিয়া প্রমুখ।