সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক: করোনাকে মাথায় রেখে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এবারের বাজেট হবে সরকারের কৌশলী বাজেট। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায়কে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে সরকার। কারণ একদিকে করোনার ক্ষতি থেকে বাঁচাতে হবে মানুষকে, অন্যদিকে ধরে রাখতে হবে উন্নয়নের ধারা। এমন নীতিতেই এগোচ্ছে বাজেট গোছানোর কাজ। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
সূত্র জানিয়েছে, সরকারের আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভায়, বৈশ্বিক মহামারি বেড়ে যাওয়ায় ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটেও বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকার ব্যয় কমানোর চিন্তা করছে না। বরং আয়ের বিকল্প পথ বের করার কৌশল খুঁজছে। পাশাপাশি ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও যাতে কোনও ব্যাঘাত না হয়, সেদিকেও আছে নজর।
বাজেটে দারিদ্র্য নিরসন কার্যক্রম জোরালো করা, রাজস্ব আদায় বাড়ানো, উন্নয়ন প্রকল্পগুলো এগিয়ে নেওয়া, আপাতত এসব লক্ষ্য নির্দিষ্ট করা হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, প্রস্তাবিত বাজেটের আকার হতে পারে ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর-এর আদায়যোগ্য রাজস্বের পরিমাণ কত হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
সূত্র আরও জানায়, আগামী অর্থবছরের জন্য ডিজিপির প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। নতুন বাজেটে ঘাটতি ধরা হতে পারে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশের মধ্যেই আটকে রাখার চেষ্টা করবে সরকার।
আগামী জুনে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেট সংসদে উপস্থাপন করবেন। উপস্থাপনের প্রক্রিয়া এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
৯টি লক্ষ্য নির্ধারণ করে বাজেট করছে সরকার
এগুলো হচ্ছে- ১। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সরকারের অগ্রাধিকার খাতগুলোতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা।
২। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলো বাস্তবায়ন করা।
৩। কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যখাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ, প্রণোদনা এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়া।
৪। অধিক খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ সেচ ও বীজ প্রণোদনা দেওয়া, কৃষি পুনর্বাসন, সারে ভর্তুকি প্রদান অব্যাহত রাখা।
৫। ব্যাপক কর্মসৃজন ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা।
৬। সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতা বাড়ানো।
৭। গৃহহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য গৃহনির্মাণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা।
৮। নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা চালু রাখা।
৯। শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নসহ সার্বিক মানবসম্পদ উন্নয়ন করা।
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে প্রাকবাজেট আলোচনা শুরু করেছে। যাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে তারা আগামী বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ না রাখার প্রস্তাব করেছে বলে জানা গেছে। কেউ কেউ করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করেছেন।
কেউ আবার বেকারি সামগ্রীর ওপর সব ধরনের কর প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভোজ্যতেলের ওপরও অগ্রিম কর তুলে নেওয়ার সুপারিশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সরকার ইতোমধ্যেই আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভায় জানিয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট বিনিয়োগের হার হবে জিডিপির ৩২ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগ ২৪ দশমিক ৫ এবং সরকারি বিনিয়োগ ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হয়েছে।
মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হতে পারে জিডিপির ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। উন্নয়নে মোট ব্যয় হবে জিডিপির ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ।
প্রাথমিক ঘাটতি জিডিপির ৪ শতাংশ এবং জিডিপি হবে ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকার।
এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, করোনার প্রভাবে জীবন থেমে থাকতে পারে না। রাজস্ব আদায় চ্যালেঞ্জিং হলেও অসাধ্য নয়। আগামী বছর সরকারের অগ্রাধিকার পাওয়া অনেকগুলো প্রকল্পের কাজ সমাপ্তির পথে থাকবে। এসব কারণে ওই সব প্রকল্পের অর্থ সময়মতো ছাড়ে কোনও শিথিলতা থাকবে না। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলবে। কোনও বাধা এলে তা কাটিয়ে সামনে এগোবে সরকার।
সিলেট৭১নিউজ/টিজা