সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক: বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে অনেকেই করোনায় আক্রান্ত। বেশ কয়েকজন হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এক বছরে দলটির ৪৪০ জন নেতাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে আক্রান্ত আছেন শতাধিক নেতা। অনেকে সপরিবারে আক্রান্ত। এমন পরিস্থিতিতে সব রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করেছে দলটি। চলতি বছরেই ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা ছিল বিএনপির। মাঠেও এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছিল সিরিজ কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে। কিন্তু নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধি এই কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
করোনার কারণে গত বছর টানা ছয় মাসের মতো বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড বন্ধ ছিল। এরপর সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড শুরু হলেও করোনার কারণে খুব বেশি সুবিধা করা যায়নি। আবার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বুধবার দলের সব সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থগিত করা হয়। গত মাসে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর কর্মসূচি স্থগিত করে দলটি।
এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি গঠিত ‘জাতীয় করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সেল’ ফের তাদের কাজ শুরু করেছে। এই সেল চিকিৎসা, টিকার কার্যক্রমসহ দলের ত্রাণ তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করবে। পাশাপাশি সরকারের কোনো তথ্যের গরমিল থাকলে তা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরবে। গত বছর এপ্রিলে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে উপদেষ্টা ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে আহ্বায়ক করে ১৩ সদস্যের পর্যবেক্ষণ সেল গঠন করা হয়।
সেলের আহ্বায়ক ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু যুগান্তরকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি খুবই খারাপের দিকে যাচ্ছে। আমাদের পর্যবেক্ষণ সেলের কাজও আবার শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে সাংগঠনিক সম্পাদকদের বলা হয়েছে খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য। দলের সামর্থ্য অনুযায়ী স্বাস্থবিধি মেনে দলের নেতাকর্মীরা এবারও মানুষের পাশে দাঁড়াবে।’
দলের কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, ‘করোনাকালে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় গত বছর মার্চে করোনা শুরুর পর থেকে জুন পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপির নেতৃবৃন্দ ৫৪ লাখ ১২ হাজার ৪১৬টি পরিবারকে সহযোগিতা করেছেন। এই সহযোগিতার আওতায় মোট ২ কোটি ১৬ লাখ ৪৯ হাজার ৬৬৪ জন মানুষ উপকৃত হয়েছে। এছাড়া ড্যাব, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ও দলের নেতৃবৃন্দ কয়েক লাখ মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান ও পিপি বিতরণ করেছে। করোনা এখন ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। যে কারণে আবারও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।’
জানা যায়, দলটির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন- স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. একেএম আজিজুল হক, ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, সাবেক ছাত্রনেতা রকিবুল ইসলাম বকুল, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন মিডিয়া কমিটির সদস্য আতিকুর রহমান রুমন, অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল প্রমুখ। এর মধ্যে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রুহুল কবির রিজভীকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে।
সিনিয়র নেতাদের অনেকে সপরিবারে আক্রান্ত হয়েছেন। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও তার স্ত্রী বিলকিস আক্তার হোসেন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ও স্ত্রী রিফাত হোসেন এবং হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ও স্ত্রী কামরুন নাহার সৃষ্টি, দুই মেয়ে জান্নাতুন ইসি সূচনা ও অপরাজিতা খানও আক্রান্ত। সেলিমুজ্জামান সেলিম ও তার স্ত্রী সাবরিনা শুভ্রা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, গত এক বছরে করোনায় বিএনপির ৪৪০ জন নেতাকর্মীর মৃত্যু হয়েছ। এর মধ্যে আছেন- ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, মেজর জেনারেল (অব) রুহুল আলম চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এমএ হক, ঢাকা উত্তর মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, কুমিল্লা বিভাগ সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল খান, ওলামা দলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি সদস্য মাওলানা কাসেমী, গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সহসভাপতি খন্দকার আহাদ আহমেদ, সাবেক মন্ত্রী টিএম গিয়াস উদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি লায়ন মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, বেলজিয়াম বিএনপির সভাপতি আহমেদ সাজা,
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য অ্যাডভোকেট কবির চৌধুরী, জাতীয় ট্যাক্সসেস বার সভাপতি অ্যাডভোকেট গফুর মজুমদার, শ্রমিক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক মোল্লা, শ্রীপুর পৌরসভায় বিএনপি মেয়র প্রার্থী শহিদুল্লাহ শহীদ, ঢাকার পল্লবী থানা বিএনপির সহসভাপতি আনিসুর রহমান, আমেরিকার বোস্টন বিএনপি ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মিতোষ বড়ুয়া, সাবেক সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেন সরকার ও এটিএম আলমগীর।
সিলেট৭১নিউজ/টিজা