বিশ্বনাথ প্রতিনিধি (সিলেট):: সিলেটের বিশ্বনাথে হরতালের সময় গাড়ি বের করা নিয়ে চালকের সাথে কথা কাটাকাটির জের ধরে হরতাল সমর্থনকারী ও দুই গ্রামবাসীর মধ্যে আড়াইঘন্টা ব্যাপী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে পুলিশের সদস্যরা সেখানে গেলে আমতৈলের লোকজন পুলিশের উপরও হামলা করে। এসময় বাধ্য হয়ে প্রায় ৯০ রাউন্ড গুলি ও ৭ রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি শান্ত করে।
রোববার (২৮ মার্চ) সকাল ১০ টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত উপজেলার বিশ্বনাথ-লামাকাজি রোডের পিছের মুখ নামক স্থানে বৃহত্তর আমতৈল ও ধলিপাড়া গ্রামের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় থানার পুলিশের ওসি, পুলিশসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন।এরমধ্যে গুলিবিদ্ধ ৪ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এলাকাজুড়ে এখন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বর্তমানে পুলিশের হস্তক্ষেপে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও এলাকাজুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বনাথ-লামাকাজি রোডের পিছের মুখ নামক স্থানে রোববার সকাল থেকেই আমতৈলের গাজীর মোকাম মসজিদের ইমাম মুফতি ফারুক আহমদের নেতৃত্বে রাস্তায় পিকেটিংয়ে নামে ওই এলাকার জামাত-হেফাজত ও বিএনপির নেতাকর্মীরা। এসময় পার্শ্ববর্তী ধলিপাড়া গ্রামের ড্রাইভার খায়রুল ইসলাম ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট-১৮-৯৮২৩) নিয়ে বাড়িতে যাওয়ার পথে তারা বাঁধা দেয়। এক পর্যায়ে পিকেটাররা ড্রাইভারের উপর হামলা করে। এসময় ধলিপাড়া গ্রামের লোকজন এসে পিকেটারদের বাঁধা দেন। পরবর্তীতে আমতৈলের মসজিদের মাইকে ইসলাম বিরোধীরা তাদের উপর হামলা করেছে বলে ঘোষণা দেন। মূহুর্তেই দুই গ্রামের প্রায় দুই হাজারেরও অধিক মানুষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। আমতৈল গ্রামের লোকজন ধলিপাড়া গ্রামের বাড়িঘরে হামলা করে ভাংচুর ও লুটপাট করে বলে জানান স্থানীয়রা।সংঘর্ষে থানা পুলিশের ওসি শামীম মুসা, এসআই আফতাবুজ্জামান রিগ্যান, কনস্টেবল নাহিদ, জাবেদ, ইমরান ও আব্দুল আলিম ও দুই পক্ষের আরও প্রায় অর্ধশতাধিক লোকজন আহত হয়েছেন। তাদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়েছেন।
ধলিপাড়া গ্রামের আহতরা হলেন, খায়রুল আলম (৩০), আফাজ উদ্দিন সুবল (৪৫), কাচা মিয়া (৩৫), আব্দুছ সালাম (৬২), এনামুল হক (২৮), ওয়াছিদ আলী (৫২), নেছার আলী (৩১), আখলাক আহমদ (১৬), ছানোয়ার (২০), ইমন আহমদ (১৮), শিপু মিয়া (২৫), মিলাদ আহমদ (৩৫), আমিরুল ইসলাম (৩০) নজির আহমদ (৩১), জাবের মিয়া (২১), আব্দুল কদ্দুছ (৭০), জহিরুল ইসলাম (৩৮) ও ইমাম উদ্দিন (৩৬)।
আমতৈল গ্রামের আহতরা হলেন- মুফতি ফারুক আহমদ (৪৮), ফারুক মিয়া (৩৫), মোহন মিয়া (৪৫), সাইদুল ইসলাম (২৫), চান মিয়া (৩৫), ফয়সল আহমদ (১৪), রাসেল আহমদ (২৫), আলী আকবর (২৫), জয়নাল মিয়া (৫২) ও গুলচর আলী (৫০)। ওই গ্রামের আরও অনেক লোকজন আহত হলেও মামলার ভয়ে কেউ তাদের নাম প্রকাশ করেন নি। তার মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত রয়েছেন- রাসেল আহমদ, আলী আকবর, জয়নাল মিয়া ও গুলচর আলী। গুরুতর আহত কনস্টেবল নাহিদ ও গুলিবিদ্ধ চারজনকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আর এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৮জনকে আটক করেছে থানা পুলিশ। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম উল্লেখ করেনি পুলিশ।
এ ঘটনার পর উপজেলা নির্বাহী মাজিস্ট্রেট ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও মো. কামরুজ্জামান ও ওসমানীনগরের সার্কেল রফিকুল ইসলাম এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলমগীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এ ব্যাপারে থানার ওসি মো. শামীম মুসা বলেন, হরতালে পিকেটিং করতে গেলে পূর্বের মারামারিতে এই সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটেছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসি এবং হামলায় তিনিসহ তার ৬ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।