সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক: জনগণকে বাদ দিয়ে সরকার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর হলি ফ্যামেলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলকে দেখার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এ অভিযোগ করেন।
মঙ্গলবার বেলা ১২টায় সোহেলকে দেখতে আসেন বিএনপি মহাসচিব। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দলীয় কর্মসূচির সময়ে পুলিশি হামলায় সোহেল গুরুতর আহত হন। পরে দেহে অস্ত্রোপচারের জন্য এ হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার সুবর্ণজয়ন্তীটা পালন করছে জনগণকে বাদ দিয়ে। জনগণ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই সুবর্ণজয়ন্তীর যে অনুষ্ঠানগুলো তারা করছে, এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনও অবস্থান নেই। এমনকি রাজনৈতিক দলগুলোরও কোনও অবস্থান নেই।’
তিনি বলেন, ‘শুধু বিদেশি মেহমানদের নিয়ে এসে এখানে দেখানো হচ্ছে, বলানো হচ্ছে যে আপনার উন্নয়নের লহরী বয়ে যাচ্ছে।’
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল ও ভুটানের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের আগমনকে স্বাগত জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এরইমধ্যে আমাদের প্রতিবেশী চারটি বন্ধু দেশ এসে গেছেন। তাদের রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী এসেছেন এবং আগামী ২৬ মার্চ আমাদের বন্ধু দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসবেন। আমরা সবসময় বলে এসেছি, আমাদের দেশে বিদেশি বন্ধুদের স্বাগত জানাই এবং সুবর্ণজয়ন্তীতে অবশ্যই আমরা তাদের স্বাগত জানাবো।’
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে বিএনপির বছরব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা সেই কর্মসূচিগুলো পালন করছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে গত ১৭ তারিখ থেকে এই সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ পালন করার কারণ দেখিয়ে এবং বিদেশি মেহমানরা আসবেন, সেই কারণ দেখিয়ে আমাদের কর্মসূচিগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মানুষের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী এখানে কী সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে আসছেন, নাকি পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার নির্বাচনি প্রচারণা করতে আসছেন—এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পশ্চিম বাংলার পত্রিকাগুলো, ভারতের পত্রিকা, আমাদের দেশের পত্রিকাগুলোতে সে ধরনের ইঙ্গিতই আমরা পাচ্ছি। মূলত তার (নরেন্দ্র মোদি) এই ভিজিটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে—তিনি সেসব মন্দির পরিদর্শন করছেন, যেসব মন্দিরের তাদের যে অনুসারী রয়েছে, তাদের যে ভোট পশ্চিম বাংলায় রয়েছে, সেই ভোটের জন্য তিনি চেষ্টা করছেন। এটা পত্রপত্রিকায় লেখা হচ্ছে।’
‘আমরা খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর হয়েছে। দুর্ভাগ্যক্রমে ৫০ বছরে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক যে অধিকার তা হারিয়ে ফেলেছি, আমরা আমাদের মানুষের অধিকারগুলো হারিয়ে ফেলেছি। এখানে যে পরিস্থিতিতে সরকার দেশ পরিচালনা করছে, সেটা কোনোমতেই গণতন্ত্রের জন্য সহায়ক নয়। সংবিধানকে তারা সংরক্ষণ করছেন না, এমনকি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৗমত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে।’
অমীমাংসিত সমস্যা সমাধান’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বরাবরই বলে এসেছি, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও উন্নত করতে হলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে অভিন্ন নদীগুলো রয়েছে, তার হিস্যার মীমাংসা হওয়া উচিত, সীমান্তে হত্যা বন্ধ হওয়া উচিত। কানেক্টিভিটিতে আমার কী লাভ হচ্ছে, সেটা জনগণের কাছে স্পষ্ট হওয়া উচিত। এই কথাগুলো আমরা বরাবরই বলে আসছি।’
‘আমরা এখনও পরিষ্কার করে বলতে চাই যে, সীমান্তে হত্যা অবিলম্বে বন্ধ হোক, যেটা অমানবিক। পৃথিবীর কোনও দেশে এ ধরনের ঘটনা আছে কিনা আমরা জানি না। এত বন্ধুত্ব বাংলাদেশের সঙ্গে সরকার বলেন, এটুকু সমাধান করতে পারেন না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘পানির কোনও রকমের সমস্যা… তিস্তা নদীর চুক্তি হচ্ছে না, ফেনী নদীর পানি একতরফা নিয়ে গেছে। সেতুও তৈরি হচ্ছে কানেক্টিভিটিতে। অথচ আমাদের মৌলিক সমস্যাগুলোর কোনও সমাধান হচ্ছে না। আমরা এখনও প্রত্যাশা করি, বাংলাদেশ সরকার আমাদের দাবিগুলোকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করে আমাদের কোটি কোটি মানুষের সমস্যার সমাধান করবে।’
‘করোনা সংক্রমণ প্রসঙ্গ’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘হাসপাতালগুলোতে বেড নাই। এতদিন ধরে কী করলেন, বেড নাই কেন? তখন থেকে আমরা বলছিলাম। সেই বেড তো তারা জোগাড় করতে পারেননি। চিকিৎসা ঠিকমতো দিতে পারেন না। জনগণের সমস্যা বাড়ছে, করোনা মারাত্মক হারে বেড়ে গেছে, আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। আমাদের অনেক নেতা করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন, অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।’
ফখরুলের মন্তব্য, ‘আমরা বারবার বলছি যে, এ ব্যাপারে সরকারের সবকিছু বাদ দিয়ে একেবারে জরুরিভাবে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, সবার সঙ্গে কথা বলে নিয়ে।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘এই করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতি সরকার মোকাবিলা করতে সক্ষম হচ্ছে না এজন্য যে, তাদের নিয়তেরই ঠিক নাই। তাদের তো লক্ষ্য একটাই—কখন কোত্থেকে তারা চুরি করবে। মানে কথা বলছি একেবারে সরাসরি। প্রত্যেকটা বিষয়ে যখন দুর্নীতি করতে চায়, তখন তো সমাধান করা সম্ভব না। আর করোনার মতো একটা সমস্যা, যেটা সারা বিশ্বে আজকে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানবসভ্যতার জন্য সেটাকে সমাধান করার জন্য যে আন্তরিকতা, যে নিষ্ঠা, এর কোনোটাই না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথমেই বলেছিলাম যে রাজনৈতিক দলগুলোকে ডেকে, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও এনজিও—তাদের ডেকে একটা পরিকল্পনা-রোডম্যাপ তৈরি করা। ভ্যাকসিন নিয়ে অনেক কথা আসছে। যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তারা প্রত্যেকেই ফার্স্ট ভ্যাকসিন নিয়েছেন। এগুলোর তো সমাধান বলতে হবে তাদের।’
তিনি চিকিৎসকদের কাছ থেকে সোহেলের সর্বশেষ অবস্থার খোঁজ-খবর নেন।
এ সময় বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।
সিলেট৭১নিউজ/টিজা