সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক:নামগঞ্জের দোয়রাবাজার উপজেলার টিলাগাঁও রাবারড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির খামখেয়ালিপনায় পথে বসার উপক্রম হয়েছে কৃষকদের। অসময়ে খাসিয়ামারা নদীর পানি ছেড়ে দেয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে এখন দুই তীরের বিস্তীর্ণ হাওরের হাজার হাজার হেক্টর বোরো ফসল। সেচ সংকটের কারণে বোরো ফলন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পানির অভাবে জমির মাটি ফেটে যাচ্ছে। শুকিয়ে মরে যাচ্ছে রোপণকৃত ধানের চারা। কৃষকদের ভাষ্যমতে, হাওরে জলমহাল ও ছোট ছোট জলধার শুকিয়ে যাওয়ায় এবং বৃষ্টিপাত না হওয়ায় একমাত্র নদীর পানিই তাদের ভরসা। কিন্তু রোপণের পর শুরুতেই রাবারড্যাম প্রকল্পের পানি ব্যবস্থাপনা কমিটি নদীর পানি ছেড়ে দিলে পানি সংকটে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
সরজমিন হাওর এলাকা ঘুরে জানা গেছে, উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের টিলাগাঁও রাবারড্যাম কর্তৃপক্ষ অসময়ে নদীর পানি ছেড়ে দেয়ায় সেচের অভাবে ধ্বংসের মুখে রয়েছে আবাদকৃত বোরো ফসল। কোথাও পানির ব্যবস্থা না থাকায় জমি ফেটে রোপণকৃত চারা শুকিয়ে মরে যাচ্ছে।
গত কয়েকদিন ধরে কৃষকদের চাপে রাবার ফুলিয়ে রাখলেও নদীতে এখন পানি নেই। নদীতে পূর্বে যে পানি জমানো ছিল এই পানি দিয়ে সেচের মাধ্যমে কৃষকরা জমিতে দিতে পারতো। রাবার ফুলালেও আগের মতো পানি জমানো এখন কঠিন হবে। দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং হাওরের জলমহাল ও ছোট ছোট জলধার শুকিয়ে যাওয়ায় একমাত্র খাসিয়ামারা নদীর পানিই দুই পারের কৃষকদের ভরসা। এই নদীর পানি দিয়ে সুরমা ও লক্ষ্মীপুর দুই ইউনিয়নের হাজার হাজার হেক্টর বোরো ফসল আবাদ করা হয়। বিভিন্ন গ্রামের একাধিক কৃষকরা বলেছেন, টিলাগাঁও রাবারড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির খামখেয়ালিপনা সিদ্ধান্তে অসময়ে নদীর পানি ছেড়ে দেওয়ায় আমাদের বোরো ফসল এখন হুমকির মুখে রয়েছে। পানি দিতে না পারায় মাটি ফেটে চারা শুকিয়ে মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এর দায়ভার কারা নেবে।
উপজেলার বক্তারপুর গ্রামের কৃষক আবদুল মতিন ও উমর গণি বলেন, এই মৌসুমে খাসিয়মারা নদীর রাবার ফুলিয়ে পানি আটকানোর ফলে দুই ইউনিয়নের টিলাগাঁও, বক্তারপুর, মীরপুর, জিরারগাঁও, সুলতানপুর, এরুয়াখাই, খাগুড়া, মহব্বতপুর, রসরাই লক্ষ্মীপুর, কালাইউড়া, নোয়াগাঁওসহ বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা নদী হতে সেচের মাধ্যমে বোরো ফসল রক্ষা করেন। কিন্তু এ বছর বোরো চারা রোপণের পর উপকারভোগী কৃষকদের সাথে পরামর্শ না করেই হঠাৎ করে পানি ছেড়ে দেয়ায় পানির অভাবে মরে যাচ্ছে রোপণকৃত বোরো চারা। কৃষকদের এ ক্ষয়ক্ষতির দায়ভার কারা নেবে।
উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমীরুল হক বলেছেন, অসময়ে নদীর পানি ছেড়ে দেয়ায় কৃষকদের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এখন পানি সংকটে বিস্তীর্ণ এলাকার বোরো ফসল ধ্বংসের মুখে পড়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা আমার কাছে ব্যক্তিগত অভিযোগ করেছেন যে, কৃষকরা রাবারড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা কমিটিকে সেচ বাবদ টাকা না দেয়া পানি ছেড়ে দিয়েছেন। অথচ ব্যক্তিগত উদ্যোগে যারা সেচের ব্যবস্থা করেছেন তাদেরকে কৃষকরা খরচ দিয়েই পানি নিচ্ছেন। এখন পানি ব্যবস্থপনা কমিটি কৃষকের কাছে বাড়তি কিসের টাকা নিতে চায় তা আমার বোধগম্য নয়।
টিলাগাঁও রাবারড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি (দায়িত্বে থাকা) আবদুল হক ইচ্ছাকৃত পানি ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার বলেন, রাবার বিকল হওয়ার কারণে হঠাৎ করে পানি ছুটে যায়। পরে রাবার সচল করে আবারও পানি আটকানো হয়েছে। আশা করছি দুই একদিনের মধ্যেই নদীতে পানি জমে যাবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, রাবারড্যামের পানি ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো।
সিলেট৭১নিউজ/টিজা