সিলেট শহরতলীর শাহপরান বিআইডিসি মীরমহল্লা এলাকায় সৎ ছেলের হাতে মা ও দুই শিশু সন্তান খুন হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ১২টার দিকে ছুরিকাঘাতের পর খুন্তি দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে মাহবুব হোসেন আবাদ (১৭)। নিহতরা হলেন, বিআইডিসি এলাকার মুদি দোকানী আলতাফ হোসেন বুলবুলের দ্বিতীয় স্ত্রী রুবিয়া বেগম (৩০), তার মেয়ে মাহা বেগম (৭) ও ছেলে তাহসিন (৪)। ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা ছোরাসহ আবাদ হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, পিতার ব্যবসা এবং সম্পত্তি একা পেতে সৎ মা ও ভাইবোনকে খুন করেছে আবাদ হোসেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সিলেট বিয়ানীবাজার উপজেলার অষ্টগ্রামের আবদাল হোসেন বুলবুলের (৪৮) দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী ছেলে আবাদ হোসেন (১৭) ও এক মেয়েকে নিয়ে বিয়ানীবাজার গ্রামের বাড়িতে বসবাস করেন। দ্বিতীয় স্ত্রী রুবিয়া বেগম ১ মেয়ে ১ ছেলে নিয়ে বিআইডিসি মীরমহল্লায় স্বামীর সাথে বসবাস করেন। প্রায় ১০ বছর আগে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ডৌবাড়ি ইউনিয়নের হাটগ্রামের ফরমান আলীর মেয়ে রুবিয়া বেগমকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন আবদাল হোসেন বুলবুল। শহরতলীর বিআইডিসি এলাকায় তিনি দীর্ঘ দিন থেকে মুদি দোকান দিয়ে আসছেন। এর মধ্যে প্রথমপক্ষের ছেলে আবাদ হোসেন দেড় থেকে দুই মাস আগে বিয়ানীবাজার থেকে সিলেটে এসে বাবার ব্যবসায় সাহায্য করছে।
শাহপরান (রহ:) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার রাতে আবদাল হোসেন বুলবুল দোকানে ছিলেন। রাত পৌনে ১২টা থেকে ১২টার দিকে সৎ মা-ভাই-বোনকে দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপায় ও ছুরিকাঘাত করে আবাদ হোসেন। এতে ঘটনাস্থলেই মা-মেয়ে মারা যান। শিশু তাহসিনকে মুমূর্ষু অবস্থায় সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তিনি আরও জানান, ঘটনার পর ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়াশলাইয়ের কাঠি দিয়ে তোষকে আগুন ধরিয়ে দেয় ওই কিশোর। আগুনে তোষকের কিছু অংশ পুড়ে যায়। এ সময় ওই বাসার বাইরে স্থানীয় লোকজন চিৎকার দিতে থাকেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে সজোরে ঘরের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে। বাসা থেকে স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ তাকে আটক করে। ঘরের বিছানায় পড়ে থাকা মা ও মেয়ের লাশ উদ্ধারের পাশাপাশি গুরুতর আহত শিশু তাহসানকে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। ভোর ৪টায় হাসপাতালে মারা যায় তাহসান। ওসি জানান, তিন জনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। আজ শনিবার লাশ তিনটির ময়নাতদন্ত হবে। আবাদ হোসেন প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে, পারিবারিক কলহের জের এবং সৎ মায়ের প্রতি ক্ষোভ থেকেই সে এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। তবে, তার বক্তব্য আরও যাচাই-বাছাই করা হবে বলে জানান ওসি।
নিহত রুবিয়া বেগমের ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন বলেন, বিভিন্ন সময় হত্যার হুমকির বিষয়টি বাড়িতে ফোন করে জানিয়েছে তার বোন। ছেলে সিলেট আসার পর থেকে বলছে, ছেলেটা খুবই যন্ত্রণা দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ভগ্নিপতির সাথে কথা হলে তিনি ছেলেকে শাসন করেছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তার বোন সিলেটে স্বামীর সাথে বসবাস করে-এটা চায়নি তার বড় সতীন। বিয়ানীবাজারে গিয়ে বসবাস করতে সবসময় চাপ দিয়ে আসছিলো। নিরুপায় হয়ে রুবিয়া বেগম বিয়ানীবাজার থাকার জন্য গিয়েছিলো। কিন্তু, বড় সতীনের যন্ত্রণায় আবার চলে আসে।
স্কুল পড়ুয়া ভাগ্নি, চার বছরের ভাগ্নে ও বোনকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যাকারীর কঠোর শাস্তিস্বরূপ ফাঁরি দাবি জানান আনোয়ার হোসেন।
এদিকে, গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) একটি দল লাশগুলো পর্যবেক্ষণ করতে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে যায়। এছাড়া, ঘটনাস্থলে গিয়েও হত্যার আলামত সংগ্রহ করে। খবর পেয়ে এসএমপি অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (সদর দক্ষিণ) সোহেল রেজা, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এহসান উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট করেছেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) সারোয়ার হোসেন ও রিপন পুরকায়স্থ। শিশু দু’টিকে ছুরিকাঘাত ও খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের। এছাড়া, নিহত রুবিয়া বেগমের বাম হাতের কব্জি খুন্তি দিয়ে আলাদা করার চেষ্টা করার আলামত পাওয়া গেছে। সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতকারী এসআই সারোয়ার হোসেন বলেন, সুরতহালে তিনজনের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
এদিকে, ঘটনার পর থেকে আবদাল হোসেন বুলবুলের অবস্থা পাগলপ্রায়। স্ত্রী ও সন্তানরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে বলে জানেন তিনি। তাদের দেখাশোনা করতে তিনি স্বজনদের অনুরোধ এবং বিলাপ করে চলছেন। হার্টের রোগী হওয়ায় স্বজনরা তাকে স্ত্রী ও সন্তানরা মারা গেছেন বলে জানাননি।
শাহপরান (রহ:) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে নিহত রুবিয়ার ভাই আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে দুই জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। আবাদ ছাড়াও প্ররোচণার জন্য তার মা সুলতানা বেগম রুবিকে (৩৫)ও মামলায় আসামী করা হয়েছে।