সিলেট৭১নিউজ:: স্ত্রী সন্তান রেখে স্বামী উধাও হয়েগেছে এমন অমানবিক ঘঠনা ঘটেছে ময়মনসিংহের নান্দাইল বাসস্ট্যান্ডে স্ত্রী এবং ছয় মাস ও চার বছরের দুই শিশুকে রেখে পালিয়েছেন এক স্বামী।
দুধের শিশুকে কোলে ও আরেক শিশুকে হাতে ধরে মোবাইল ফোনে উচ্চস্বরে কান্না করে কাউকে বলছেন, ‘আমাকে নিয়ে যান, আমি আপনার কাছে কিছুই চাই না, শুধু সংসার চাই। আমাদের রেখে কই গেলেন। বাচ্চারা কান্না করছে। আমি কই যাবো। আপনার পায়ে ধরি। আমাদের দিয়ে যান।’
শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, বিয়ে হওয়ার দশ বছর পর প্রথমবার তাকে শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে নান্দাইল বাসস্ট্যান্ডে রেখেই চলে যায় স্বামী। ফোন দিলে তার পক্ষে আর সংসার করা সম্ভব নয় বলে ফোন কেটে দেয়। ভবিষ্যতের কথা ভেবে কান্নায় ভেঙে পড়েন ওই নারী।
বাসস্ট্যান্ডের বাসের টিকেট মাস্টার মুন্না মিয়া জানান, খুব ভোরে ওই নারী দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে আসে। পরে দেখা যায় ওই নারী মোবাইল ফোনে কার সাথে যেন উচ্চস্বরে কান্না করে কথা বলছেন। এসময় তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আকুতি-মিনতি করছেন। ফোন কেটে যাওয়ায় মাঝে মধ্যে হ্যালো হ্যালো করেও সাড়া না পেয়ে কান্নাকাটি করছেন।
ওই নারী জানান, তাঁর নাম ঋতু পর্ণা (২৩)। তিনি জামালপুর সদর উপজেলার লাহিড়িকান্দার সামছুল হকের মেয়ে। ছোট বেলা থেকে তিনি ঢাকায় গৃহপরিচারিকা ও গার্মেন্টে কাজ করেছেন। সেখানেই পরিচয়ের সূত্র ধরে গত দশ বছর আগে বিয়ে হয় মোশারফ হোসেন (২৫) নামে এক ব্যক্তির সাথে। কয়েক বছর ঢাকায় থাকার পর বাবার বাড়িতে চলে আসে। স্বামী মোশারফও মাঝে মধ্যে আসতো। এর মধ্যে তার ছেলে নিরব মিয়া (৪) ও মেয়ে রূপা বেগম (৬ মাস) নামে দুই সন্তানের জন্ম হয়। সন্তান জন্ম দেওয়ার পর থেকেই ভরণপোষণ দিতে অনীহা স্বামীর। এক পর্যায়ে শ্বশুর বাড়ি যেতে চাইলে বিভিন্ন টালবাহানায় এড়িয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) দুই সন্তানের অসুস্থতার কথা বলে টাকা দাবি করলে স্বামী মোশারফ দিতে অস্বীকার করে। পরে সন্তানসহ নিজে আত্মহত্যার হুমকি দিলে তাকে ফোনে জানায় নান্দাইলে আসার জন্য। তার কথা মতো গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর নান্দাইল সদরে এসে তাকে খোঁজ করে পাওয়া যায়নি।
এ অবস্থায় তাঁর সাথে থাকা স্বামীর একটি জন্মনিবন্ধনের ঠিকানা ধরে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় নান্দাইলের শেরপুর ইউনিয়নের লংগারপার গ্রামে গিয়ে স্বামীর খোঁজ পান। রাত যাপনের পর তাকে শুক্রবার ভোরে নিয়ে আসে নান্দাইল বাসস্ট্যান্ডে। এরপর আসছি বলে একটি বাসে উঠে চলে যায় মোশারফ। এরপর থেকে বেশ কয়েকঘণ্টা অপেক্ষা করেও স্বামীর খোঁজ পাননি ওই নারী।
ফোনে বারবার চেষ্টা করে একবার সংযোগ পেলে স্বামী জানায়, তার পক্ষে সংসার করা সম্ভব নয়। তাকে নিজ বাড়িতে চলে যাওয়ার জন্য ফোনে বলে দেয়। এতে দিশেহারা হয়ে সকালেই বাবার বাড়ির উদ্দেশে সন্তানদের নিয়ে চলে যান ওই নারী।
নান্দাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় নি। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।