নিজের ঘরের একটি কক্ষকে সাজিয়েছেন ফ্রান্সের বাসাবাড়ির আদলে। মুখে রেখেছেন ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি। সফটওয়ারের মাধ্যমে ব্যবহার করেন ফ্রাঞ্চের নাম্বার। এতকিছুর পেছনে একটাই টার্গেট অবিবাহিত সুন্দরী তরুণী। ফ্রান্সের বাসাবাড়ির আদলে সাজানো কক্ষ থেকে সফটওয়ারের মাধ্যমে ফ্রান্সের ফোন নাম্বার থেকে কথা বলেন তরুণীদের সাথে। কখনো ফোনে, কখনো ইমুতে আবার কখনো হোয়াটঅ্যাপে। বিয়ে করে ইউরোপে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভনে ফেলেন তাদেরকে। কাউকে গোপনে বিয়ে করেন আবার কাউকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে ঝুলিয়ে রেখে আদায় করেন মোটা অংকের টাকা। ফ্রান্স প্রবাসী পরিচয়ে এমন প্রতারণা করে অসংখ্য মেয়ের সর্বনাশ করে অবশেষে পুলিশের খাঁচায় বন্দী হয়েছেন তিনি। ভয়ংকর এই প্রতারকের নাম আরশাদ মিয়া উরফে ইমাম হোসেন (৪২)। তার কাছে প্রতারিত হয়ে সর্বস্বান্ত হওয়া এক তরুণীর মামলার প্রেক্ষিতে বুধবার (২০ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ৪টার দিকে সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার ঘোষগাঁও (কোনাপাড়া) গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে জগন্নাথপুর থানা পুলিশের সহযোগিতায় তাকে গ্রেপ্তার করে বিশ্বনাথ থানা পুলিশ। তিনি ওই গ্রামের মৃত আবদুল কুদ্দুছের ছেলে। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ৩ এ ইমাম হোসেনকে প্রধান অভিযুক্ত করে ৫জনের বিরুদ্ধে মামলা (বিশ্বনাথ সি.আর মামলা নং-২৩২/২০২০) দেন সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ ওই তরুণী। আদালতের নির্দেশে গত ২ জানুয়ারি বিশ্বনাথ থানায় মামলা (নং-৩) রুজু হয়। মামলার অপর আসামীরা হলেন সিলেটের ওসমানী নগরের দিরারাই গ্রামের আবদুল জব্বারের ছেলে বশির উদ্দিন, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার ঘোষগাঁও গ্রামের দুদু মিয়ার ছেলে লেবু মিয়া মিন্টু, তার স্ত্রী মিনু ও বাওধরন গ্রামের মৃত তরমুজ আলীর ছেলে রুপন আহমদ। ক্ষতিগ্রস্থ তরুণী জানান, ‘বিশ্বনাথের রামপাশা ইউনিয়নের রামপাশা গ্রামে আমার বড় বোনের বাড়িতে আমি বসবাস করে আসছি। বড় বোন তার পূর্ব পরিচিত ঘটক বশির উদ্দিনের মাধ্যমে জানতে পারেন একজন ফ্রান্স প্রবাসী বিয়ের জন্যে পাত্রী খুঁজছেন। আমি বিয়ের উপযুক্ত হওয়ায় আমার বোন আমার একটি ছবি ঘটককে দেন। ছবি দেখে পাত্র পক্ষ আমাকে পছন্দ করে। সে সময় ঘটক পাত্রের ফ্রান্সের নাম্বার আমাদেরকে দেন। পরবর্তীতে আমার ব্যবহৃত ফোনে ইমুতে ও হোয়াটঅ্যাপে নিজেকে ‘আরশাদ মিয়া’ পরিচয় দিয়ে কথা বলেন ওই ফ্রান্স প্রবাসী। এক পর্যায়ে ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল সিলেট শহরের একটি বাসায় অভিযুক্ত লেবু মিয়া মিন্টু, মিনু ও রুপন আহমদের উপস্থিতিতে অজ্ঞাত নিকাহ রেজিস্টারের মাধ্যমে তিনি আমাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর আমার পাসপোর্ট করা, ইউরোপ নিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কাজ ও সমস্যা দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে আমার বোনের কাছ থেকে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা নেন আরশাদ মিয়া। গত বছরের ১৭ মার্চ আরশাদ মিয়ার কাছে আমার কাবিনের একটি কপি অথবা নিকাহ রেজিস্টারের নাম পরিচয় চাইলে তিনি কিছুই দেননি। এরপর থেকে আমার সাথে যোগাযোগই বন্ধ করে দেন। সন্দেহ হলে আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, আরশাদ মিয়ার আসল নাম ইমাম হোসেন। ভূয়া ফ্রান্স প্রবাসী। তিনি ও অন্য আসামীরা সকলেই সংবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য।’ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) দেবাশীষ শর্ম্মা জানান, ‘পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ৪টি বিয়ে করেছে বলে জানিয়েছে ইমাম হোসেন। তবে, আমাদের ধারণা তার বিয়ের সংখ্যা ১৫/২০টির মত হবে। তার মোবাইল ফোন ঘেটে পুলিশ অনেক তথ্য ও অসংখ্য মেয়ে সাথে তার ছবি পেয়েছে। সে শতাধিক মেয়ের সর্বনাশ করেছে বলে ধারণা করছি। তার রিমান্ড চাইবে পুলিশ।’ প্রতারক ইমাম হোসেনকে গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) শামীম মুসা বলেন, তাকে বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।