সিলেট৭১নিউজ ::বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন বলেছেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কেবল একজন ব্যক্তি নন, তিনি একটি পতাকা, একটি মানচিত্র ও স্বাধীনতার প্রতীক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কোন বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর সম্পদ নন।
বঙ্গবন্ধু মানে স্বাধীন দেশ, স্বাধীনতার যুদ্ধ, ১৬ ডিসেম্বরের চূড়ান্ত বিজয়। আপাদমস্তক অসাম্প্রদায়িক বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালির দীর্ঘকাল লালিত স্বপ্নের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সারথি। বঙ্গবন্ধু তাঁর কর্ম, ত্যাগ, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, সাহসিকতা, সততা সর্বোপরি বাংলাদেশ ও বাঙালির প্রতি অতল ভালবাসায় নেতা থেকে বাঙালির পরম আত্মীয়ে পরিণত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু জাতীয় জীবনে আমাদের গৌরবের, আমাদের অহংকারের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার কেন্দ্রীয় নির্যাস।
রবিবার (৩ জানুয়ারি) দুপুরে মুজিববর্ষ উদযাপনের অংশ হিসেবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘বাংলাদেশ বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধুর অবদান’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনারে ঢাকাস্থ সরকারি বাসভবন থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ মন্ত্রী এসব কথা বলেন। সেমিনারে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডঃ তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম।
পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের বাঙালির ইতিহাস হয়না। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু জন্মগ্রহণ না করলে আমরা পরাধীনতার শৃঙ্খল কখনোই ভাঙতে পারতাম না।
মন্ত্রী বলেন, বাঙালির অদম্য মুক্তির স্পৃহার ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ১৯৪৮-৫২ এর উত্তাল ভাষা আন্দোলন, ’৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, বাঙালির মুক্তিসনদ ১৯৬৬ এর ৬ দফার আন্দোলন, ৬৯ এর গণবিস্ফোরণ, ১৯৭০ এর অবিস্মরণীয় নির্বাচনী জনরায়, প্রতিটি ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন শেখ মুজিব। মুক্তিসংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর মহাকাব্যিক বিস্ফোরণ আমরা পাই ১৯৭১ এর ৭ মার্চে বজ্রকণ্ঠের ঘোষণায়।
বাংলাদেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখি শুধু মুক্তিযুদ্ধই নয়, বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের প্রতিটি পর্যায়ের প্রেরণা ও শক্তির উৎস ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস তিনি পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকলেও তাঁর দৃপ্ত মুখমণ্ডল হৃদয়ে ধারণ করে বীর মুক্তিযোদ্ধারা মরণপন যুদ্ধ করেছেন। তাঁর ৭ মার্চের ভাষণ ও ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণায় অনুপ্রাণিত হয়েই মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছেন।
পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, আমরা এখন যা উপলব্ধি করছি, তিনি তাঁর সময়ে যথার্থভাবে তা উপলব্ধি করেছিলেন। দেশের প্রকৃতি, পরিবেশ সংরক্ষণ ও বৃক্ষরোপণ অভিযান শুরু করেছিলেন সফলভাবে। বর্তমানে দেশ পরিচালনায় রয়েছে জাতির পিতার আদর্শ ও রক্তের সুযোগ্য উত্তরাধিকার সফল রাষ্ট্রনায়ক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। জাতির পিতা স্বাধীনতা দিয়েছেন। এখন জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করছেন তাঁরই সুযোগ্য উত্তরসূরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনা। পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, দেশের প্রত্যেক তরুণকে যার যার অবস্থান থেকে বঙ্গবন্ধুর দেখানো নীতি, আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যেতে হবে। প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর সবুজ বাংলা গড়তে আমাদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। বনের অবৈধ দখলদারদের তালিকা করা হয়েছে সবাইকে উচ্ছেদ করে সেখানে বৃক্ষরোপণ করা হবে।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ডঃ তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন সাধারন অথচ অসাধারণ। জনগণের জন্য তাঁর ছিল গভীর ভালবাসা এবং দেশ পরিচালনায় ছিলো সীমাহীন অন্তর্দৃষ্টি। তিনি বলেন, জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণ ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে দীক্ষামন্ত্র। অস্ত্র কম থাকলেও সবার কাছেই ছিলো সবচাইতে বড়ো অস্ত্র ‘জয় বাংলা’ অস্ত্র। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের সময় কারাগারে থেকেও ছিলেন সবার সাথে, মুক্ত থাকলেই কেবল থাকতেন এক জায়গায়। স্বাধীনতার পর অত্যন্ত সফলতার সাথে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীকে দেশে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছিলেন। জাতির পিতার নেতৃত্বে পাকিস্তান নামের এক অদ্ভুত ও অবাস্তব রাষ্ট্রকে সমাহিত করা হয়। উপদেষ্টা বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার মহানায়ক হলেও ছিলেন একজন রক্ত মাংসের মানুষ। দেশের জন্য তিনি ব্যক্তিগত জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। তাঁর অবদান কখনোই ভোলা যাবে না। তাঁর স্বপ্ন ও আদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান এনডিসির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার। অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ড. মো. বিল্লাল হোসেন এর পরিচালনায় অন্যান্যের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ) মাহমুদ হাসান, অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ) মোঃ মনিরুজ্জামান, অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) আহমদ শামীম আল রাজী, অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) মিজানুল হক চৌধুরী, বনশিল্প কর্পোরেশন এর চেয়ারম্যান মোঃ ছালাহ উদ্দীন চৌধুরী, পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোঃ হুমায়ুন কবির, বন অধিদফতরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমির হোসাইন চৌধুরী, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট এর পরিচালক ড. মোঃ মাসুদুর রহমান, রাবার বোর্ডের চেয়ারম্যান সৈয়দা সারওয়ার জাহান, বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়াম এর পরিচালক পরিমল সিংহ এবং মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব সঞ্জয় কুমার ভৌমিক আলোচনায় অংশ নেন।
সিলেট৭১নিউজ/কালের কন্ঠ/ টিআর /৩/০১/২০২১