সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক::আজ ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার পতন ও গণতন্ত্র মুক্তি দিবস। দীর্ঘ নয় বছরের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গণঅভ্যুত্থানের মুখে ১৯৯০ সালের এ দিনটিতে পতন ঘটে এরশাদের।
এদিন তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধ্য হন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এ আন্দোলনে প্রাণ হারান নূর হোসেন, সেলিম, দেলোয়ার, তাজুল, ডা.মিলন, নূরুল হুদা, বাবুল, ফাত্তাহ সহ অনেকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ উপলক্ষে গতকাল দেওয়া এক বাণীতে গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী সংগ্রামী দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। তিনি গণতন্ত্রবিরোধী সকল ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করে গণতন্ত্রের ভিত্তিকে আরো শক্তিশালী করতে এবং দেশের উন্নয়ন ও জণগণের কল্যাণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নব্বই পরবর্তী তিন দশকে আওয়ামী লীগ, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার রক্ষায় দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখেছে। ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্ব পেয়ে তাঁর সরকার বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ করে দেশে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্র, সংবিধান, আইনের শাসন ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অবৈধ ক্ষমতা দখলের পথ রুদ্ধ হয়েছে। বাংলাদেশে আমরা সপরিবারে জাতির পিতার হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করেছি। জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী-মানবতাবিরোধীদের বিচারের রায় কার্যকর হচ্ছে। আদালত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় প্রদান করেছেন।’
স্বৈরাচার পতন দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার পতনের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছিল আবারও বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথচলা। শুরু হয় সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা। এই দিনে গণতন্ত্রের দুশমনেরা পরাজিত হলেও আজও তারা চুপ করে বসে নেই। তাই সেই নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলনের অটল ও আপোষহীন নেত্রী বেগম জিয়াকে পরাজিত শত্রুরা চক্রান্তমূলকভাবে অন্তরীণ করে রেখেছে। আমাদের চলমান সংগ্রামের এখন মূল লক্ষ্য গণতন্ত্র ও দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলনকে বেগবান করা।’
ফখরুল বলেন, ‘৯০ এর গণঅভ্যুথানের চেতনায় গণতন্ত্রের দুশমনদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিজয় অর্জন করা। বারবার অপশক্তিগুলো গণতন্ত্রকে বিপর্যস্ত করে আমাদের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছে। কিন্তু এদেশের দেশপ্রেমিক জনগণ সে অপচেষ্টাকে শক্ত হাতে প্রতিহত করেছে সব সময়। আমাদের গণতন্ত্র বার বার হোঁচট খেয়েছে তার অগ্রযাত্রায়। কিন্তু এদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ সকল বাধাকে অতিক্রম করে গণতন্ত্রের পথচলাকে নির্বিঘ্ন করেছে।
তিনি আরও বলেন, শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গণতন্ত্র এখনো শৃঙ্খলমুক্ত মুক্ত নয়। নিষ্ঠুর কর্তৃত্ববাদী একদলীয় শাসনের চরিত্রগুলো ক্রমশঃ ফুটে উঠছে বর্তমান শাসক গোষ্ঠির আচরণে। একতরফা নির্বাচন করে আবারও সারা জাতিকে একদলীয় নিষ্ঠুর শাসনের শৃঙ্খলে বন্দী করে মানুষের নাগরিক স্বাধীনতাকে করা হয়েছে বিপন্ন। আমাদের গণতন্ত্র আজো নামে-বেনামে একদলীয় ফ্যাসিবাদের আক্রমণে আক্রান্ত। ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী ও নিরংকুশ করার জন্য আজ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙ্গে ফেলার আয়োজন চলছে। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে তাদের সে আয়োজন নস্যাৎ করে দিতে হবে। স্বৈরাচার পতন দিবসে এটাই হোক আমাদের দৃপ্ত শপথ।